সমস্যাপ্রবণ অঞ্চলে গেলে পরে সুবিধা
ডাক্তার ধরে রাখতে ‘লোভনীয়’ বদলি-নীতি
ক দিকে সরকারি হাসপাতালে বহু চিকিৎসকের পদ খালি, ফলে পরিষেবা ধুঁকছে। অন্য দিকে শূন্য পদ পূরণ তো দূরের কথা, চাকরি ছাড়ার হিড়িক পড়েছে সরকারি ডাক্তারদের মধ্যে।
এই পরিস্থিতিতে জেরবার স্বাস্থ্য দফতর আপাতত সমস্যা মোকাবিলায় চিকিৎসকদের ‘মনোবল’ বাড়ানোয় বেশি জোর দিচ্ছে। এর প্রথম ধাপ হিসেবে কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে সরকারি ডাক্তারদের বদলি-নীতিতে।
এবং প্রক্রিয়াটির সূচনা হচ্ছে মূলত জঙ্গলমহল দিয়ে। কী ভাবে?
স্থির হয়েছে, টানা দু’বছর কোনও ডাক্তার জঙ্গলমহলের সরকারি হাসপাতালে কাজ করলে সরকার নিজে থেকেই তাঁকে ফিরিয়ে আনবে, বদলির কোনও আবেদন করতে হবে না। চিকিৎসকেরা যাতে একে স্রেফ ‘কথার কথা’ না-ভাবেন, সে জন্য রীতিমতো লিখিত ভাবে এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি তিন বছর কোনও ‘সমস্যাপ্রবণ’ (ডিফিকাল্ট) জেলায় যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের জন্য স্নাতকোত্তরস্তরে ডিপ্লোমা ও ডিগ্রি কোর্সে যথাক্রমে ৫০% ও ৪০% আসন সংরক্ষিত থাকবে। স্বাস্থ্য-কর্তাদের ব্যাখ্যা: বদলি মানে যে নির্বাসন নয়, ডাক্তারদের সামনে তা স্পষ্ট করে দিতে চাইছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কারণেই দূরে বদলি হলেও দ্রুত ফিরিয়ে আনার নিশ্চয়তা ও স্নাতকোত্তরে ভর্তিতে বাড়তি সুবিধাদানের (ইনসেনটিভ) সিদ্ধান্ত।
এবং দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) আগে সম্মতি দিলেও এ রাজ্যে এত দিন তা চালু ছিল না। স্বাস্থ্যভবনের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনের পরে এতে কোনও বাধা আর নেই। নম্বরেও ৩০% পর্যন্ত ‘গ্রেস’ দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে, যে দাবি নিয়ে ডাক্তারদের একটা অংশ আন্দোলনে নেমেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা সেই ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠীকেও শান্ত করবে বলে স্বাস্থ্য-কর্তাদের আশা।
রাজ্যের স্বাস্থ্য-সচিব সঞ্জয় মিত্র বলেন, “জঙ্গলমহলে স্বাস্থ্য-পরিষেবার হাল ফেরাতে আমরা বদ্ধপরিকর। এক সঙ্গে ৪৭ জনকে ওখানকার বিভিন্ন হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। জায়গা নিয়ে কারও যাতে কোনও অভিযোগ না-থাকে, সে জন্য আমরা লিখিত ভাবে জানিয়েছি, দু’বছরের মধ্যে তাঁদের ফিরিয়ে আনব। কেউ নিজেই থেকে যেতে চাইলে তাঁকে আলাদা ভাবে আবেদন করতে হবে।”
পূর্বতন বাম সরকারের আমলেও চিকিৎসক নিয়োগে ‘ডিফিকাল্ট জোন’ চিহ্নিতকরণের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এত খুঁটিয়ে কাজটা করা হচ্ছিল যে, সেই উদ্যোগ দিনের আলো দেখেনি। নতুন সরকার অবশ্য যথেষ্ট তাড়াতাড়িই ‘সমস্যাপ্রবণ’ এলাকা চিহ্নিত করে ফেলেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে ‘তড়িঘড়ি’ করতে গিয়ে কিছু প্রশ্নেরও অবকাশ থেকে গিয়েছে বলে স্বাস্থ্য-দফতরের এক সূত্রের মন্তব্য। চিহ্নিতকরণ হয়েছে কী ভাবে?
চিকিৎসক বদলির ক্ষেত্রে রাজ্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে ‘ডিফিকাল্ট জোন।’ তার পরে কেএমডিএ এলাকার আশপাশের জেলা। তৃতীয় ভাগে কেএমডিএ এলাকা। স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: যোজনা কমিশনের একটি রিপোর্ট ধরে উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলা, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম মহকুমার সমস্ত ব্লক, দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা-বাসন্তী-সাগর-পাথরপ্রতিমা, বাঁকুড়ার খাতরা মহকুমার সমস্ত ব্লক এবং উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির কয়েকটি ব্লককে ‘সমস্যাপ্রবণ’ বলা হয়েছে।
এগুলো কী অর্থে সমস্যাপ্রবণ?
স্বাস্থ্য-কর্তাদের ব্যাখ্যা: আর্থিক ভাবে অনগ্রসর ও যাতায়াতের নিরিখে দুর্গম জেলার পাশাপাশি নিজের বাড়ি থেকে ভৌগোলিক ভাবে দূরের জায়গাকেও ‘ডিফিকাল্ট’ বলা হচ্ছে। কারণ অভিজ্ঞতা বলছে, যে চিকিৎসক যেখানে থাকেন, সেখান থেকে অন্যত্র পাঠালেই তাঁর নানা ওজর-আপত্তি শুরু হয়।
তবে দূরে গিয়ে তিন বছর কাজ করলে যদি বিশেষ সুযোগ-সুবিধা মেলে, তা হলে আপত্তি অনেকটাই কমবে বলে স্বাস্থ্য-কর্তাদের আশা। এক কর্তার কথায়, “এখনকার বদলি-নীতিটি ২০০১-এ চালু হয়েছিল। এতে বিস্তর ভুল-ভ্রান্তি। বহু ডাক্তারকে দূরের জেলায় পাঠিয়ে বছরের পর বছর ফেলে রাখা হয়েছে। মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েও স্বামী-স্ত্রীর চাকরির এলাকাকে কাছাকাছি রাখার চেষ্টা হয়নি। ফলে চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।”
এই সমস্যাগুলো মাথায় রেখেই নতুন বদলি-নীতি তৈরি হয়েছে বলে দফতরের দাবি। কর্তাদের বক্তব্য: এই মুহূর্তে রাজ্যে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার চিকিৎসকের পদ শূন্য। বদলির কারণে চাকরি ছাড়ার প্রবণতা বাড়লে অবস্থা হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই ডাক্তারদের সরকারি চাকরিতে ‘অনুপ্রাণিত’ করাটা ওঁদের গুরুত্ব- তালিকার উপরেই থাকছে।
উল্লেখ্য, নতুন সরকার গঠনের পরে গত পাঁচ মাসে ছ’জন ডাক্তারকে সাসপেন্ড করেছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রতিটা ক্ষেত্রেই অভিযোগ গুরুতর। যদিও এতে সরকারি চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যে কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ দিকে স্বাস্থ্য-কর্তাদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ: শৃঙ্খলা ভাঙলে শাস্তি পেতে হবেই। কিন্তু এ-ও দেখতে হবে, তা যেন চিকিৎসকদের মনোবল না-নষ্ট করে। অতএব, আপাতত ‘নরমে-গরমে’ রাখার নীতিই চালু থাকবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.