কংগ্রেস-তৃণমূল টানাপোড়েন
ময়দানে নামছেন শুভেন্দু, মিছিলের ব্যাখ্যায় মৌসম
যুব কংগ্রেস নেত্রী তথা কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূর সহ অন্য কংগ্রেস সাংসদদের ‘আক্রমণের’ বিরুদ্ধে ময়দানে নামছেন তৃণমূলের অন্যতম ‘জনপ্রিয়’ যুবনেতা তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। প্রাথমিক ভাবে শুভেন্দু মাঠে নামছেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীকে ‘জবাব’ দিতে। আগামী ১ ডিসেম্বর বহরমপুরে ‘বড় জমায়েত’ করে ওই ‘জবাব’ দেওয়া হবে বলে শুভেন্দু সোমবার জানিয়েছেন। শুভেন্দুর পরবর্তী ‘লক্ষ্য’ মৌসম এবং দীপা। কারণ, বহরমপুরের সভা থেকেই মালদহ (মৌসম) এবং রায়গঞ্জের (দীপা দাশমুন্সি) ‘কর্মসূচি’ও ঘোষণা করবেন তিনি।
রবিবার নেতাজি ইন্ডোরে পঞ্চায়েতি-রাজ সম্মেলনের মঞ্চ থেকে অধীর কড়া আক্রমণ করেছিলেন মমতাকে। তাঁর সুরেই সুর মিলিয়েছিলেন দীপা। এমনিতেই এই দুই সাংসদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ‘জটিল’। তার উপর যে ভাষায় তাঁরা তৃণমূল নেত্রী এবং তাঁর সরকারকে আক্রমণ করেছেন, তাতে ‘ক্ষুব্ধ’ মমতা। দলীয় সূত্রের খবর, মমতার নির্দেশেই শুভেন্দু ওই তিন জেলায় ‘বড় জমায়েত’ করার কর্মসূচি নিয়েছেন।
ঘটনাচক্রে, এদিনই মৌসম দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে উপ নির্বাচনের মুখে যুব কংগ্রেসের মিছিল করার ‘ব্যাখ্যা’ দিয়েছেন। গত শুক্রবার মমতার ‘খাসতালুক’ হাজরা থেকে ময়দানে গাঁধী মূর্তি পর্যন্ত তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের’ প্রতিবাদে মৌনীমিছিল করেছিল যুব কংগ্রেস। মিছিলে ছিলেন দীপাও। মিছিলের পরেই রাজ্য ও কেন্দ্রে জোটশরিক কংগ্রেসকে ‘কড়া হুঁশিয়ারি’ দিয়েছিলেন মমতা। তাঁর সেই প্রতিক্রিয়ায় ‘উত্তপ্ত’ হয় দুই শরিকের সম্পর্ক। যা আরও বাড়ে ইন্ডোর-কান্ডে।
জোট-জটিলতার মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মিছিল আয়োজনের ‘ব্যাখ্যা’ দিয়ে মৌসম বলেন, “কংগ্রেস কর্মীদের তৃণমূল আক্রমণ করছে। বিশেষত, যারা সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে এসেছে, তারা। তার প্রতিবাদে ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে মৌনীমিছিল করেছিলাম। দক্ষিণ কলকাতা ভোটের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। জোটকে সম্মান করি। জোটের বিরুদ্ধেও কিছু বলিনি।” দক্ষিণ কলকাতায় ওই মিছিল করে কংগ্রেস ‘সিপিএমের হাত শক্ত’ করছে বলে অভিযোগ করেছিলেন মমতা। সেই অভিযোগ ‘নস্যাৎ’ করে মৌসম বলেন, “সিপিএমের সুবিধা কখনই চাই না। আগেও বলেছি, এখনও বলছি, সিপিএম থেকে যারা তৃণমূলে এসেছে, তারাই কংগ্রেস কর্মীদের উপর হামলা করছে।” মৌসমের এই ‘ব্যাখ্যা’-কে দলের একাংশ ‘পিছু হটা’ বললেও কংগ্রেস সাংসদ কিন্তু জানান, কংগ্রেসকর্মীদের উপর ‘হামলা’ হলে ফের পথে নামবেন।
এ দিন একইসঙ্গে মৌসম দাবি করেন, দক্ষিণ কলকাতার ‘প্রাণকেন্দ্র’ হাজরা থেকে মৌনীমিছিল করে ওই কেন্দ্রের বাইরে গিয়ে মিছিল শেষে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে যা বলার বলেছিলেন। তাঁর কথায়, “যা বলার, বলেছিলাম গাঁধীমূর্তির পাদদেশে। যা ওই লোকসভা কেন্দ্রের বাইরে। ফলে এই বিতর্ক অহেতুক।” একইসঙ্গে তিনি জানান, কংগ্রেস কর্মীদের উপর ‘হামলা’ হলে আবার পথে নামবেন। এ দিন বিকেলেই মৌসমের নেতৃত্বে স্থানীয় যুব কংগ্রেস ব্যারাকপুরের সদরবাজারে মিছিল করে। কিছুদিন আগে সদরবাজারে কংগ্রেসের একটি কার্যালয় তৃণমূল পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি তুলে মৌসম জানান, ওই ঘটনায় মাসতিনেক আগে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু জবাব পাননি। দেখা করারও সময় দেননি মমতা। তবে তিনি আবার ‘তথ্যপ্রমাণ’ সহ মমতার সাক্ষাৎপ্রার্থী হবেন।
তবে ইন্ডোরে দলীয় কর্মীদের ‘ঢল’ দেখে উৎসাহিত প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। কর্মীদের ‘উৎসাহ-উদ্দীপনা’ ধরে রাখতে করণীয় বিষয় নিয়ে এ দিন তাঁরা ঘরোয়া আলোচনা করেন। পরে দলীয় সূত্রে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘নির্দেশ’ মেনেই ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে জেলায় জেলায় আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে যেমন আছে কৃষকের ধান ন্যায্য দামে কেনার দাবি, তেমনই রয়েছে দরিদ্র-উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলি রূপায়ণের দাবিতে জেলাশাসকদের কাছে ‘গণ-স্মারকলিপি’ দেওয়া। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, “সংগঠনকে মজবুত করতে কর্মীদের দলীয় আদর্শ, শিক্ষা এবং যে বিষয় নিয়ে আন্দোলনে যাচ্ছি, তা বোঝানো দরকার।’’ যে সমস্ত জেলায় সংগঠন ‘দুর্বল’ সেখানে জেলা নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রদেশ নেতৃত্ব কাজ করবেন। প্রদীপবাবু স্বীকার করেন, রাজ্যে, ‘রাজনৈতিক পালাবাদলে’ বহু জায়গায় কংগ্রেস ছেড়ে অনেক কর্মী তৃণমূলে গিয়েছেন। হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, দুই মেদিনীপুরের কয়েকটি জায়গায় কংগ্রেস সাংগঠনিক দিক থেকে ‘দুর্বল’ হয়েছে। সেই ‘দুর্বল’ সংগঠনকে ‘সবল’ করার কাজ আগামী দেড়-দু’মাসের মধ্যেই শুরু করতে চান প্রদীপবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.