সরকার বিরোধিতায় সংসদে একজোট বিজেপি ও বামেরা
গামিকাল থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ফের একজোট বাম-বিজেপি। কালো টাকা, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়কে অস্ত্র করে সরকারকে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে দুই পক্ষ। এ ব্যাপারে একে অন্যকে সমর্থন করতেও রাজি হয়েছে। আক্রমণ সামাল দিতে বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানোর পাশাপাশি সরকারের বক্তব্য তুলে করার কৌশল নিচ্ছে কংগ্রেস।
কাল, অধিবেশনের প্রথম দিনেই কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে সংসদে মুলতুবি প্রস্তাব আনতে চলেছেন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। অন্য দিকে বামেরা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার প্রশ্নে মুলতুবি প্রস্তাব আনবেন। আর এই দু’টি প্রস্তাবের ক্ষেত্রেই একে অন্যকে সমর্থন করবে বলে ঠিক করেছেন বাম ও বিজেপি নেতৃত্ব। আজ সকালে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকের পরে সিপিএম-সিপিআইয়ের দলনেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা সেরে নেন লোকসভায় বিজেপির নেত্রী সুষমা স্বরাজ। তখনই দুই দলের কক্ষ সমন্বয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। এর ফলে বাম ও বিজেপি-র হাত ধরে ইউপিএ-র বাইরে থাকা কার্যত সমস্ত দলই কংগ্রেস বিরোধিতায় এককাট্টা হচ্ছে।
বিরোধী জোট তৈরির দিনেই অবশ্য তাতে সামান্য হলেও চিড় রয়েছে। এনডিএ যে ভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে সমর্থন করছে না বামেরা। সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, প্রমোদ মহাজনের আমলে স্পেকট্রাম বণ্টনে সিবিআই তদন্ত শুরু করার পরেই পাল্টা চাল হিসেবে চিদম্বরমকে বয়কটের রাস্তায় হাঁটছে বিজেপি। সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া বলেন, “আমরা চিদম্বরমের পদত্যাগের দাবি আগেই করেছি। কিন্তু বয়কটের দিকে যাচ্ছি না।” সিপিআই-এর গুরুদাস দাশগুপ্তও এ বিষয়ে বিজেপির থেকে স্পষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে চান। তাঁর কথায়, “সংসদের ভিতরে-বাইরে চিদম্বরমের কুকীর্তি ফাঁস করার কাজ চলবে। কিন্তু সংসদে তাঁকে বলতে বাধা দেওয়ার পক্ষে নই।” বামেদের বক্তব্য, এনডিএ-র আমলে কংগ্রেস যখন জর্জ ফার্নান্ডেজকে পুরোপুরি বয়কট করত, তখন বাম-সাংসদরা জর্জকে প্রশ্ন করতেন না বা তাঁর সঙ্গে বৈঠক করতে যেতেন না। কিন্তু কখনও তাঁকে বলতে বাধা দেওয়া হয়নি।


শীত অধিবেশনের বিল-তামামি
পাশ হতে পারে
লোকপাল জনস্বার্থ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ ও প্রকাশকারীদের সুরক্ষা বিচারবিভাগের মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পেনশন তহবিল নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জীবন বিমা নিগম (সংশোধনী) শিক্ষা ট্রাইব্যুনাল লোকসভা, বিধানসভায় মহিলা সংরক্ষণ

আসতে পারে
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা পরমাণু নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ

বিরোধী শিবিরে এই ‘ফাটল’ বাড়াতে সচেষ্ট সরকার তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব। গত অধিবেশনে সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হওয়া সত্বেও মনমোহন-সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বলে মুলতুবি প্রস্তাব আনবে বামেরা। আর তাদের সেই আক্রমণ আগেভাগে ভোঁতা করে দিতে সক্রিয় কংগ্রেস। সরকারি সূত্রের খবর, আগামিকালই প্রয়োজনে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিতে পারেন। মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম টানতে কেন্দ্র কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে কতখানি লাভ হয়েছে, ওই বিবৃতিতে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। কংগ্রেস মুখপাত্র মনীশ তিওয়ারি বলেন, “মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ইউরো-জোনে সঙ্কট, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের মতো সরকারের সীমাবদ্ধতার দিকগুলিও তুলে ধরা প্রয়োজন।” এর পাশাপাশি, ইসরাত জহান মামলায় ‘সিট’-এর রিপোর্ট নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে বিজেপির সঙ্গে বামেদের দূরত্ব বাড়ানোর কৌশলও নিচ্ছে তারা।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য মনে করছে, এই বিরোধী জোট সহজে ভাঙা যাবে না। কারণ কৃষকদের আত্মহত্যা, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ, পরমাণু দায়বদ্ধতা বিল নিয়েও এর পরে সরব হবে এনডিএ। বামেরা যে এর বিরোধিতা করবে না, তা নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী তারা। আজ সিপিএমের সংসদীয় দলের বৈঠকেও ঠিক হয়েছে, মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁরাও এই বিষয়গুলি নিয়ে সরব হবেন। বস্তুত বিজেপি-ও তাঁদের পথ ধরায় কার্যত সুবিধাই হয়ে গিয়েছে বামেদের। কারণ সংসদে দুর্বল হয়ে যাওয়া বামেরা এখন চাইছেন, তাঁদের কংগ্রেস বিরোধিতার লড়াইটা কিছুটা বিজেপি-ও লড়ে দিক। তা ছাড়া, যে মায়াবতীকে গত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছিল, সেই বসপা নেত্রী এখন তাদের এক রকম ব্রাত্য করে দিয়েছেন। আবার এত দিন যে জয়ললিতা বামেদের সঙ্গী ছিলেন, তিনি গত কাল আডবাণীর মঞ্চে প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিজেপিকে বার্তা দিয়ে রেখেছেন। ফলে সিপিএম ভালই বুঝতে পারছে যে, নিজেদের শক্তি ছাড়া অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলির সঙ্গে জোট টিকিয়ে রাখা যথেষ্ট শক্ত।
আজ তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই মূল্যবৃদ্ধি প্রশ্নে সমর্থন আদায় করতে গিয়ে বিজেপিকে কালো টাকা নিয়ে সমর্থনে রাজি হতে হয়েছে বামেদের। বস্তুত গত সপ্তাহে লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারের ডাকা বৈঠকে বিজেপিও প্রথম দিনে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনবে বলেই জানিয়েছিল। কিন্তু গত কাল লালকৃষ্ণ আডবাণী রথযাত্রা সেরে দিল্লিতে ফেরার পর বিজেপি নেতারা আলোচনায় বসেন। তখনই ঠিক হয়, আডবাণীর রথযাত্রার রেশ ধরে রাখতে সংসদের শুরু থেকেই কালো টাকা উদ্ধারে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হতে হবে। দলের নেতাদের আডবাণী বোঝান, সংসদে এর আগে মূল্যবৃদ্ধি বা দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হলেও কালো টাকা নিয়ে কখনও হয়নি। দল তথা এনডিএ-ও তাঁকে সমর্থন করে। কারণ রথযাত্রাকে সামনে রেখে বিজেপি অণ্ণা হজারের দুর্নীতি-বিরোধী লড়াইয়ের জায়গাটাও অনেকখানি নিয়ে নিতে পেরেছে। কিন্তু একটি দলের তরফে যে হেতু একটি মাত্র মুলতুবি প্রস্তাবের নোটিসই দেওয়া সম্ভব, তাই মূল্যবৃদ্ধির পরিবর্তে কালো টাকা নিয়ে নোটিস দেওয়ারই সিদ্ধান্ত হয়। সুষমা স্বরাজ তাঁদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন গুরুদাস দাশগুপ্তকে। বাম নেতৃত্ব প্রথমে বিস্ময় প্রকাশ করলেও পরে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন যে, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তাঁদের আনা প্রস্তাবকে সমর্থন জানাবে বিজেপি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.