টাকার মূল্য হ্রাস, ফ্রান্সের আর্থিক অবস্থা নিয়ে মুডিজের বিরূপ মন্তব্য এবং ঘাটতি মেটাতে মার্কিন সরকারের ব্যর্থতার খবর, এই ত্র্যহস্পর্শে সোমবার ধরাশায়ী হল ভারতীয় শেয়ার বাজার। এবং বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কাকেই সত্য প্রমাণ করে সেনসেক্স নেমে এল ১৫ হাজারের ঘরে। এ বার আশঙ্কা, তা খুব শীঘ্রই ১৪ হাজারের ঘরে নেমে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, অবস্থার উন্নতি না-ঘটলে সূচক কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকবে, সে ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
এক দিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ইউরোপের বেশ কিছু দেশে ঋণ মেটানোর সমস্যা, অন্য দিকে ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির হার ধরে রাখার পথে নানা বাধা, এই দুইয়ের জাঁতাকলে গত আট দিন ধরে টানা মার খাচ্ছে শেয়ার বাজার। হু হু করে পড়ছে সূচক। ওই আট দিনে সেনসেক্স খুইয়েছে ১৬২৩ পয়েন্টেরও বেশি।
সোমবার এক ধাক্কায় সেনসেক্স পড়েছে ৪২৫.৪১ পয়েন্ট। দিনের শেষে তা নেমে আসে ১৫,৯৪৬.১০ অঙ্কে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা খুব শীঘ্রই সেনসেক্স ১৪ হাজারের ঘরে নেমে যাবে। তবে এখানেই কি পতনের শেষ? অন্তত সুমেধা ফিসক্যাল সার্ভিসেসের ডিরেক্টর এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ ন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ মেম্বার্স-এর প্রাক্তন সভাপতি বিজয় মুর্মুরিয়া কিন্তু তা মনে করেন না। তিনি বলেন, “সত্যি কথা বলতে কি, সূচকের পতন কোথায় গিয়ে থামবে, তা এখন বলা মুশকিল। ভারতের অর্থনীতিতে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সুরাহার কোনও লক্ষণ অন্তত এখনও পর্যন্ত চোখে পড়ছে না। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সমস্যা
বড় আকার ধারণ করেছে। তাই পরিস্থিতির পরিবর্তন না-হলে সূচকের পতন যে অব্যাহত থাকবে, তাতে সন্দেহ নেই।” |
ভারতের আর্থিক ক্ষেত্রে এমনিতেই সমস্যা রয়েছে। তার উপর ডলারে টাকার দাম টানা পড়তে থাকায় নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই দিন ডলারের তুলনায় টাকার দাম বাজার বন্ধের সময়ে ৮১ পয়সা পড়ে গিয়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৫২.১৫/১৬ টাকা। গত ৩৩ মাসের মধ্যে টাকার দাম এতটা নীচে নামেনি। ফলে আমদানির খরচ বাড়ছে দ্রুত। সাধারণ ভাবে শিল্প সংস্থাগুলির সমস্যা তো বেড়েইছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও টাকার দাম পড়ে গিয়ে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলেই তেল আমদানির খরচ কমাতে পারছে না ভারত।
এ দিকে ইউরোপের বাজারে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করেছে ফ্রান্সের ঋণ মেটানোর ক্ষমতা নিয়ে মুডিজের বিরূপ মন্তব্য। মুডিজের মন্তব্য, সম্প্রতি সুদের হার বৃদ্ধি এবং দুর্বল আর্থিক অগ্রগতি ফ্রান্সের ঋণ মেটানোর ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এর জেরে কমতে পারে ফ্রান্সের মূল্যায়ন। পাশাপাশি, রাজকোষ ঘাটতি মেটাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আমেরিকার দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা একমত হতে পারেনি বলে খবর। এ খবরও আন্তর্জাতিক বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এ দিন এশীয় বাজার পড়েছে। ইউরোপ জুড়েই শেয়ার বাজারে ছিল মন্দা ভাব। বাজার খোলার পর থেকেই নীচের দিকে নামতে থাকে বিভিন্ন মার্কিন সূচক। |