নানা অব্যবস্থায় ধুঁকছে পুরুলিয়া শহরের পুরসভা নিয়ন্ত্রিত একমাত্র সব্জি বাজার। শহরের কেন্দ্রস্থলে হাটতলা লাগোয়া শতবর্ষ প্রাচীন এই বড়হাট পুরসভার উদাসীনতার শিকার বলে অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের।
হাট সূত্রের খবর, ১৮৮০ সালে আর্থর লয়েড যখন পুরুলিয়ার (তৎকালীন মানভূম) ডেপুটি কমিশনার ছিলেন, তখন শহরের জেল গার্ডেন রোডে এই হাট গড়ে ওঠে। তারপরে দিন দিন শহরের পরিধি যত বেড়েছে হাটের বেচাকেনাও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। পরে শহরের অন্যত্র কয়েকটি সব্জি বাজার গড়ে উঠলেও বড়হাট কিন্তু, তার কৌলিন্য হারায়নি। কিন্তু যাঁরা নিত্য এই হাটে যান, তাঁদের ক্ষোভ, “এই হাটের উন্নয়ন নিয়ে পুরুলিয়া পুরসভার উদাসীনতাই শুধু চোখে পড়ে। নানা অব্যবস্থার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে হাট চলছে। সংস্কার করতে উদ্যোগী হয়নি পুরসভা।”
বিক্রেতাদের অভিযোগ, এই হাটে পানীয় জলের অভাব রয়েছে। শৌচাগার নেই। হাটের দীর্ঘদিনের মাছ ব্যবসায়ী সনৎকুমার মাহাতোর অভিযোগ, “বর্জ্য নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। জলের অভাব তো রয়েছে। ফলে আমাদের খুব কষ্টের মধ্যেই বাজারে থাকতে হয়।” মাছের বাজারের আরেক পুরনো বিক্রেতা উর্মিলা ধীবর বলেন, “হাট মাল বিক্রি করতে আসা মহিলাদের দুরাবস্থা ভাবতে পারবেন না। কোনও শৌচাগার নেই। |
এই অবস্থায় আমাদের খুব অসুবিধা হয়।” প্রতিদিন এই হাটে অনেক মহিলা বিক্রেতা আসেন। ফলে শৌচাগার না থাকায় তাঁদের সবাইকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শুধু বিক্রেতাই নয়, অনেক মহিলা ক্রেতাও এই হাটে আসেন। তাঁরাও একইরকম ভাবে সমস্যায় পড়ছেন। তাঁদের ক্ষোভ, “এই হাটের অব্যবস্থার খবর পুরসভার কর্তাব্যক্তিরা সবই জানেন। তাঁরাও বাজার করতে এসে এই সব সমস্যা চাক্ষুস করেছেন। কিন্তু, তারপরেও তাঁরা ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকেন।”
ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছিলেন শহরের দুলমি এলাকার বাসিন্দা শিশির সরকার। তাঁর কথায়, “বাজারে প্রচুর নোংরা। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না বলেই এই অব্যবস্থা।” অপর ক্রেতা অশোক অধিকারী বলেন, “হাটে গরু, বাছুর ঘুরে বেড়ায়। বর্ষাকালে জল-কাদায় হাট যেন নরক হয়ে ওঠে।”নডিহার বাসিন্দা তপন মাহাতো বলেন, “শুধু বর্ষাকাল নয়। বছরের যে কোনও সময়ে মাছের বাজারে গেলে প্যান্ট গুঁটিয়ে ঢুকতে হয়।” তাছাড়া, এই বাজারে ছাউনি না থাকার জন্যও ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সমান ক্ষোভ রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের পক্ষে মানিক সেন, পরিমল ঘোষ বলেন, “এই সমস্যার কথা আমরা পুরকর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানিয়েছি। তাঁরা প্রতিবারই হাটের সংস্কার করা হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়না।” পুরসভার নিয়োজিত বাজার পরিদর্শক দিলীপ সেনের বক্তব্য, “পরিষ্কার একেবারেই করা হয় না তা নয়। সাধ্যমতো পরিষ্কার করা হয়।” পুরুলিয়ার পুরপ্রধান তৃণমূলের তারকেশ্বর চট্টোপাধ্যায়ও বড়হাটের সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “বড়হাটে কিছু সমস্যা রয়েছে।” এরপরেই তাঁর আশ্বাস, “ওই হাট নতুন করে গড়ে তোলার জন্য আমাদের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। শীঘ্রই আমরা সেই কাজে নামব।” |