সভায় জেরবার এমসিআই-কর্তা
ডাক্তারি জয়েন্টে বাংলায় প্রশ্ন না-হলে মামলা, জানাল রাজ্য
গেই মামলা করেছে অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র।
মেডিক্যালের অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাংলাতেও হবে কি না, তারও ফয়সালা শেষ পর্যন্ত বোধ হয় আদালতেই হতে চলেছে।
হাতে মাত্র পাঁচ মাস। কিন্তু মেডিক্যালের জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রশ্ন বাংলায় হবে কি না, সেই বিষয়টি ধোঁয়াশাই থেকে গিয়েছে। এই অবস্থায় যাঁরা আগামী এপ্রিলে ওই পরীক্ষায় বসবেন, তাঁরা তো উদ্বিগ্ন বটেই। চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন তাঁদের আত্মীয়স্বজনও। কিন্তু মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিঅআই) বৃহস্পতিবারেও এ ব্যাপারে কোনও দিশা দেখাতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ দিন এমসিআই-কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, বাংলায় প্রশ্নপত্রের আর্জি না-মানলে অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্রের মতো তারাও আদালতের দ্বারস্থ হবে।
এ দিন বিষয়টি নিয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল দ্য বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। সেখানে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়েন এমসিআইয়ের পরিচালন সমিতির সদস্য অশোককুমার গুপ্ত। এক দিকে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ, রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ডাক্তার হতে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীরা। অন্য দিকে এমসিআইয়ের প্রতিনিধি অশোকবাবু। কখনও তিনি প্রশ্নকর্তাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, আঞ্চলিক ভাষায় প্রশ্নপত্র তৈরির ব্যাপারে এমসিআই চিন্তাভাবনা করছে। আবার কখনও জানিয়ে দিয়েছেন, অভিন্ন প্রবেশিকায় পাশ না-করা কোনও চিকিৎসককে রেজিস্ট্রেশন দেবে না এমসিআই।
এক সময় মনে হচ্ছিল, অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসতেই বুঝি অনীহা রয়েছে এ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু আলোচনা যতই এগোতে লাগল, বোঝা গেল, আপত্তি অন্য জায়গায়। পরীক্ষায় প্রশ্নের মাধ্যম কী হবে, সেই বিষয়ে মতৈক্য হওয়ার আগেই এমসিআই তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়াতেই উঠেছে আপত্তি। এমসিআই কেন এত তাড়াহুড়ো করতে গেল, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের ব্যাপারে এমসিআইয়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও যে রাজ্যের আপত্তি রয়েছে, এ দিনের আলোচনাসভায় তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
ইতিমধ্যে আদালতের কাছ থেকে স্থগিতাদেশ পেয়ে গিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্র। তার পরেও এমসিআই এমন গোঁ ধরে আছে কেন?
অশোকবাবুর ব্যাখ্যা, “এই পরীক্ষা নেবে সিবিএসই। আপাতত তারা ইংরেজি আর হিন্দিতেই প্রশ্ন করবে। পরবর্তী কালে অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় প্রশ্নপত্র তৈরির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে। তা ছাড়া সংক্ষিপ্ত উত্তর-ভিত্তিক প্রশ্ন হবে। ভাষাটা সমস্যা হবে না।”
মঞ্চে বসা রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান ভাস্কর গুপ্ত এ বার তাঁর হতাশা প্রকাশ করে ফেললেন। বললেন, “পাঁচ মাস বাদে পরীক্ষা। অথচ কী ভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে, কী কী বিষয় থেকে প্রশ্ন থাকবে কিচ্ছু জানানো হচ্ছে না আমাদের। আপনারা গ্রামের ছেলেদের ডাক্তার করে গ্রামে পাঠাতে বলেন। গ্রামের ছেলেরা যদি মাতৃভাষায় প্রশ্ন না-পায়, পরীক্ষায় পাশ করবে কী করে?” ভাস্করবাবু পাঠ্যক্রম নিয়েও আপত্তি তোলেন। তিনি বলেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, পরীক্ষার পুরো পাঠ্যক্রমটা সিবিএসই-র পাঠ্যক্রম ঘেঁষা। আমাদের পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডের ছেলেরা তা হলে কী করবে?”
অশোকবাবু আশ্বস্ত করে বলেন, “সিবিএসই-র পাঠ্যক্রমের সঙ্গে এর যোগ নেই। প্রতিটি রাজ্যের বোর্ডের কথা মাথায় রেখেই প্রশ্ন হবে।” কিন্তু সেই আশ্বাসে সন্তুষ্ট হননি সুকুমার মুখোপাধ্যায়, কুণাল সরকার, অমিত ঘোষ, সুবীর দত্ত, সুব্রত মৈত্রের মতো চিকিৎসকেরা। তাঁদের প্রশ্ন, সিবিএসই-তে উদ্ভিদবিদ্যা বেশি আছে। অথচ রাজ্য বোর্ডে বেশি আছে প্রাণিবিদ্যা। কী ভাবে পাঁচ মাসে এই নতুন পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সড়গড় হবে ছাত্রছাত্রীরা?”
অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস বা পিজিআই চণ্ডীগড়ের মতো সংস্থাকে সামনের বছর এই পরীক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে না। এই বৈষম্য কেন, সেই প্রশ্নও ওঠে সভায়। দাবি ওঠে, পশ্চিমবঙ্গকেও সময় দেওয়া হোক। বাংলা সময় পাবে না কেন? জবাব ছিল না এমসিআই-কর্তার কাছে। তাঁর সামনেই রাজ্য বুঝিয়ে দিল, সাত দিনের মধ্যে এমসিআই তাদের সিদ্ধান্ত না-বদলালে পশ্চিমবঙ্গ আদালতে যাবে। ফয়সালা হবে সেখানেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.