মৌড়িগ্রাম
স্ত্রীকে মেরে শিশুর পেটে আর নিজের গলায় কাঁচি
রদুপুরে মহিলার আর্তনাদ শুনে ছুটে গিয়েছিলেন এলাকার লোকজন। ঘরের দেওয়াল ভেঙে ভিতরে ঢুকেই আঁতকে ওঠেন তাঁরা। দেখলেন, ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রক্তে ভেজা মেঝেতে পড়ে আছেন ওই মহিলা। পাশে পড়ে আছেন তাঁর স্বামীও। তিনিও জখম। আর নাড়িভুঁড়ি ‘কাটা’ অবস্থায় খাটে বেঁহুশ হয়ে পড়ে আছে তাঁদের দু’বছরের সন্তান।
সোমবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে হাওড়ার সাঁকরাইল থানা এলাকায় মৌড়িগ্রামের অমল কুণ্ডু কলোনিতে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক বিবাদ এবং আর্থিক অনটনের জেরে স্ত্রী-পুত্রকে ধারালো কাঁচি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন গৃহকর্তা সঞ্জীব দাস। সুমিতা দাস (৩২) নামে ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। সঞ্জীববাবু এবং তাঁদের ছেলে সোম গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সঞ্জীব দাস

সুমিতা দাস
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ প্রসস্থি সর্দারপাড়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফেরেন সঞ্জীববাবু। তিনি পেশায় কলের মিস্ত্রি। তাঁর বোন মমতা পাল বলেন, “হঠাৎ ওদের ঘর থেকে বৌদির ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার শুনি। গিয়ে দেখি, দরজা বন্ধ। আশপাশের লোকজনও চলে এসেছে তত ক্ষণে। লোহার দরজা ভাঙতে না-পেরে শেষ পর্যন্ত জানলা আর দেওয়ালের কিছুটা অংশ ভেঙে ভিতরে ঢুকি।” মমতাদেবী জানান, ঘরের মেঝে রক্তে ভাসছিল। সুমিতাদেবী এবং তাঁর ছেলের গলায় ও পেটে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। গলায় আঘাত ছিল সঞ্জীববাবুরও। তাঁর দাদা রতন দাস বলেন, “ঘরের খাটটা ছিল লন্ডভন্ড। তার উপরে পড়ে থাকা বাচ্চার পেট পুরো কাটা ছিল। নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এসেছিল। যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছিল সঞ্জীব। ওদের তখনই হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সুমিতাদেবীর। তদন্তকারীরা জানান, জামাকাপড়ে চুমকি বসানোর কাজও করতেন ওই দম্পতি। কাপড় কাটার কাঁচি দিয়েই স্ত্রী ও ছেলের উপরে ‘হামলা’ চালান সঞ্জীববাবু। ওই ঘর থেকে রক্তমাখা একটি কাঁচি উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। দু’দিন শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন সঞ্জীববাবুরা। স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে সোমবার বাড়ি ফেরার পরেই এই ঘটনা। সব শুনে বাগ্রুদ্ধ সুমিতাদেবীর বাপের বাড়ির আত্মীয়স্বজন।
কিন্তু নিছক অনটনের জ্বালাতেই কি এই কাণ্ড ঘটালেন গৃহকর্তা? নাকি অন্য কোনও কারণও ছিল? এ দিন পুরোপুরি রহস্যভেদ হয়নি। জট খোলার জন্য সঞ্জীববাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের অপেক্ষায় আছে পুলিশ। তবে সুমিতাদেবীর ভাইয়ের জবানি থেকে জানা গিয়েছে, স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে কোথাও একটা জটিলতা ছিল। সুমিতাদেবীর ভাই ভোলা সর্দার বলেন, “জামাইবাবু একগুঁয়ে, রগচটা ধরনের মানুষ। দিদিকে সন্দেহ করতেন।” কী বা কাকে নিয়ে সন্দেহ, তা অবশ্য বিস্তারিত ভাবে জানাননি তিনি। পুলিশ জানায়, স্ত্রীকে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে মারার চেষ্টা করেছিলেন সঞ্জীববাবু। তার পরেই কাঁচি দিয়ে হামলা চালান।
পড়শিরা অবশ্য এর আগে ওই দম্পতির মধ্যে বিবাদের তেমন কোনও আঁচ পাননি বলে জানান। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর আষ্টেক আগে বিয়ে হয় সুমিতাদেবী ও সঞ্জীববাবুর। সমীর রায় নামে এক পড়শি বলেন, “ওদের মধ্যে কোনও দিন ঝগড়া হতে দেখিনি। হঠাৎ কী যে হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.