পশ্চিমবঙ্গ যা করতে পারেনি তা করে দেখাল বিহার।
বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বিশেষ করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকদের হাজিরা সুনিশ্চিত করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যখন কানা গলির ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তখন এ ব্যাপারে উপায় খুঁজে বের করল বিহার। রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকেরা সময় মতো না এলে বা আগাম অনুমতি না নিয়ে ছুটি নিলে তাঁদের বেতন কাটা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে নীতীশ সরকার। বুধবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ওই নির্দেশিকা জারি করেছে। প্রতিটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে এই নির্দেশিকা পৌঁছে গিয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের জারি করা ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্ত চিকিৎসককে সাড়ে ৯টার মধ্যে উপস্থিত হতে হবে। কোনও চিকিৎসক যদি সাড়ে ৯টার পরে কাজে আসেন, বা না বলে ছুটি নেন তা হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বেতন কাটা যাবে। এই নির্দেশিকা প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, রেফারেল হাসপাতাল এবং মহকুমা হাসপাতালের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। চিকিৎকদের বিভিন্ন সংগঠন সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অপমানজনক বলে ব্যাখ্যা করলেও স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এই ব্যবস্থায় সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতি হবে।
কোনও হাসপাতাল কিংবা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মীর, কার কখন ডিউটি, তা প্রতি দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সামনে ঝুলিয়ে দিতে হবে। সাধারণ মানুষ ওই তালিকায় নাম থাকা কোনও স্বাস্থ্যকর্মীকে না-পেলে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কিংবা জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। কোনও মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী কবে কোন গ্রামে টীকা দিতে বা সমীক্ষা করতে যাবেন তাও গ্রামবাসীরা ওই তালিকা দেখে জানতে পারবেন। তাতে তাঁদের হয়রানি কমবে বলে এক স্বাস্থ্যকর্তা মন্তব্য করেছেন।
চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিকিৎসক মহলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ছ’মাস আগে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলির শিক্ষকদের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক ভাবে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। ১৩০০ শিক্ষকের মধ্যে এই ছ’মাসে দেরিতে আসার জন্য ৪০০ জনের বেতন কাটা গিয়েছে। এ নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষকদের একাংশ প্রথমে হইচই করলেও ওই নির্দেশ কার্যকর করতে সমস্যা হয়নি স্বাস্থ্য দফতরের।
স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় কুমার বলেন, “স্বাস্থ্য পরিষেবা যাতে ঠিক ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেরাতে চিকিৎসকদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।” বিহার হেল্থ সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অজয় কুমার বলেন, “চিকিৎসকেরা সকলেই গেজেটেড সরকারি কর্মী। ঠিক সময়ে কাজে উপস্থিত হওয়া নিশ্চিত করতে শুধু চিকিৎসক কেন, সরকারের সব গেজেটেড কর্মীর ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য হওয়া উচিত। আমরা মনে করছি সরকার আমাদের অপমান করছে।”
চিকিৎসকেরা যে সময় মতো কাজে আসেন না, তা মেনে নিয়ে চিকিৎসক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “প্র্যাক্টিস না করলে সরকারের থেকে চিকিৎসকেরা আলাদা কোনও ভাতা পান না। প্র্যাক্টিস সেরে ডাক্তারদের কাজে আসতে প্রায়ই দেরি হয়ে যায়। সরকার যদি নন-প্র্যাক্টিসিং ভাতা দেয়, তা হলে সমস্যা থাকে না।”
স্বাস্থ্যসচিবের পাল্টা বক্তব্য, “ডাক্তারেরা কাজে আসার জন্য বেতন পান। সরকার তাঁদের শুধু কাজটা ঠিক মতো করতে বলেছে। এর বেশি কিছু চাওয়া হয়নি। এর সঙ্গে অন্য কোনও বিষয় জড়িয়ে ফেলা উচিত নয়।” |