|
|
|
|
উন্নয়নে গতি আনতে মনিটরিং কমিটি জেলায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
উন্নয়নে গতি আনতে জেলা, মহকুমা ও ব্লক-স্তরে ‘মনিটরিং কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। ক’দিন আগে জেলাশাসকের কাছে এই নির্দেশ এসে পৌঁছেছে। নির্দেশে প্রতিটি প্রকল্পের উপর নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি প্রশাসনের নিচুস্তর পর্যন্ত সমন্বয় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। জেলা, মহকুমা ও ব্লক--এই তিনটি স্তরের ‘মনিটরিং কমিটি’র সদস্য কারা হবেন, তারও উল্লেখ রয়েছে এখানে। নির্দেশে বলা হয়েছে, ব্লক-স্তরে প্রতি মাসের ৫ তারিখ, মহকুমা-স্তরে প্রতি মাসের ১০ তারিখ ও জেলা-স্তরে ১৫ তারিখ এই কমিটির বৈঠক করতে হবে।
রাজ্য সরকারের এই নির্দেশ এসে পৌঁছনোর পর নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ কত দূর এগিয়েছে, কোথায় সমস্যা হচ্ছে, সে সব খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পর জেলার কিছু পঞ্চায়েতে অচলাবস্থা তৈরি হয়। প্রধান, পঞ্চায়েতের সদস্যরা দীর্ঘ দিন এলাকায় না-থাকায় গ্রামোন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলেই অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে বিডিওদের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে সরকারের এই নির্দেশের ফলে পঞ্চায়েতের গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জোট সরকারের শরিক কংগ্রেসও এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। রবিবারই কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় থেকে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ, সকলেই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বদলে আমলাতন্ত্রে বেশি ভরসা রাখার অভিযোগ তুলেছেন।
রাজ্যে পালাবদলের পর পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো পিছিয়ে পড়া জেলাতেও উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ১০০ দিনের প্রকল্প, ইন্দিরা আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’র মতো গ্রামোন্নয়নের প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের কোষাগারে কোটি কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। কিন্তু, স্বাভাবিক গতিতে কাজ হচ্ছে না।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সময়ে শেষ করার জন্য সমন্বয় বাড়ানোর প্রয়োজন। সেই কারণেই ‘মনিটরিং কমিটি’ গঠনের নির্দেশ। সরকারের নির্দেশে বলা হয়েছে, জেলাস্তরের কমিটির চেয়ারম্যান হবেন জেলাশাসক। এখানে মহকুমাশাসকেরা বাদে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন দফতরের আরও ১৯ জন জেলা আধিকারিক থাকবেন। মহকুমাস্তরের কমিটির চেয়ারম্যান হবেন মহকুমাশাসক। এখানে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিওরা বাদে ১৩ জন আধিকারিক থাকবেন। একই ভাবে ব্লকস্তরের কমিটির চেয়ারম্যান হবে বিডিও। এখানে আরও ১১ জন আধিকারিক থাকবেন। প্রতিটি স্তরের কমিটিতেই চেয়্যারম্যানের পছন্দ মতো এক জন আধিকারিক থাকতে পারেন। নির্দেশে বলা হয়েছে, ব্লক ও মহকুমাস্তরে ‘মনিটরিং কমিটি’র বৈঠক করতে হবে যথাক্রমে প্রতি মাসের ৫ ও ১০ তারিখ। বৈঠক শেষে একটি রিপোর্ট তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য কমিটিগুলি নজরদারি দল গঠন করবে। জঙ্গলমহল এলাকার এক বিডিও বলেন, “আগামী মাসের ৫ তারিখই মনিটরিং কমিটির প্রথম বৈঠক হবে।” কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে গ্রামোন্নয়নে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পাশ কাটিয়ে এ ভাবে আমলাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়াআদৌ গণতান্ত্রিক কি না, আদৌ ফলপ্রসূ হবে কি না। যুক্তি হিসাবে বলা হচ্ছে এ রাজ্যেই ১৯৭৮ সাল অবধি গ্রামীণ উন্নয়নে সব দায়িত্ব ছিল বিডিও, এসডিও, আমলাদের হাতেই। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা পাকাপোক্ত ছিল না। তখনও তো উন্নয়ন হয়নি। দুর্নীতির অভিযোগ ছিল সেই ব্যবস্থার মধ্যেও। বরং অনেক খামতি নিয়েও পঞ্চায়েত ব্যবস্থা তৃণমূলস্তরে ক্ষমতায়নের সম্ভাবনা তৈরি করে। গ্রামসভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে উন্নয়ন-প্রকল্প এবং তার নজরদারির ব্যবস্থার বদলে আমলা-নির্ভরতা ‘বিপজ্জনক’ বলে মনে করছেন বাম নেতৃত্ব-সহ অনেকেই। |
|
|
|
|
|