যানজটের সমস্যা থেকে মুক্ত হল না বাঁকুড়া শহর। শহরের প্রাণকেন্দ্র মাচানতলা ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় দিনের ব্যস্ত সময়ে যানজট তৈরি হচ্ছে। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, পুরসভার ক্ষমতায় রাজনৈতিক দলের বদল হলেও যানজটের যন্ত্রণা থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি পাচ্ছেন না।
শহরের ব্যস্ত এলাকা মাচানতলা, স্টেশন রোড, নুনগোলা রোড, ভৈরবস্থান, গোবিন্দনগর, লালবাজার, কলেজ মোড়। এই সব এলাকায় যানজটের সমস্যা সব থেকে বেশি। অফিসযাত্রী থেকে স্কুলের ছাত্রছাত্রী, পথচারী-সকলেই যানজটে আটকে থাকেন। বছরের প্রায় সব সময়েই যানজট থাকে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গরমকালে রোদের মধ্যে যানজটে আটকে থেকে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চলছে। প্রশাসন জানে। কিন্তু কোনও সুরাহা করেনা। তাই ক্ষুব্ধ বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দারা।
তাঁরা জানান, শহরের রাস্তা সঙ্কীর্ণ। তার উপরে দিন দিন রাস্তায় পথচারী ও গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু, রাস্তা বাড়েনি। উল্টে ব্যবসায়ী ও হকাররা তাঁদের পসরা নিয়ে রাস্তার দু’পাশ দখল করছেন। এই দৃশ্য মূলত মাচানতলার আশপাশে দেখা যায়। মাচানতলা থেকে সুভাষ রোড, জিপি সিংহ রোড ও পাম্পমোড়, ফরেস্ট অফিস পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ ক্রমশ দখল হয়ে যাচ্ছে। কয়েক মাসে এভাবেই রাস্তার অনেকখানি দখল হয়ে গিয়েছে কলেজ রোড। |
লালবাজারেও রাস্তার দু’পাশ এ ভাবে অনেক আগেই দখল হয়ে গিয়েছে। ফলে, যানজটের সমস্যা আরও বেড়েছে। কিন্তু, রাস্তা দখলমুক্ত করার কাজ এড়িয়ে গিয়েছে পুরসভা। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, সস্তা রাজনৈতিক স্বার্থে রাস্তা দখলমুক্ত করার জন্য ব্যবসায়ী ও হকারদের সরাতে চাইছে না কোনও রাজনৈতিক দলই। ফলে এ শহরের রাস্তা বেদখলমুক্ত হবে কি না তা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
আবার, রাসতলা থেকে স্টেশন যাওয়ার রাস্তায় অন্য সমস্যা। এই রাস্তায় দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য মালবাহী গাড়ি ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, তা কেউই মানে না। পুলিশও তা মানতে বাধ্য করায় না। পুলিশ কর্মীদের চোখের সামনে তাঁদেরই তৈরি করে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ট্রাক, লরি, মিনিট্রাক মাল নিয়ে এই রাস্তায় যাতায়াত করছে। রাস্তা আটকে পাশের দোকানে মাল ওঠানামা করা হয়। ফলে যানজট তৈরি হয়। এমন অভিযোগও হামেশাই শোনা যায়, যানজটে আটকে অনেকে ট্রেন ধরতে পারেন না। প্রশাসনের কর্তাদের কানে গেলে তাঁরা আশ্বাস দেন। আবার, রাস্তার মাঝে রিকশ থামিয়ে বাজার করতেও অনেককে দেখা যায়। অনেককে দেখা যায়, রাস্তার মাঝে মোটরবাইক বা সাইকেল থামিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে গল্প করতে। পিছনে বা সামনে যে অন্য যাত্রীদের পথ চলতে অসুবিধে হচ্ছে সে ভ্রুক্ষেপ তাঁদের থাকে না।
এই শহরের বাসিন্দা প্রবীর ঘোষ, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, “যানজট সমস্যা মোকাবিলায় শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো দরকার। তা না হলে দিন দিন এই সমস্যা আরও বাড়বে।” ফেলু বাগদি, গুইরাম পালদের মতো রিকশচালকেরা বলেন, “যানজটের জন্য আমাদেরও রিকশা চালাতে সমস্যা হয়। বিশেষ করে মাচানতলা থেকে স্টেশন যাওয়ার পথে নতুনগঞ্জ এলাকায় লরি ও ট্রাকগুলি রাস্তা জুড়ে থাকে। তখন যাত্রীদের নিয়ে ঘুরপথে স্টেশন যেতে হয়। এর ফলে মাঝে মধ্যেই সময় মতো ট্রেন ধরাতে পারিনা যাত্রীদের।” বাঁকুড়ার পুরপ্রধান শম্পা দরিপা বলেন, “সমস্যাটি সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। বাঁকুড়া শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থার আরও উন্নতি দরকার।” তাঁর আশ্বাস, “এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।” |