নির্বাচনী বিধিতে আটকে গিয়েছে বীজ বিলি। সঠিক সময়ে বীজ বিলি না হওয়ায় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় খেসারি চাষে দেখা দিয়েছে গভীর সঙ্কট।
জমি থেকে ধান কেটে নেওয়ার পর ভিজে মাটিতে বীজ রোপণ করাটাই খেসারি চাষের নিয়ম। কিন্তু নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘিত হবে, এই কারণে বীজ বিলিতে নিষেধজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কারণ, ইতিমধ্যেই দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর ওই উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্র এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ায় সেখানেও নির্বাচনী বিধি বলবৎ করা হয়েছে।
কোনও জনপ্রতিনিধির মাধ্যেমে বীজ বিলি করা যাবে না বলে নির্বাচন কমিশনের তরফে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে বীজ বিলিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা এলাকা ভিত্তিক বেনিফিশিয়ারি কমিটি গড়ে তার মাধ্যমে মরসুমি বীজ বিলি করার ব্যবস্থা করে। এই অবস্থায় খেসারির বীজ বিলি নিয়ে সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে জেলা কৃষি দফতর। ধানজমির মাটি প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার পথে। ক্রমশ আদ্রতা হারাচ্ছে জমি। ভিজে মাটিতে বীজ বপন করার পরই অল্প সেচ ব্যবস্থায় খেসারি চাষ করা হয়। কিন্তু এখন জমি তৈরি থাকলেও চাষির হাতে বীজ পৌঁছয়নি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর আশিস কুমার লাহিড়ী বলেন, “আমরা বিষয়টির গুরুত্ব উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন আমাদের আর্জি মঞ্জুর করেছে। আমরা অতি শীঘ্রই বীজ বিলির ব্যবস্থা করছি।”
কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেও নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে চাষির হাতে বীজ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। বীজ বিলির ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন মূলত পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদের সদস্যদের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিডিও অফিসে চাষিদের নামের তালিকা নেই। প্রাথমিক ভাবে চাষিদের নামের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। তারপরই বীজ বিলি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “স্বাভাবিক ভাবে এই সময় বৃষ্টি কম হয়। ধীরে ধীরে মাটি আদ্রতা হারাতে থাকে। পুকুরে বর্ষার বৃষ্টির জমা জল দিয়ে খেসারি চাষ করা হয়। এ বছর বর্ষার শেষের দিকে খুব কম পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। পুকুর-খাল-বিলের জল কমতে শুরু করেছে। এই মুহূর্তে বৃষ্টির তেমন সম্ভবনা নেই। তাই খেসারি চাষ কী ভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তিত চাষিরা।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে খেসারি চাষ হয়। এই সময় রবি শস্য হিসেবে সর্ষে, মসুর ও খেসারি চাষ করা হয়ে থাকে। সর্ষে ও মসুর চাষ কম পরিমাণে হয়। মূলত শহর লাগোয়া এলাকায় সর্ষে ও মসুর চাষ করা হয়। এ ক্ষেত্রে দেরি হওয়া সত্ত্বেও শহর লাগোয়া এলাকায় উন্নত সেচ ব্যবস্থার মাধ্যেমে মাটির আদ্রতা ধরে রাখা অসম্ভব নয়। বৃষ্টি না হলেও শ্যালো পাম্প চালিয়ে মাটি থেকে জল তুলে জমিতে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে অল্প পরিমাণ জমির ক্ষেত্রে জটিলতার আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন কৃষি আধিকারিকরা। কিন্তু গ্রাম্য এলাকায় মাটির আদ্রতা বজায় রাখতে গেলে শ্যালোর মাধ্যমে জল সেচের ব্যবস্থা সকরতে হবে। সে ক্ষেত্রে জ্বালানির খরচ বাড়বে। স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যাবে চাষের খরচ। এই পরিস্থিতিতে খেসারি চাষে কম ফলনের পাশাপাশি লোকসানেরও প্রবল আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি আধিকারিকেরা। |