মাওবাদীদের সঙ্গে সামিল ছত্রধরও
মমতার পঞ্চায়েত মডেলে আপত্তির ‘বার্তা’ কংগ্রেসের
জেলাস্তরে সরকারি কর্মীদের দিয়ে পঞ্চায়েতে মনিটরিং ব্যবস্থার যে মডেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করতে চাইছেন, তা ‘মনঃপূত’ নয় রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের। আগামী রবিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের পঞ্চায়েতি-রাজ সম্মেলনে ‘আমলাতান্ত্রিক’ সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজেদের ‘আপত্তি’র কথা জানিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রে শরিক দল তৃণমূলকে ‘বার্তা’ দিতে চান তাঁরা।
জেলাস্তরে যে কোনও কেন্দ্রীয় বা রাজ্য প্রকল্পের কাজে নজরদারি করার জন্য ত্রিস্তরীয় প্রশাসনিক কমিটি বা ডেভেলপমেন্ট মনিটরিং কমিটির হাতে যাবতীয় দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্লকস্তরে এই কমিটির প্রধান বিডিও-রা। মহকুমাস্তরে এসডিও-রা। গত ৯ নভেম্বর এ বিষয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে। এখানেই আপত্তি কংগ্রেসের। প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে সরকারি অফিসারদের। আঞ্চলিক কোনও প্রতিনিধি রাখার সংস্থান নেই সরকারি ওই নির্দেশিকায়। কংগ্রেসের দাবি, সরকারি অফিসারদের পাশাপাশি অন্তত দু’এক জন স্থানীয় নির্বাচিত ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হোক। দলের তরফে এই দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “মনিটরিং কমিটিতে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি না থাকলে সরকারি অফিসাররা বিভিন্ন প্রকল্প-সংক্রান্ত নথিপত্র বা রিপোর্ট কোথা থেকে পাবেন? এই মনিটরিং ব্যবস্থার পুনর্গঠন হওয়া প্রয়োজন। পঞ্চায়েতের প্রসার নষ্ট হয়, এমন সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না বলেই মনে করি।” একইসঙ্গে তাঁর অভিযোগ, “জেলা পরিষদগুলি আর্থিক দৈন্যে ধুঁকছে। নিজেদের আর্থিক সঙ্কট সামলে সরকার জেলা পরিষদগুলির আর্থিক পুনরুজ্জীবনে নজর দিলে ভাল হয়।”
জোট সরকারের বয়স এখনও ছ’মাস হয়নি। কিন্তু এর মধ্যেই বিভিন্ন প্রশ্নে দুই শরিকের ‘মতান্তর’ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে পঞ্চায়েতি-রাজ সম্মেলন আয়োজন করে একদিকে সব জেলার কর্মীদের ‘উদ্বুদ্ধ’ করতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। পাশাপাশি শরিক দল হিসেবে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নিজেদের মতকেও কিছুটা ‘জাহির’ করতে চাইছেন তাঁরা। প্রদীপবাবুর কথায়, “জোট থাকুক, এটাই চাই। একইসঙ্গে যে জায়গাগুলোয় দলের অস্তিত্ব কমে গিয়েছে, পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সেখানে মানুষের কােছে পৌঁছতে চাই। দলের শক্তি বাড়াতে চাই।” রবিবারের সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ, এআইসিসি-র তরফে প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ, বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী প্রমুখের। প্রসঙ্গত, অধীর ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে ওই মডেলের সমালোচনা করেছেন।
পঞ্চায়েতের মডেল নিয়ে আপত্তি জানানোর পাশাপাশি অন্যান্য কয়েকটি বিষয়েও দু’দলের মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসছে। কংগ্রেস কর্মীদের উপর তৃণমূলের একের পর এক ‘হামলা’ ও তাঁদের ‘হেনস্থা’র প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার হাজরা মোড় থেকে গাঁধী মূর্তি পর্যন্ত যুব কংগ্রেস মৌনী মিছিল করবে বলে জানান সংগঠনের সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম বেনজির নূর। ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে ওই মিছিলের শুরুর স্থল হাজরা মমতার খাসতালুক। আর মিছিল শেষ হবে সেই গাঁধী মূর্তির পাদদেশে, যা মমতারই বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য পরিচিত। এমনকী, ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে নিজের দল তৃণমূল তৈরির সময়ও মমতা সেখানেই সমাবেশ করেছিলেন। কংগ্রেসেরই একাংশের মতে, তৃণমূলনেত্রীকে ‘বার্তা’ দিতেই সচেতন ভাবে মৌসম ওই মিছিলের জন্য হাজরা এবং গাঁধী মূর্তিকে বেছেছেন। দলের অনেকে অবশ্য মৌসমের মতো এ ভাবে সরাসরি ‘সংঘাত’-এর পথে না হেঁটে মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনারই পক্ষে।
জেলায় জেলায় কংগ্রেস ও তৃণমূল দু’তরফই যে ভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে পারস্পরিক হামলার অভিযোগ আনছে, তাতে ‘জোট’-এর উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতার উপর হামলার অভিযোগ রয়েছে গার্ডেনরিচের কুখ্যাত অপরাধী মহম্মদ মোক্তারের বিরুদ্ধে। তাঁকে কংগ্রেস দলে নেওয়ায় ‘ক্ষুব্ধ’ তৃণমূল। কেন এ ভাবে সিপিএম ‘আশ্রিত’ অপরাধীদের কংগ্রেস দলে নিচ্ছে ও তাদের উপর হামলা হচ্ছে, তা জানতে চেয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় চিঠি দিয়েছেন প্রদীপ ভট্টাচার্যকে। সেই চিঠিরও ‘কড়া জবাব’ দেওয়া হবে বলে প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রের খবর। বিধানসভা ভোটে জোটের বিরুদ্ধে লড়ায় কংগ্রেস রাম পিয়ারি রাম ও খালেক মোল্লাকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছিল। মুকুলবাবুর প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেস নেতৃত্বের পাল্টা প্রশ্ন, সেই রাম ও খালেককে তৃণমূল কেন দলে নিল?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.