জঙ্গলের জন্মদিনে খুদেরা পেল পুতুল হাতি
টুম্পা, বুবুন, রিমঝিমদের জন্মদিন পালন করা হয়। পালন করা হয় পোষ্য পশুরও জন্মদিন। তাবলে জঙ্গলের জন্মদিন পালন!
বৃহস্পতিবার এমন ঘটনাই ঘটল। মানবাজারের ঝাড়বাগদা জঙ্গলের জন্মদিন পালন করা হল। ‘জঙ্গলের বন্ধু’ কয়েকশো শিশুকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তাদের পুতুল হাতি উপহার দেওয়া হল। জাপানের একটি সংস্থা এই উপহারগুলি পাঠিয়েছে।
সংস্থার পটমদা এলাকার দায়িত্বে থাকা প্রকল্প আধিকারিক নন্দলাল বক্সী জানান, আগে এই এলাকা ঝাড়বাগদার পাহাড় নামে পরিচিত ছিল। ন্যাড়া পাহাড়। চারদিক ধূ ধূ ফাঁকা এলাকা। ১৯৯৯ সালে এই এলাকার প্রায় ৩০০ একর জায়গা জুড়ে তাঁরা বনসৃজন শুরু করেন। গত এক দশকে সেই ফাঁকা এলাকা এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। নাম বদলে গিয়েছে এলাকার। কেউ আর ঝাড়বাগদার পাহাড় বলেন না। বলেন, ঝাড়বাগদার জঙ্গল।
নিজস্ব চিত্র
এই জঙ্গলেরই জন্মদিন পালন করা হল। অনুষ্ঠানে ছয়টি প্রাথমিক ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের কয়েকশো পড়ুয়াকে ডাকা হয়েছিল। জাপান থেকে তাঁদের জন্য তিন হাজার পুতুল হাতি পাঠানো হয়েছিলেন। খুদেদের হাতে সেই পুতুল তুলে দেওয়া হল। কারণ তাঁরা যে জঙ্গলের বন্ধু! নন্দলালবাবু বলেন, “জাপানের ওই সংস্থার আর্থিক সহায়তায় বনসৃজন করা হয়েছিল। তাঁরা এই এলাকা ঘুরে খুশি হন। জঙ্গলের জন্মদিন পালন করার জন্য তাঁরা স্থানীয় পড়ুয়া শিশুদের জন্য তিন হাজার পুতুল হাতি পাঠিয়েছেন।” তিনি জানান, হাতিরা জঙ্গলে থাকে। শিশুরা হাতিদের পছন্দ করে। তাই হাতিদের জন্য জঙ্গলের যে প্রয়োজন, সেই বোধ এই শিশু অবস্থায় ওদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া দরকার। ফলে তাঁরা জঙ্গলকে ভালবাসবে। বনসৃজনে আগ্রহী হবে।
কাপড়ের হাতি পুতুল পেয়ে বেজায় খুশি স্নিগ্ধা মহান্তী, প্রণব রাজোয়াড়, উত্তম মহান্তীরা। সংস্থার মতে, সকলেরই তো জন্মদিন পালন করা হয়। জঙ্গলের জন্মদিন পালন করা হয় না। জঙ্গলের জন্মদিন পালন করে এই জঙ্গলকে রক্ষা করার বার্তাই শিশুমনে পোঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হল। নিমন্ত্রণ পেয়েছিলে মানবাজারের বিডিও সায়ক দেবও। তিনি জঙ্গলের ভিতরে খানিকটা পথ ঘোরেন। পরে বলেন, “আগে পাহাড়টা ন্যাড়া ছিল বলে ভাবতেই পারছি না। এক দশকের মধ্যে এই ন্যাড়া পাহাড়ের চেহারা এতটা বদলে যেতে পারে ভাবতে পারছি না! শুনেছি বুনোশুয়োর, খরগোশ, শেয়াল, নানা প্রজাতির পাখি এখন এই জঙ্গলে বাস করছে।” ওই সংস্থার কর্মী প্রহ্লাদ মাহাতো, সুজিত মাহান্তীদের কথায়, “মাঝে মধ্যে হাতিরাও এই জঙ্গল আস্তানার জন্য বেছে নেয়। ২০০৯ সালে ১৯টা হাতি এখানে এসে কিছুদিন ছিল। অনেক আগে হাতিরা এই পথে যাতায়াত করত। এখন আবার তারা পুরনো পথে ফিরে এসেছে।” ওই খুদে পড়ুয়াদের মধ্যে পরিবেশ সর্ম্পকে ভালবাসা তৈরি করার জন্য বিডিও প্রস্তাব দেন, “এই ছোট পড়ুয়াদের নিয়ে পরিবেশ নিয়ে রচনা ও আঁকার প্রতিযোগিতা করা হোক। পুরস্কার আমি দেব।”
শুরুতে ৩০০ একর জায়গাজুড়ে বনসৃজন করা হয়েছিল। এখন সেই জঙ্গলের পরিধি আরও বেড়ে গিয়েছে। কয়েক বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এখন বনাঞ্চল তৈরি হয়েছে। আম, বহড়া, শাল, হরিতকি, কুসুম, আমলকি প্রভৃতি গাছ সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখন এই জঙ্গল থেকে এলাকার প্রায় পাঁচশো পরিবার জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করেন। স্থানীয় বাসিন্দা উমা রাজোয়াড়, পুতুল রাজোয়াড় বলেন, “আগে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে চাঁর-পাঁচ কিলোমিটার দূরে যেতে হত। এখন কাছের এই জঙ্গল থেকেই আমরা শুকনো ডাল-পালা কুড়িয়ে আনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.