ভাইকে চড় মেরেছিল। সেই রাগে বাড়িতে ডেকে পড়শি বালিকাকে ধর্ষণ করে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে এক কিশোরের বিরুদ্ধে। উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থানার গাবরডা পঞ্চায়েতের বৃত্তিপাড়া গ্রামে বুধবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। মৃতার নাম স্বপ্না মণ্ডল (৮)। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তাকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে ১৭ বছরের হরিদাস বিশ্বাস গ্রেফতার হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হরিদাসের বাবা অশোক বিশ্বাস ও মা অণিমাকে আটক করেছে পুলিশ। মৃতদেহ ময়না-তদন্তের জন্য বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “ধৃত কিশোর ও তার বাবা-মাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার বিকেলে এলাকায় লোডশেডিং ছিল। তাই টিভি না দেখে খেলতে বেরোয় স্বপ্না। হরিদাসের ভাই পাঁচ বছরের বিকাশের সঙ্গে খেলা করছিল সে। জেরায় হরিদাস জানিয়েছে, খেলার সময়ে ভাইকে চড় মারে স্বপ্না। সে কথা জেনে বাড়িতে স্বপ্নাকে ডাকে হরিদাস। জোর করে ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে মুখ চেপে ধর্ষণ করে। কোনও রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে স্বপ্না বাইরে বেরিয়ে বাবা-মাকে বলে দেবে বলে জানায়। ফের তাড়া করে স্বপ্নাকে ধরে ঘরে নিয়ে আসে হরিদাস। সেখানে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করার চেষ্টা করে। |
তার পরে হাঁসুয়া দিয়ে বাঁ হাত ও গলায় কোপানো হয়। স্বপ্নার বাবা বাবলু মণ্ডল বলেন, “মেয়ে লোডশেডিং হওয়ায় বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যায় হরিদাসের মা ওকে কোলে করে নিয়ে এসে বলে, ধানের খেতে পড়েছিল। তখনও বুঝতে পারিনি, আমাদের এত বড় সর্বনাশ করে দিয়েছে।” পড়শিরা স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে স্বপ্নাকে নিয়ে যান। চিকিৎসক জানান, দীর্ঘক্ষণ আগেই মারা গিয়েছে স্বপ্না। এর পরেই বাসিন্দাদের রাগ গিয়ে পড়ে হরিদাস ও তার মা অণিমাদেবীর উপরে। হরিদাসকে চড় মারতেই সে ঘটনার কথা কবুল করে। থানায় খবর দেওয়া হয়। রাত এগারোটা নাগাদ পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। হরিদাসকে গ্রেফতার করা হয়।
হরিদাসদের পড়শি মিঠু মিস্ত্রি বলেন, “সপ্তাহখানেক আগে আমার বাড়ি থেকে টাকা চুরি যায়। তখন আমরা হরিদাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু পড়শিদের অনুরোধে থানা-পুলিশ করিনি। হরিদাসের মা-বাবাকে বলেছিলাম। দিনের পর দিন হরিদাস বিগড়ে যাচ্ছে সে কথা ওই পরিবারের সদস্যদের জানিয়েও লাভ হয়নি।” পড়শিদের অভিযোগ, স্বপ্নাকে খুন করার পরে মৃতদেহ বাড়ির চৌকির নীচে লুকিয়ে রেখেছিল হরিদাস। কাছেই সীমান্ত হওয়ায় বিএসএফের টহলের ভয়ে দেহ বাইরে ফেলতে পারেনি। বাড়ি ফিরে তার মা অণিমাদেবী ঘটনা জানতে পেরে দেহ নিয়ে গিয়ে বাবলুবাবুর বাড়িতে দিয়ে আসে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পরে আর পড়াশোনা করেনি হরিদাস। কিছু দিন ধরে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তার মেলামেশা চলছিল। ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি চুরির অভিযোগে স্থানীয় বাসিন্দারা তার দিকেই আঙুল তুলেছিল। তবে কোনও ক্ষেত্রেই কেউই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি। |