ক্যানসার-রোগীর নাকে অস্ত্রোপচার মেদিনীপুরে
বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় নেই। ছিল না প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম। তবু বৃহস্পতিবার ঝুঁকি নিয়েই ক্যানসার আক্রান্ত এক রোগীর অস্ত্রোপচার করলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসকেরা।
এর জন্য চিকিৎসক রবি হেমব্রম নিয়ে আসেন ব্যক্তিগত কিছু সরঞ্জাম। কৃত্রিম মাড়ি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে বুঝে এক দন্ত বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল কৃত্রিম মাড়ি। আর অস্ত্রোপচারের পর যে বিশেষ ‘প্যাক’ বা ‘বিপ’ লাগে--তা-ও কলকাতা থেকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছিলেন চিকিৎসকেরাই। অবশ্য কিছুটা খরচ দিয়েছেন রোগীর আত্মীয়েরাও। নাক-কান-গলা বিভাগের প্রধান দেবাশিস বর্মনের কথায়, “রোগীর ক্যানসার চতুর্থ ধাপে রয়েছে। তাই আমরা ঝুঁকি না নিয়ে কলকাতায় পাঠিয়েও দিয়েছিলাম। কিন্তু রোগীর পারিবারিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় তাঁরা কলকাতায় নিয়ে যেতে পারেননি। তাই ঝুঁকি নিয়ে এখানেই অস্ত্রোপচার করলাম। অস্ত্রোপচার সফল।”
মেদিনীপুর মেডিক্যালে রেনুকা পাত্র। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রোগীর নাকের মধ্যে ছিল টিউমার। কিন্তু তা পরিবারের কেউই বুঝতে পারেননি। হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। তখনই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা খড়্গপুর লোকাল থানা এলাকার পাড়ুয়া গ্রামের রেণুকা পাত্রকে। রেণুকাদেবীর বয়স প্রায় ৬৫ বছর। তাঁর বৌমা প্রতিমা পাত্র বলেন, “বহু বছর হল আমার স্বামী মারা গিয়েছেন। অনেক কষ্টে সংসার চলে। এই অবস্থায় বৃদ্ধা শাশুড়িকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। চিকিৎসক রবিবাবুকে সব কথা জানানোয় তিনি মেদিনীপুরেই অস্ত্রোপচার করার কথা জানান।”
রবিবাবু দেখেন, অর্থ জোগাড় করে কলকাতায় নিয়ে যেতে দেরি করলে বা কলকাতায় কোনও কারণে অস্ত্রোপচারে দেরি হলে ক্যানসার দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তখন রোগীকে বাঁচানো কঠিন হবে। রবিবাবুর কথায়, “এই ধরনের অস্ত্রোপচারের অনেকগুলি সমস্যা রয়েছে। মেডিক্যালে সব ধরনের যন্ত্রপাতি নেই। অস্ত্রোপচার করতেও অন্তত তিন ঘণ্টা লাগে। এই ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে চক্ষু ও দন্ত-বিভাগের বিশেষজ্ঞদেরও প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে নিজেদেরই অন্য বিষয়গুলি বুঝে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। এই ধরনের ঝুঁকি কেউ নিতে চান না। আবার দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলেও ক্যানসার ছড়িয়ে পড়বে। রোগী মারাত্মক সমস্যায় পড়বেন।”
শত সমস্যা, হাজার অভিযোগ সত্ত্বেও এ বার মেডিক্যালের নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসক দেবাশিস বর্মন, রবি হেমব্রম, শতদল মণ্ডল ও রাজেশ হাঁসদা ঝুঁকি নেন এবং তাতে সফলও। ওই চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের বিভাগের আলাদা ‘অপারেশন থিয়েটার’ নেই। ফলে ইচ্ছে থাকলেও খুশি মতো অস্ত্রোপচার করা যায় না। তার মাঝেও রেণুকাদেবীর অস্ত্রোপচার করতে পেরে চিকিৎসকেরা খুশি।
এই অস্ত্রোপচারের পারিভাষিক নাম ‘ম্যাগজিলেক্টোমি’। ডান দিকের গালের শক্ত অংশটা কেটে দিয়ে টিউমারটি বের করতে হয়েছে। যার ওজন প্রায় ১০০ গ্রাম। এর জন্য নানা যন্ত্রপাতি, ‘বিপ’ ও ‘আর্টিফিসিয়াল প্রস্থেসিস’ আনতে হয়েছে চিকিৎসকদের। এমনকী অস্ত্রোপচারের পর যে সব ইঞ্জেকশন চলছে তাও রোগীর আত্মীয়ের পক্ষে কেনা কঠিন জেনে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে চিকিৎসক দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, এখানে জরুরি অস্ত্রোপচারটা করা গেল। কিন্তু ক্যানসারের চিকিৎসা হবে না। সে ক্ষেত্রে ‘রে’ দিতে কলকাতাতেই যেতে হবে।”
তা নিয়ে ফের দুশ্চিন্তায় রোগীর আত্মীয়েরা। তবু ভাল, শত অভিযোগের মাঝেও চিকিৎসকদের মানবিক মুখ দেখা গেল মেদিনীপুর মেডিক্যালে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.