নতুন করে স্বামীর দেহের ডিএনএ পরীক্ষা করাতে চান মাওবাদীদের হাতে নিহত পুলিশ ইনস্পেক্টর পার্থ বিশ্বাসের স্ত্রী বর্ণালি। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পরে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। এর আগে একবার ডিএনএ পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু তা মানতে চাননি বর্ণালি। এ দিনও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বর্ণালি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আজও বিশ্বাস করেন না যে পার্থ মারা গিয়েছেন। কী করে আবার পার্থর ডিএনএ পরীক্ষা করা যায় তা দেখার জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত বছর ১৯ অক্টোবর অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান দুই বন্ধু পার্থ বিশ্বাস ও সৌম্যজিৎ বসু। ২২ অক্টোবর বাড়িতে ফোন করেন সৌম্যজিৎ। সেই শেষ। তার পরে আর খোঁজ মেলেনি তাঁদের। গত মার্চ মাসে অযোধ্যা পাহাড়ের কোল থেকে দুই যুবকের দেহাবশেষ পাওয়া যায়। সিবিআইকে দিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করে ১৭ মে রাজ্য সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় ওই দুই যুবকের দেহাবশেষ পার্থ ও সৌম্যজিতেরই। এ কথা মেনে নিয়ে সৌম্যজিতের পরিবার দেহাবশেষ গ্রহণ করেন এবং সৎকার করেন। কিন্তু, বর্ণালি মানতে চাননি সে কথা। সোমবারেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি সেই কথাই বলেছেন। মহাকরণ সূত্রে খবর, কার্যত বর্ণালির অনুরোধ মেনেই দ্বিতীয়বার ডিএনএ পরীক্ষা করানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী বলেন। বর্ণালির সঙ্গে ছিলেন পার্থর মা মমতা বিশ্বাস ও বর্ণালির বাবা সুনীলকুমার দাস। বর্ণালি এ দিন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, কবে, কোথায়, কী ভাবে এই ডিএনএ পরীক্ষা হবে তা আমাকে জানিয়ে দিতে।” |
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে মহাকরণে সৌম্যজিতের দাদা অভিজিৎ বসু, শ্বশুর
অনুপম ব্রহ্মচারী, স্ত্রী স্বচ্ছতোয়া বসু এবং মা সুমিতা বসু। সোমবার রাজীব বসুর তোলা ছবি। |
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন সৌম্যজিতের মা সুমিতা বসু, দাদা অভিজিৎ, স্ত্রী স্বচ্ছতোয়া এবং শ্বশুর অনুপম ব্রহ্মচারী। মমতার সামনে অভিজিৎবাবু অভিযোগ করেন, ২০১০ সালের ২২ অক্টোবর পার্থ-সৌম্যজিতকে খুন করা হয়েছে বলে যে পুলিশ এখন জানাচ্ছে, দু’জন নিখোঁজ হওয়ার পরে তারাই বারবার বলেছে, ওঁরা বেঁচে রয়েছেন। অভিজিৎবাবুর কথায়, “এ ভাবে আমাদের প্রতিনিয়ত প্রতারণা করা হয়েছে। সেই সময়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি ছিলেন এই নপরাজিতবাবুই।”
পরে অভিজিৎবাবু জানান, তাঁদের এই অভিযোগ শুনে ফোন করে ডিজিকে ঘরে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশের সর্বোচ্চ এই কর্তার সামনে আবার সৌম্যজিৎ নিখোঁজ হওয়ার পরবর্তী ঘটনাবলি তাঁকে সবিস্তার জানাতে বলেন মমতা। অভিজিৎবাবু বলেন, “আমার ভাই বেঁচে রয়েছে বলে দিনের পর দিন আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বারবার ভুল পথে চালনা করা হয়েছে। এমনকী পুলিশের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে খারাপ ব্যবহারও পেয়েছি।” ডিজি-র সামনেই তিনি বলেন, “নিখোঁজ হওয়ার দিনই চিরুণি তল্লাশি শুরুর জন্য পুলিশের একাংশ অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন মহাকরণ থেকে পুলিশকে কোনও রকম অভিযান চালাতে বারণ করা হয়েছিল। সে দিনই যদি পুলিশি তল্লাশি শুরু হত, ভাইয়ের দেহ পেতে মায়ের ছ’মাস লাগত না।” অভিজিৎবাবুর অভিযোগের বিষয়ে ডিজি-র কাছেও জানতে চান মমতা। এ বিষয়ে তিনি ডিজি-র সঙ্গে পরে কথা বলবেন বলেও মুখ্যমন্ত্রী অভিজিৎবাবুকে আশ্বাস দেন।
মমতার কাছে সৌম্যজিতের মায়ের আবেদন, যারা এই খুন করেছে তারা যেন ছাড় না পায়। সৌম্যজিতের মৃত্যুর জন্য এক টাকা ক্ষতিপূরণ তাঁরা পাননি বলেও এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা জানান। কেন সেই ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি, তাও ডিজি-র কাছে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। মহাকরণ সূত্রে খবর, এই ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত যে ফাইলটি কেন্দ্রের কাছে পাঠানোর কথা ছিল, সেটি এখনও রাজ্য সরকার পাঠায়নি। অবিলম্বে সেই ফাইল পাঠানোর জন্য ডিজিকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সৌম্যজিতের ছেলেকে ভাল স্কুলে ভর্তি করে দেওয়ার আশ্বাসও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে অভিজিৎবাবু কলকাতার কিছু সংগঠনকে কটাক্ষ করে বলেন, “মাওবাদীদের মৃত্যুতে এখন অনেকে চোখের জল ফেলছে। আমার ভাইকে যখন খুন করা হয় তখন এঁরা কোথায় ছিলেন?” |