মধুমেহর আতঙ্কে ভোজসভায় একতার মিষ্টিমুখ
সন্ন অধিবেশনে সংসদে যতই সরকার বনাম বিরোধী ঝড় ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হোক, স্পিকারের ভোজসভায় কিন্তু আজ ঐকমত্য! সে শরদ পওয়ারই হোন বা বাসুদেব আচারিয়া, লালুপ্রসাদই হোন বা সুষমা স্বরাজ, সকলেই আজ এক সুর।
প্রশ্ন হচ্ছে, কী মিলিয়ে দিল লালুপ্রসাদ, সুষমা স্বরাজ, শরদ পওয়ার, বাসুদেব আচারিয়াদের?
রক্তে শর্করার মাত্রা! যার আধিক্যে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম আজ একাকার! মধুমেহ বা ডায়াবেটিসের আতঙ্কে সবাই এক বন্ধনীতে! টেবিলে সাজানো লোভনীয় গাজরের হালুয়া খাওয়া উচিত কি না, সেই আলোচনায় রাজনৈতিক মতপার্থক্য বেবাক উধাও।
প্রসঙ্গটা প্রথমে তুলেছিলেন তৃণমূলের মুখ্য সচেতক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ স্পিকারের ডাকা সংসদ পূর্ববতী সর্বদলীয় বৈঠকে
সুদীপবাবু ডায়াবেটিস-এর প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁর কথায়, এই রোগটিতে ভারত বিশ্বে পয়লা নম্বর হয়ে উঠতে চলেছে। এখন অবশ্য এক নম্বরে আছে চিন। কিন্তু ২০১৩-র মধ্যে ভারত তাকে টপকে যাবে। লোকসভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।
সূত্রের খবর, সুদীপবাবুর প্রস্তাবটিতে হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান দলমত নির্বিশেষে অনেক নেতাই। আর বৈঠকের শেষে সুদীপবাবুর কথার সূত্র ধরেই স্পিকার মীরা কুমার নেতাদের জানান, মধ্যাহ্নভোজে যে গাজরের হালুয়াটি পরিবেশন করা হবে, তা কিন্তু ‘সুগার ফ্রি’ দিয়েই তৈরি!
এ হেন ‘ঘোষণা’র পর স্বভাবতই গুঞ্জন। রসনার সঙ্গে লড়াই চিকিৎসকের সাবধানবাণীর। এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার অবশ্য মাঠে নামার আগেই ‘লড়াই’ থেকে সরে দাঁড়ান। স্পিকার অভয় দেওয়ার পরেও মিষ্টির ধারকাছও মাড়ালেন না। এড়িয়ে গিয়েছিলেন লালুপ্রসাদও। কিন্তু স্পিকারের উপরোধে সামান্য খেতেই হল। আর খেতে খেতেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধও করে ফেললেন, ‘হামারা দেশ মে ইসকা ইলাজকে লিয়ে কুছ কিজিয়ে (আমাদের দেশে এর চিকিৎসার জন্য কিছু করুন)।’ বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ হলেও রাজীব শুক্ল কিন্তু শুধু ফলই খেলেন। সুষমা স্বরাজ গাজরের হালুয়া খেলেন ঠিকই, তবে ভয়ে ভয়ে। আর পাশে থাকা পান্তুয়া দেখেও দেখলেন না! বাসুদেব আচারিয়া জানালেন, তিনি প্রবল ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত। ফলে গাজরের হালুয়া তাঁর কাছে নিষিদ্ধ। বাসুদেবের বাম সতীর্থ গুরুদাস দাশগুপ্তের অবশ্য মিষ্টিতে না নেই। পাশে দাঁড়ানো সুদীপবাবুকে জানিয়ে দিলেন, ডায়াবেটিস তাঁর স্ত্রীর আছে, কিন্তু তাঁর নেই।
রাজধানীতে মিষ্টির ভক্ত হিসাবে পরিচিত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। সুগারের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি প্রতি রাতে কিছু না কিছু মিষ্টি তাঁর জন্য বরাদ্দ থাকে। এই কাজের পক্ষে ঘনিষ্ঠমহলে তিনি যুক্তি দিয়ে থাকেন: যে হেতু শর্করা কমানোর ওষুধ খেতে হয়, তাই ভারসাম্য বজায় রাখতে তাঁকে একটি মিষ্টি নাকি খেতেই হয়! তবে সেটা অবশ্যই ‘যেখানে সেখানে’ নয়। বাইরে বিশেষ কিছুই খান না তিনি। আজ গাজরের হালুয়া এড়িয়ে গেলেন এই বলে যে, কলকাতার রসগোল্লা আর সন্দেশ ছাড়া কিছুই তাঁর মুখে রোচে না!
তা হলে আজকের এই শর্করা-কাণ্ডে ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ করলেন কে? যিনি প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন, অর্থাৎ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই! ডায়াবেটিসের রোগী সুদীপবাবু আজ চেয়ে চেয়ে হালুয়া খেয়েছেন! সঙ্গে পান্তুয়া। সুষমা তাই দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করায় সপ্রতিভ ভাবে জানিয়েছেন, তাঁর কোনও সমস্যাই নেই। পরে অবশ্য তাঁর স্বীকারোক্তি, “এতগুলো দলের নেতার সামনে কেউ বলে নাকি যে, আমার ডায়াবেটিস রয়েছে..!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.