শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের পরে এ বার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। অভিযোগ, প্রসব বেদনা ওঠার পরেও এক প্রসূতিকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়নি। রাতভর যন্ত্রণা ভোগের পরে বৃহস্পতিবার সকালে অনু বাগ (২৬) নামে ওই মহিলার মৃত্যু হয়। তিনি মেমারির পাল্লা সাহাপুরের বাসিন্দা। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ জানিয়ে এ দিনই হাসপাতাল সুপারের কাছে চিঠি লিখেছেন তাঁর দাদা সুবোধ মালিক। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “আমরা অনুর বাড়ির লোকেদের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি যথেষ্ট গুরুতর। গুরুত্ব দিয়েই এই অভিযোগের তদন্ত করা হবে।”
সুবোধবাবুর অভিযোগ, বুধবার সকাল আটটা নাগাদ তাঁর বোনের প্রসববেদনা শুরু হলে তাঁকে ওই হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু প্রসবযন্ত্রণা ক্রমে অসহ্য হয়ে উঠলেও অনুদেবীকে লেবার রুম নিয়ে যাওয়া হয়নি। এর পরে বাধ্য হয়ে তিনি নিজে হেঁটে সেখানে গেলেও তাঁকে বলে দেওয়া হয়, ‘প্রসবের সময় হয়নি’। সুবোধবাবুর দাবি, পরে তাঁদের ওয়ার্ডের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা নাগাদ যন্ত্রণায় মৃত্যু হয় অনুদেবীর। তাঁর কথায়, “নার্সরা সাহায্য করলে হয়তো অনু আর ওর সন্তান বেঁচে যেত। কী হল, কিছুই পরিষ্কার জানতে পারলাম না।” |
দিন কয়েক আগে, ওয়ালশ হাসপাতালে প্রসবের সময় মারা যায় রিষড়ার বাসিন্দা সুনীতা সাউয়ের সদ্যোজাত শিশুটি। অভিযোগ ওঠে, গর্ভস্থ সন্তান প্রায় অর্ধেক বেরিয়ে এসেছে, এমন অবস্থায় প্রায় দু’ঘণ্টা লেবার রুমের সামনেই কাটাতে হয় প্রসূতিকে। চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করলেও সাড়া দেননি কেউ। শেষে গত শনিবার ভোরে লেবার রুমের বাইরেই নার্সরা তাঁর প্রসব করান। মৃত্যু হয় শিশুটির।
এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ঘটনার পরে স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক ওই হাসপাতালে যান। শুরু হয়েছে তদন্ত। অথচ, ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই অনুরূপ ঘটনা ঘটে গেল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
বৃহস্পতিবার সকালে অনুদেবীর দিদি পূর্ণিমা মালিক ও বৌদি অপর্ণা মালিক অভিযোগ করেন, “বুধবার রাতে আমাদের ওই বিভাগের ভিতরে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। সারা রাত কোনও খোঁজ পাইনি অনুর। শেষে সকাল সাতটা নাগাদ আমাদের প্রসূতি ঘরে ঢুকিয়ে বলা হয়, তোমাদের রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। দেখি, অনুর প্রচণ্ড খিঁচুনি হচ্ছে। এর পরে আমাদের বলা হয়, অনুর মরা মেয়ে হয়েছে। কিন্তু সেই মৃত বাচ্চাকেও আমাদের দেখতে দেওয়া হয়নি। আমাদের তো সন্দেহ, অনুর শিশুটিকেও বদলে দেওয়া হয়েছে। তাই জীবিত শিশুর কথা চেপে গিয়ে আমাদের মরা বাচ্চার কথা বলা হচ্ছে।” শিশুটির মৃতদেহ কেন অনুদেবীর পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হল না, তা নিয়ে কোনও পরিষ্কার উত্তর দিতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। |