ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে বক্তব্যে ফারাক
যুবভারতীতে অন্তর্ঘাত, সন্দেহ মুখ্যমন্ত্রীরও
যুবভারতীতে রবিবার বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের পরে অন্তর্ঘাতের জোরালো অভিযোগ করেছিল মোহনবাগান। সেই অভিযোগকে কার্যত সমর্থন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার মহাকরণে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়ে মমতা বলেছেন, “কারা লাইন কেটে আলো নিভিয়ে দিয়েছে, তার তদন্ত হবে। তাতেই সব বেরিয়ে পড়বে।” যদিও ম্যাচের পরে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বলেছিলেন, “রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ থেকে সরবরাহ বন্ধ হওয়ার জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। কোনও অন্তর্ঘাতের ঘটনা ঘটেনি।”
যুবভারতীর ‘অন্ধকারের লজ্জা’র সর্বশেষ সংস্করণ ছিল লিওনেল মেসিদের আর্জেন্তিনার সঙ্গে ভেনেজুয়েলার ম্যাচ। সেই ম্যাচের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে নিভে গিয়েছিল আলো। ক্রীড়ামন্ত্রী তখন বলেছিলেন, তদন্ত কমিটি গড়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সেই তদন্ত রিপোর্ট আজও প্রকাশিত হয়নি। এ দিন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে ক্রীড়ামন্ত্রী ফের বলেছেন, “তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, “স্টেডিয়াম-সংলগ্ন এলাকার বিদ্যুৎ পরিকাঠামো বহু পুরনো। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হবে না, এ ব্যাপারে একশো শতাংশ গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা ফেডারেশনকে অনুরোধ করব ম্যাচগুলি দুপুরে দিতে।”
ক্রীড়ামন্ত্রীর এই ‘পরামর্শে’ অবশ্য ক্লাবগুলি ক্ষুব্ধ। তাদের একাংশের বক্তব্য, “গরমের সময় দুপুর দু’টোয় অ্যাস্ট্রোটার্ফে খেলা সম্ভব কি? আর অসুখ হলে রোগীকে কেউ মেরে ফেলে? খেলাই যদি না হয় তা হলে যুবভারতীতে ফ্লাডলাইট কেন রয়েছে?” এ দিকে ডার্বি ম্যাচের সংগঠক মোহনবাগানের সচিব অঞ্জন মিত্র ফের বলেছেন, “আমাদের কাছে নির্দিষ্ট খবর ছিল বলেই চিঠি দিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী ও ক্রীড়ামন্ত্রীকে আগে থেকে জানিয়েছিলাম, এ রকম হতে পারে। তদন্ত তো হচ্ছে। দেখা যাক কী বেরোয়।” মোহন-সচিবকে নাম না করে পাল্টা কটাক্ষ করেছে ইস্টবেঙ্গল। সচিব কল্যাণ মজুমদার এ দিন বলেন, “উনি তো ভবিষ্যৎবক্তা। নস্ত্রাদামুসের বংশধর। যা বলেছেন সব মিলে যাচ্ছে।”
এ হেন বাগ্যুদ্ধের ফাঁকে উঠে আসছে প্রতিকারের নানা সম্ভাব্য পথ। দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি এ দিন বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্টেডিয়ামে খেলা হলে নির্দিষ্ট একটি ট্রান্সফর্মার থেকেই শুধু বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সেক্টর ৩ এলাকার একটি সাবস্টেশনের ট্রান্সফর্মার হঠাৎ বিকল হয়ে যাওয়াতেই রবিবার যুবভারতীর ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আর ঠিক সেই সময়ই চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলায় ডুবে গিয়েছিল স্টেডিয়াম। খেলার শেষ লগ্নে আলো নিভে যাওয়ার পরেই হুড়মুড় করে বেরোতে শুরু করেন দর্শকরা। অথচ যুবভারতীর মূল গেট তখনও বন্ধ। ভিড়ের চাপে পড়ে যান অনেকেই। এক দর্শক ট্যুইটারে লিখেছেন, “বহু বয়স্ক মানুষ খেলা দেখতে এসেছিলেন। তাঁরা পদপিষ্ট হয়ে মাটিতে পড়ে চিৎকার করছিলেন ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে। জোর করে গেট না খুললে অনেকেই মারা যেতেন।” আরও একটি ট্যুইট “কত চটি-জুতো যে পড়ে ছিল! মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছি। কোথাও কোনও পুলিশ ছিল না।” পদপিষ্ট হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অমর সর্দার (১০) ও অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় (২২)-এর অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে অরিত্র এখনও আইসিসিইউ-তেই আছেন। দু’জনেরই চিকিৎসার খরচ দিচ্ছে মোহনবাগান।
এ দিকে পুলিশ দুষছে পরিকাঠামোকে। তাদের দাবি, স্টেডিয়ামের ছ’টি গেটে যে সিসিটিভি লাগানো হয়েছিল তার মধ্যে দু’টি গেটে (১ নম্বর গেট-সহ) আলো না থাকায় ওই দু’টি ক্যামেরার সব ছবি কালো হয়ে গেছে। মোহনবাগানের অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত এ দিন বললেন, “বারবার পুলিশকে বলেছিলাম বিদেশের মতো খেলা শেষ হওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে সব গেট খুলে দিতে। ওরা আমল দেয়নি।” আহতদের যাঁরা হাসপাতালে নিয়ে যান, তাঁদের অভিযোগ, ঘটনার সময়ে এক নম্বর গেটে কোনও পুলিশই ছিল না। তাঁরা সংগঠকদের নেওয়া খাবারের প্যাকেট নিতে ব্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, যুবভারতীতে মাত্র ছ’টি গেট। এক লাখ দর্শক হলে তাঁদের ঢোকা-বেরোনো নিয়ে সমস্যা হবেই। স্টেডিয়ামের গেট বাড়িয়ে অন্তত ১৬টি করার জন্য তারা সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.