|
|
|
|
৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক এখন খন্দ-পথ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নলহাটি |
গন্তব্য স্থানে যাওয়ার জন্য সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। কিন্তু রাস্তা খারাপ থাকার জন্য সেই সময় লাগে আরও এক ঘণ্টারও বেশি। নলহাটি থানার তেজহাটি মোড় থেকে নাকপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত পানাগড়-মোড়গ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক বেহালের জন্য জেরবার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
নিত্যযাত্রী থেকে প্রশাসনিক কর্তা, জনপ্রতিনিধি সকলেই চাইছেন অবিলম্বে সমস্যার সমাধান হোক। জাতীয় সড়কের কর্তাব্যক্তিরা রাস্তাটি নতুন করে সংস্কার করার জন্য প্রকল্প ব্যয় পাঠিয়েছেন। কিন্তু রাস্তার বেহাল অবস্থা কবে কাটবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সকলেই।
ইতিমধ্যে জেলা বাস মালিক সমিতির রামপুরহাট শাখা ও বাস শ্রমিক সমন্বয় কমিটির যৌথ উদ্যোগে জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থার প্রতিবাদে এক দিনের প্রতীকী ধর্মঘট পালন করেছেন। তাঁদের তরফ থেকে একাধিকবার রাস্তা সংস্কারের জন্য আবেদন করা হয়েছে প্রশাসনিক স্তরে। তবুও রাস্তার বেহাল অংশের হাল ফেরেনি। উল্টে দিনের পর দিন রাস্তার হাল আরও খারাপ হচ্ছে। বীরভূম জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তথা অধ্যক্ষ কংগ্রেসের অতুল দাস বলেন, “আগে লোহাপুর-কাঁটাগড়িয়া মোড় থেকে সিউড়ি যেতে গাড়িতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগত। এখন রাস্তা বেহালের জন্য রামপুরহাট পৌঁছতে ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগছে। এর ফলে সময় মতো কাজে যোগ দেওয়া যাচ্ছে না। রাস্তার হাল দেখে অনেক সময় বাড়ি থেকে বেরতে ইচ্ছে করে না।” প্রশাসনিক সব স্তরে রাস্তা সংস্কারের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। |
|
তেজহাটি মোড় থেকে নাকপুর চেকপোস্ট পর্যন্ত রাস্তার হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র। |
৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের তেজহাটি থেকে নাকপুর পর্যন্ত রাস্তার উপরে নলহাটি ১ ও নলহাটি ২ ব্লক পড়ে। নলহাটি ১ ব্লকের কয়থা ১ ও কয়থা ২, কলিঠা পঞ্চায়েত এবং কুরুমগ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু অংশের মানুষ নিত্য প্রয়োজনে যাতায়াত করেন। আবার নলহাটি পুরসভার কিছু অংশ এই জাতীয় সড়কের মধ্যে পড়ে। অন্য দিকে, নলহাটি ২ ব্লকের ভদ্রপুর ২, নওয়াপাড়া পঞ্চায়েত, বারা ১ পঞ্চায়েত জাতীয় সড়কের মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া, মুরারই ১ ও মুরারই ২ ব্লকের মানুষদেরও প্রশাসনিক কাজে বা নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এই জাতীয় সড়কের বেহাল অংশের জন্য তাঁদেরকেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নলহাটি ১ ব্লকের বিডিও অচিন্ত্য সিংহ ও নলহাটি ২ ব্লকের বিডিও গঙ্গাধর দাস উভয়ই বলেন, “রাস্তা সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সমস্যার সমাধান না হওয়ায় অসুবিধা হচ্ছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে এসেছিলেন। তাঁকেও এই সমস্যার কথা বলা হয়েছে।”
নলহাটি গার্লস কলেজের পড়ুয়া হামিদা খাতুন, চন্দনা দত্তদের ক্ষোভ, “রাস্তা খারাপ থাকার জন্য কলেজে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছতে পারি না। অনেক সময় যানজটে ফেঁসে গিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয়।” নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা মসিউর রহমান বলেন, “রাস্তা এতটাই খারাপ সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোগীদের নিয়ে গেলে কী অবস্থা হয় সে শুধু ভুক্তভোগীরাই জানেন!”
নলহাটি ২ ব্লকের বারা ১ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা তৃণমূলের জেলা সহসভাপতি মহম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, “জাতীয় সড়কের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে। পুরো মাত্রায় সম্পূর্ণ ভাবে রাস্তাটি সংস্কারের প্রয়োজন।” ওই একই এলাকার বাসিন্দা সিপিএম নেতা গোরা দত্ত বলেন, “রাস্তা বেহালের জন্য মাঝে মধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে।” তাঁর দাবি, “দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে কলিঠা মোড়, তেজহাটি মোড়, লোহাপুর থেকে নাকপুর পর্যন্ত এলাকা দুর্ঘটনায় প্রবণে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মাঝে মধ্যে খানাখন্দ সংস্কার করা ছাড়া কিছু হচ্ছে না।” পানাগড় থেকে মোড়গ্রাম পর্যন্ত ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের মহম্মদবাজার থেকে মোড়গ্রাম পর্যন্ত দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী বাস্তুকার অনলজ্যোতি রায় বলেন, “২২ অক্টোবর জাতীয় সড়কের তেজহাটি থেকে নাকপুর পর্যন্ত হাল দেখতে কেন্দ্র সরকারের একটি দল এসেছিলেন। তাঁরা সরজমিনে রাস্তার হাল দেখে গিয়েছেন। রাস্তার ২১ কিলোমিটার অংশ সম্পূর্ণ ভাবে সংস্কার করার জন্য প্রকল্প ব্যয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।” খুব শীঘ্রই রাস্তার খারাপ অংশ সংস্কার করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। |
|
|
|
|
|