মমতাকে ‘জবাব’ দিয়েও সাহায্যে রাজি সিপিএম
মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের সঙ্গে সব রকম ‘সহযোগিতা’ করতে চায় রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম।
ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূল মাওবাদীদের সম্পর্কে মনোভাব ‘পরিবর্তন’ করলে তাকে স্বাগত জানানোর কথা বুধবারই বলেছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের পরে বৃহস্পতিবার গৌতম দেব বলেন, “মাওবাদী দমনে রাজ্য সরকার সত্যিই আন্তরিক হলে সিপিএম সব রকম সহযোগিতা করবে।” মাওবাদী মোকাবিলা নিয়ে রাজ্য সরকারকে সর্বদল বৈঠক ডাকার প্রস্তাবও দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “সরকার যদি কোনও বৈঠক ডাকে, সেখানে সিপিএমের প্রতিনিধিরা যাবেন এবং কী ভাবে মাওবাদী সমস্যার মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে প্রস্তাবও দেবে।”

বস্তুত, মাওবাদী মোকাবিলায় তারা যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলতে প্রস্তুত, বিরোধী আসনে বসার পর থেকেই সেই কথা বলে আসছে সিপিএম। মাওবাদীদের হাতে নিহত দুই তৃণমূল কর্মীর মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ড ঘটিয়েছিল মাওবাদীরা। অথচ গত বছর পুরভোটের আগে ওই ঘটনায় সিপিএমের ‘অন্তর্ঘাতে’র অভিযোগ এনে তৃণমূলের তরফে প্রচার চালানো হয়েছিল। এক দিকে যেমন মমতা ‘অবস্থান বদল’ করেছেন বলে সিপিএম সরব হয়েছে, তেমনই মুখ্যমন্ত্রীও অভিযোগ করছেন, সিপিএমের ‘সশস্ত্র দুষ্কৃতী’দের মদত মাওবাদীরা পাচ্ছে। সরকারের এমন অভিযোগের ‘জবাব’ দিয়েও সিপিএম দেখাতে চায়, মাওবাদী সমস্যাটিকে তারা ‘লঘু’ করে দেখছে না। যা বিরোধী নেত্রী থাকার সময় মমতা করেছিলেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের জবাব দেওয়ার পাশাপাশিই সরকারের সঙ্গে ‘সহযোগিতা’র কথা সামনে আনছে সিপিএম। আলিমুদ্দিন মনে করছে, এতে ‘বৃহত্তর জনস্বার্থ’ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই দলের ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ও হয়।
‘‘তৃণমূল কর্মী খুন হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী হয়তো
ভুল বুঝতে পেরেছেন। তিনি মাওবাদী দমনে
সক্রিয় হলে আমরা সহযোগিতায় প্রস্তুত।
’’
গৌতম দেব
জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে মমতার আগেকার বক্তব্যের জন্য ‘ক্ষমা’ চাওয়ার দাবি ইতিমধ্যেই তুলেছে সিপিএম। মাওবাদী সমস্যা নিয়ে এ দিন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আলোচনা হয়। সেখানেই ঠিক হয়েছে, মমতার বক্তব্য বদল নিয়ে সিপিএম রাজনৈতিক ভাবে প্রচার করবে। কিন্তু বিষয়টি আঁকড়ে পড়ে থেকে মমতার মাওবাদী-বিরোধিতার নীতিকে কটাক্ষ করবে না। বরং, মমতা যাতে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর’ অবস্থান নেন, তার জন্য ‘চাপ’ সৃষ্টি করবে।
রাজ্যে মাওবাদী সমস্যা এবং তার মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কী করছে, তা নিয়ে বুধবারই কারাটের সঙ্গে কথা হয়েছিল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর। বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার সময়ে মাওবাদীদের হাতে শতাধিক সিপিএম কর্মী খুন হয়েছেন। এখনও অনেকে গ্রামছাড়া। তখন মমতা সিপিএমের বিরুদ্ধে অনেক কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু এই ব্যাপারে সিপিএম পিছনের দিকে তাকাতে চায় না। দলের এক নেতার কথায়, “মমতার বিরোধিতা করতে গিয়ে মাওবাদীদের ব্যাপারে কোনও নরম মনোভাব দেখানো হলে চরম ভুল হবে। মাওবাদী-সমস্যা গোটা দেশের বিপদ। রাজনৈতিক ভাবে এর মোকাবিলা করতেই হবে।”
গৌতমবাবু বলেন, “তৃণমূল জোট ক্ষমতায় আসার পরে যৌথ বাহিনীর অভিযান কার্যত বন্ধ থাকায় মাওবাদীরা আবার সক্রিয় হয়েছে। মাওবাদীদের হাতে তৃণমূলকর্মীরা খুন হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী হয়তো তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছেন। মমতা পুরনো অবস্থান ঝেড়ে ফেলে মাওবাদী দমনে সক্রিয় হলে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আমরা সহযোগিতায় প্রস্তুত।” এ ব্যাপারে সিপিএম কি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেবে? গৌতমবাবু বলেন, “বুধবার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র যা বলেছেন, তাতে স্পষ্ট, আমরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাই। এখন রাজ্য সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবে কি না, তা সরকারের ব্যাপার।”
সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার জানান, মাওবাদীরা মেদিনীপুর শহরের খুব কাছেই ‘সক্রিয়’ হয়ে উঠেছে। এটা সিপিএমের পক্ষেও বিপদ। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও মনে করেন, তৃণমূলের নীতি ও রাজনীতির বিরোধিতার পাশাপাশি সমান ভাবে মাওবাদীদের বিরোধিতাও চালিয়ে যাওয়া উচিত। বস্তুত, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরা প্রায় সকলেই এই মতে বিশ্বাস করেন। ১৯৬৭-৭২ পর্যন্তও একই ভাবে কংগ্রেস এবং নকশালপন্থীদের বিরোধিতা করেছিল সিপিএম।
মাওবাদী-সমস্যার ফলে জঙ্গলমহলের বহু লোকাল কমিটির সম্মেলন করতে গিয়ে সিপিএম সমস্যায় পড়েছে। মাওবাদী প্রভাবিত বহু জায়গাতেই দলের কর্মীরা প্রকাশ্যে কাজ করতে পারছেন না। রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, রাজ্য সরকার মাওবাদী দমনে ‘সক্রিয়’ হলে আগামী দিনে সিপিএম কর্মীরা ভয় ভেঙে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পেতে পারেন। তাই দলের জেলা নেতৃত্বকেও আলিমুদ্দিন জানিয়ে দেবে, রাজ্য সরকার মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে জেলা পার্টি যেন হাত গুটিয়ে বসে না-থাকে।
তবে ‘সহযোগিতা’ করলেও বিরোধী থাকার সময়ে তৃণমূলের সঙ্গে মাওবাদীদের যে ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ ছিল, রাজনৈতিক কারণেই সিপিএম তা নিয়ে প্রচার করবে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, “মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলায় আমরা আন্তরিক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীরও তাঁর ভুল স্বীকার করা উচিত।” সেলিমের কথায়, “বহু তৃণমূল কর্মীই মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। তাঁরা দিনে তৃণমূল, রাতে মাওবাদী করতেন। এলাকা দখলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তারা ভয় দেখিয়ে সিপিএম কর্মীদের গ্রাম ছাড়া করেছে। খুন করেছে। এদের বিরুদ্ধেও রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.