পিছু হটলেন নেত্রীর চাপে
ক্ষতির রেলেও দীনেশের ইঙ্গিত ভাড়া না বাড়ানোর
গোনোর ইঙ্গিত দিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসতে বাধ্য হলেন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। যার ফলে এ বারেও সম্ভবত বাড়ছে না যাত্রী ভাড়া। যদিও ট্রেন চালানোর খরচ বিপুল বেড়ে যাওয়ায় এবং বর্ধিত হারে বেতন-পেনশন দিতে গিয়ে এর মধ্যেই রেলের লোকসান পৌঁছেছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকায়।
দলীয় নেত্রীর ছেড়ে যাওয়া মন্ত্রকে এসে কিন্তু গত আট বছর একই জায়গায় থমকে থাকা যাত্রী ভাড়া বাড়ানোরই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দীনেশ। প্রয়োজনে তেল সংস্থাগুলির মতো রেলের ভাড়ার ক্ষেত্রেও ‘ডায়নামিক প্রাইসিং’ চালু করার বিষয়ে সওয়াল করেছিলেন তিনি। সেই মতো সম্ভাব্য ভাড়া বৃদ্ধির বিন্যাসও তৈরি হয়েছিল। তা জনগণের মতামতের জন্য রেলের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে বলেও ঠিক হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাপে আপাতত এই ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। যোজনা কমিশন, অর্থ মন্ত্রকের চাপ সত্ত্বেও খুব সম্ভবত আগামী বাজেটেও যাত্রী ভাড়া বাড়ছে না বলেই ইঙ্গিত রেল মন্ত্রকের।
যদিও দায়িত্ব নেওয়ার পরে দীনেশের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, সাধারণ শ্রেণিতে সম্ভব না হলেও বাতানূকুল শ্রেণিতে ভাড়া বাড়াবেন তিনি। কিন্তু সমস্যা হল, দূরপাল্লার ট্রেনে মাত্র ১০ শতাংশ যাত্রী বাতানুকূল শ্রেণিতে যাতায়াত করেন। ফলে তাতে রেলের কোনও লাভ হবে না বলেই মত অর্থ মন্ত্রকের সচিব আর গোপালনের। তাঁর পরামর্শ ছিল, কেন্দ্রের উপর নির্ভরতা কমিয়ে ট্রেনের সাধারণ ও দ্বিতীয় শ্রেণিতেও ভাড়া বৃদ্ধি করা হোক।
সেপ্টেম্বরে প্রায় ৬ শতাংশ পণ্য মাসুল বাড়ায় রেল। ফলে জল্পনা শুরু হয়, খুব দ্রুত দীনেশ যাত্রী ভাড়ার ক্ষেত্রটিও সংস্কার করবেন। কিন্তু সম্প্রতি ঘনিষ্ঠমহলে দীনেশ ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী বাজেটেও রেলে যাত্রী ভাড়া বাড়ানো হবে না। বরং খোঁজা হবে বিকল্প আয়ের রাস্তা। যেমনটা হয়েছিল মমতার আমলেও। কার্যত সেই সুরেই আজ দিল্লিতে রেলকর্মীদের জাতীয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দীনেশ বলেন, “ভাড়া বাড়ানোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, আমাদের বিকল্প আয়ের রাস্তায় হাঁটতে হবে। রেল একটা সোনার খনি। কী ভাবে মন্ত্রকের হাতে পড়ে থাকা জমিকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করে অতিরিক্ত উপার্জন করা যায়, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে আমাদের।”
কিন্তু বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে বের করা যে সহজ নয়, তা বিলক্ষণ জানেন রেলকর্তারা। রেলের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিকে বিশ্বমানে উন্নীত করে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে চাইছেন দীনেশ। কিন্তু তা করতে টাকা আসবে কোথা থেকে, তার কোনও স্পষ্ট দিশা নির্দেশ নেই রেলের কাছেই। স্টেশনগুলি কী ভাবে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা যায়, তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ গড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দীনেশ। পাশাপাশি বিকল্প আয়ের রাস্তা হিসাবে রেলের জমিকে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি মডেলে ব্যবহার করতে চাইছে মন্ত্রক। কিন্তু তা থেকে কবে আয়ের মুখ দেখবে রেল, সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই কারও। বাস্তব কিন্তু বলছে, গত আট বছরে ডিজেল, বিদ্যুৎ, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণের মতো ‘ইনপুট কস্ট’ বা ট্রেন চালানোর খরচ লাফিয়ে বেড়েছে। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের জন্য বর্ধিত বেতন ও পেনশন দিতে রেলের খরচ বেড়েছে বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকা। যাত্রী ভাড়ায় ভর্তুকি দিতে গিয়ে ২০০৯-১০ আর্থিক বছরে ক্ষতির অঙ্ক পৌঁছে যায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকায়। চলতি বছরে এই লোকসান আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। এক রেলকর্তার কথায়, ক্ষতির পরিমাণ বছরে তিন হাজার কোটি টাকা করে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রক দেখেছে, ২০০৪ সালে যা ভাড়া ছিল, তার থেকে বর্তমানে অন্তত ৮৮ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। এই হিসেব মানলে ১০০ টাকার টিকিটের দাম বাড়িয়ে ১৮৮ টাকা করা উচিত। মন্ত্রক পরিকল্পনা নেয়, এতটা না হলেও ন্যূনতম ১০ শতাংশ ভাড়া সব ক্ষেত্রেই বাড়ানো যেতে পারে। রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই ওই ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন মমতা। এ বিষয়ে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, রেল ফি বছর যাত্রী ভাড়া থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি আয় করে। সে ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি হলে বাড়তি ‘মাত্র’ ৩ হাজার কোটি টাকা রেলের ভাঁড়ারে জমা হবে। ওই ‘অল্প পরিমাণ’ আয় বাড়াতে গিয়ে লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে আমজনতার উপরে নতুন করে চাপ বাড়ানো অর্থহীন। তার থেকে বরং বিকল্প আয়ের রাস্তা খুঁজে বের করা হোক। মমতার সেই যুক্তি এ বার মানতে হল দীনেশকেও।
আপাতত তাই ভাড়া না বাড়িয়ে কোষাগারের হাল ফেরাতে বিকল্প পথেরই খোঁজ করছে রেল মন্ত্রক। যদিও সেই পথ এখনও তাদের অজানা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.