৩৩ মাসে সর্বনিম্ন টাকার দাম, বিপাকে তেল সংস্থা
টানা পড়তে পড়তে টাকার দাম তেত্রিশ মাসের তলানিতে।
সোমবারও ডলারের সাপেক্ষে ফের ৮১ পয়সা পড়েছে টাকার দাম। মার্কিন মুদ্রাটির সঙ্গে তার বিনিময় মূল্য নেমে গিয়েছে ৫২ টাকারও নীচে। এ দিন ভারতে বৈদেশিক মুদ্রা কেনা-বেচার বাজার বন্ধের সময় তা দাঁড়িয়েছে ১ ডলার= ৫২.১৫/১৬ টাকা। অর্থাৎ, ১ ডলার কিনতে এখন খরচ করতে হবে ৫২ টাকারও বেশি। অথচ গত সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকেও তা পাওয়া যেত ৪৬ টাকার আশেপাশে।
ডলারের সাপেক্ষে টাকার এ দিনের দর গত সাড়ে বত্রিশ মাসে সর্বনিম্ন। শুধু গত ছ’দিনের লেনদেনে টাকা পড়েছে ২০৩ পয়সা (৪.০৫ শতাংশ)। এই লাগাতার পতনে স্বাভাবিক ভাবেই বিপাকে আমদানিকারীরা। বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। কারণ, দেশের তেল ও গ্যাসের বিপুল চাহিদা মেটাতে তার ৭০ শতাংশই আমদানি করতে বাধ্য হয় তারা। এবং সাধারণত তার দাম মেটাতে হয় ডলারে। ফলে, মার্কিন মুদ্রার দাম এমন লাগামছাড়া ভাবে বেড়ে যাওয়ার অর্থ তেল আমদানির খরচ বহু গুণ বেড়ে যাওয়া। কিছু দিন আগেই ইন্ডিয়ান অয়েল দাবি করেছিল যে, ডলারের দাম মাত্র এক টাকা বাড়লেই আমদানি খাতে তাদের ব্যয় বাড়ে ১,৮০০ কোটি টাকা। ফলে এ ভাবে টাকার দর পড়তে থাকলে, তেল সংস্থাগুলির ‘আন্ডার রিকভারি’ (আমদানি খরচের তুলনায় ভর্তুকি দিয়ে কম দামে বিক্রি)-র বোঝা সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
কিন্তু কেন ডলারের সাপেক্ষে এমন হু হু করে পড়ছে টাকার দাম?
এক কথায় বললে, এর কারণ দুনিয়া জুড়ে বাড়তে থাকা ডলারের চাহিদা। অর্থনীতির নিয়ম মেনে আর পাঁচটা জিনিসের মতো ডলারেরও চাহিদা বাড়লে, তার দাম বাড়ে। তখন তা কিনতে টাকা লাগে আগের থেকে বেশি। আর সেই কারণেই মাস দুয়েকের মধ্যে ৪৬ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ৫২ টাকা ছাপিয়ে গিয়েছে মার্কিন মুদ্রাটি।
ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের অর্থনীতির শিক্ষক অভিরূপ সরকারের ব্যাখ্যায়, “চড়া মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা নিয়ে এই যে এত কথা বলছি, এর অর্থ কী? অন্য সব জিনিসের সাপেক্ষে টাকার দাম কমছে। অর্থাৎ, প্রায় যে কোনও জিনিস কিনতেই টাকা লাগছে আগের থেকে বেশি। ডলারও তার ব্যতিক্রম নয়। আগে হয়তো এক কেজি চাল ২৫ টাকাতে পাওয়া যেত। এখন সেই চাল কিনতেই গুণতে হচ্ছে ৩০ টাকা। ঠিক তেমনই যে ডলার আগে ৪৬-৪৭ টাকায় পাওয়া যেত, তার দাম এখন পৌঁছে গিয়েছে ৫২ টাকার উপরে।” ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম যে হঠাৎ করে কমেছে, তা নয়। বেশ কিছু দিন ধরেই তা পড়ছে একটু একটু করে। গত কয়েক দিনে শুধু সেই পতনের গতি বেড়েছে। ওই লাগাতার পতনের জন্য ভারতের বাণিজ্য ঘাটতিকে দায়ী করছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। আর ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞরা গতি বৃদ্ধির ‘দোষ চাপাচ্ছেন’ ফাটকাবাজির উপর।
অনেক অর্থনীতিবিদ বলছেন, বাজারে ডলারের দামও নির্ধারিত হয় চাহিদা ও জোগানের উপর ভিত্তি করে। ডলারের চাহিদা মূলত নির্ভর করে আমদানির উপর। কিন্তু তেল-গ্যাসের মতো বিভিন্ন অত্যাবশ্যক পণ্য আমদানির দরুন ওই চাহিদা কমা শক্ত। বরং তা ঊর্ধ্বমুখী।
উল্টো দিকে, ইউরোপ ও আমেরিকার বেহাল অর্থনীতির জেরে থমকে গিয়েছে ভারতের রফতানি বৃদ্ধির গতি। ফলে কমেছে ডলার উপার্জনের সুযোগও। এর উপর দুনিয়া জুড়ে ফের মন্দার আশঙ্কায় সে ভাবে আসছে না বিদেশি বিনিয়োগ। শেয়ার বাজার থেকেও লগ্নি সরিয়ে নিচ্ছে বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি। ফলে সব মিলিয়ে ভাটা পড়ছে ডলারের জোগানে। আর চাহিদা-জোগানের এই পার্থক্যই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে ডলারের।
অবশ্য একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পৃথিবীর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন খাতে ঘাটতি সব থেকে বেশি মার্কিন মুলুকেরই। যার অন্যতম কারণ বিভিন্ন দেশের কাছে তার বিপুল অঙ্কের ঋণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ডলারের দাম বাড়ছে দ্রুত। এবং বিশ্বের অর্থনীতি প্যাঁচে পড়লে, এর আগেও এই একই ঘটনা ঘটেছে। কারণ, মার্কিন অর্থনীতির হাল যতই খারপ হোক না কেন, এখনও পর্যন্ত ডলারকে লগ্নির পক্ষে তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন অনেকে।
এখন বিশ্ব জুড়ে শেয়ার বাজার টালমাটাল। সোনার দর আকাশছোঁয়া।
আর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলির আর্থিক সঙ্কটের জেরে তাদের মুদ্রা ইউরো নিম্নমুখী। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের কাছে ‘মন্দের ভাল’ সেই ডলারই। তাই শুধু টাকার সাপেক্ষে নয়, তার দর বাড়ছে অধিকাংশ দেশের মুদ্রার সাপেক্ষেই।
তবে ভারতে সেই পতনের মাত্রা তুলনায় বেশি। এশিয়ায় সব থেকে বেশি। বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। টাকার এই বেহাল দশার জন্য অবশ্য কেন্দ্রের আর্থিক পরিচালন ব্যবস্থার ত্রুটিকেই দায়ী করছেন ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত। আর মার্চেন্ট ব্যাঙ্ক ভিসি কর্পোরেট অ্যাডভাইজরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিজয় চন্দকের অভিযোগ, টাকার পতনের জন্য দায়ী লাগামছাড়া ফাটকাবাজি।
টাকার দামে আরও পতন রুখতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (বাজারে ডলার বেচে) ইতিমধ্যেই হস্তক্ষেপ করেছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। টাকার দাম নিয়ে আশঙ্কায় এ দিনই ৪২৫ পয়েন্ট পড়েছে সেনসেক্স। নেমে গিয়েছে ১৬ হাজারের নীচে। তবে বাজারকে আশ্বাস দিয়ে যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার ঘোষণা, “শীঘ্রই টাকার দাম স্থিতিশীল হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.