২০০৯ সালে রাজ্য সরকার তাঁকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে, চাকরি জোটেনি। এখন টাকার অভাবে আন্তর্জাতিক যোগাসন প্রতিযোগিতায় সুযোগ পেয়েও যোগদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এক প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদের। অনুশীলন ছেড়ে সাহায্য চেয়ে এ দরজায় সে দরজায় হন্যে হয়ে ঘুরছেন শান্তনু অধিকারী নামে শ্রীরামপুরের মাহেশ খটিরবাজার এলাকার ওই যুবক।
আগামী ২-৩ ডিসেম্বর হংকংয়ে ওই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজক হংকং যোগা ফেডারেশন। সেখানে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন শান্তনু। এই অবস্থায় প্রস্তুতিতে ডুবে থাকার কথা যে কোনও খেলোয়াড়ের। কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের সন্তান শান্তনু তা পারছেন কই! পারছেন না স্রেফ সংসারের দারিদ্রের কারণে। ভারতীয় যোগা ফেডারেশন তাঁকে নির্বাচিত করেছে এই খবর পেয়েই বিভিন্ন জনের কাছে হাত পাততে হচ্ছে তাঁকে। ফেডারেশন জানিয়েছে, হংকংয়ে যাওয়া এবং সেখান থেকে ফেরার খরচ হিসেবে প্রত্যেক ক্রীড়াবিদকে ৭০ হাজার টাকা দিতে হবে। সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত খরচও রয়েছে। শুধু শান্তনুই নন, ওই প্রতিযোগিতায় সুযোগ পাওয়া আরও দুই প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদ নির্মলচন্দ্র সিংহ এবং রাধা বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও স্পনসর ছাড়া সেখানে যাওয়া দুষ্কর বলে জানাচ্ছেন ফেডারেশনের কর্তারা। কিন্তু এখনও কোনও স্পনসর এগিয়ে আসেনি। শান্তনু বলেন, “এর আগে ব্রাজিলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোগদানের সুযোগ পেয়েও যেতে পারিনি টাকার অভাবে। এ বারও একই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি। ২৯ নভেম্বর হংকং রওনা হওয়ার কথা। দুশ্চিন্তায় অনুশীলনে মনসংযোগ করতেই পারছি না।” শান্তনুর বাবা জয়দেব অধিকারী বলেন, “রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। এই টাকাটাই এখনও পর্যন্ত সম্বল। বাকি টাকা কোথা থেকে আসবে বুঝতে পারছি না।” শান্তনু জানান, অসুখের কারণে ছোটবেলা থেকেই তাঁর ডান হাত এবং ডান পায়ে সমস্যা রয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা অবশ্য দমাতে পারেনি যুবকটিকে। বরং প্রতিবন্ধকতা জয় করেই ক্রীড়াবিদ হওয়ার স্বপ্ন সেই কবে থেকে বাসা বেঁধেছে তাঁর মনে। যোগাসনের পাশাপাশি দেহসৌষ্ঠ্যব এবং ভারোত্তলন অনুশীলন করেন শান্তনু। তিন বিভাগেই আঞ্চলিক, রাজ্য এবং সর্বভারতীয় স্তরে বহু প্রতিযোগিতায় যোগদান করেছেন। বেড়ে চলেছে পদক আর শংসাপত্র।
শান্তনু স্বপ্ন দেখেন, বিদেশ থেকে গলায় পদক ঝুলিয়ে ফিরেছেন। মাঝে মধ্যেই অবশ্য টাকার চিন্তার দুঃস্বপ্ন তাড়া করে বেড়ায় তাঁকে। |