গাড়িতে ব্যাজ, ট্রাফিক আইন ভাঙার হিড়িক বারাসতে
রাজনৈতিক দলের একটা ব্যাজ। ব্যস্ততম রাস্তায় ট্র্যাফিক সিগন্যালের তোয়াক্কা না করে গাড়ি চালানোর ‘ছাড়পত্র’ এটাই। গাড়িতে ঝুলিয়ে বা ড্যাশবোর্ডে ফেলে রাখলেই ‘কাজ’ হবে। সিগন্যালকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতে গিয়ে যদি বা কোনও পুলিশকর্মী গাড়ি দাঁড় করান, ভিতর থেকে উত্তর আসতে পারে, “দেখছেন না, জরুরি কাজে যাচ্ছি। নিজের কাজ করুন।” কিংবা, “পার্টির কাজে যাচ্ছি। তাড়া আছে।” ভারী গলায় এই উত্তর শোনার পরে ট্র্যাফিক পুলিশের কনস্টেবলের ঘাড়ে ক’টা মাথা, তাঁরা গাড়ি আটকাবেন কিংবা কেস দেবেন!
উত্তর ২৪ পরগনায় যশোহর রোডে খানিক ক্ষণ দাঁড়ালেই রোজ চোখে পড়বে এমন ব্যাজ লাগানো অসংখ্য গাড়ি। মূলত রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের ব্যাজ লাগিয়েই সিগন্যাল ভাঙার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে জানালেন পুলিশ কর্তারা। কিন্তু কাজটা তো বেআইনি। ‘ভিআইপি’ কিংবা ‘প্রেস’ স্টিকার লাগানো গাড়ি তো বটেই, মন্ত্রী-সান্ত্রীদের গাড়িও ট্রাফিক সিগন্যাল ভাঙতে পারে না।
সিগন্যাল উপেক্ষা করে গাড়ি চালানোর ‘ছাড়পত্র’ এই ব্যাজ। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
জেলা তৃণমূল সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “কিছু ফড়ে দলের নাম ভাঙিয়ে এ সব অপকর্ম করছে। দলীয় ভাবে বিষয়টি আমরা দেখছি। পুলিশকেও বলছি, এ ধরনের অপরাধ করলে ব্যবস্থা নিতে।” তাঁর কথায়, “প্রোটোকল ভেঙে বেরিয়ে এসে মুখ্যমন্ত্রী নিজে যেখানে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিতে অস্বীকার করছেন, সেখানে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।”
কী পরিস্থিতি যশোহর রোডের?
বারাসতের চাঁপাডালির মোড়ে সিগন্যাল না মেনে বেরিয়ে যাচ্ছিল একটি গাড়ি। দাঁড় করালেন কর্তব্যরত ট্রাফিক কনস্টেবল। কাচ নামিয়ে গাড়ির সামনে বসে থাকা আরোহী বললেন, “এটা দেখতে পাচ্ছেন না?” ইঙ্গিত, চালকের পাশে ঝোলানো তে-রঙা ব্যাজটার দিকে। পুলিশ কর্মীকে ধমকে সওয়ারি বললেন, “দেখছেন না জরুরি কাজে যাচ্ছি।” কাঁচুমাচু মুখে পুলিশ কর্মীটি আমতা আমতা করে বললেন, “না মানে, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তো, তাই। সাবধানে যাবেন।” গাড়ির কালো কাচ তুলতে তুলতে আরোহীটি বললেন, “ঠিক আছে, ঠিক আছে। নিজের কাজ করুন।” সিগন্যালে আটকে থাকা গাড়িগুলিকে পিছনে ফেলে হুস করে বেরিয়ে গেল ব্যাজঝোলা গাড়িটি।
সকাল ৯টার পর থেকে বারাসতের ডাকবাংলো মোড়ে ঘণ্টা দু’য়েক দাঁড়িয়ে ২৭টি গাড়িকে এমন ব্যাজ ঝুলিয়ে দ্রুত গতিতে চলে যেতে দেখা গেল। তা-ও শুধু যশোহর রোড ধরে কলকাতাগামী এক দিকের রাস্তায়। ব্যাজ লাগানো কিছু গাড়ি মানল না ট্রাফিকের নিয়ম। কিছু গাড়ি আবার সিগন্যালে আটকে একটানা হর্ন বাজাতে লাগাল। দেখা গেল, ব্যাজ লাগানো কোনও গাড়ি সিগন্যাল ভেঙে বেরিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার যানজটে পড়লে উল্টো দিকের রাস্তা ধরে নিচ্ছে।
ব্যাজ লাগানোর নানা ব্যাখ্যা মিলল সওয়ারিদের কাছে। কেউ বললেন, দলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। গাড়িতে থেকে গিয়েছে। কিন্তু গাড়ির ভিতরে তা ঝোলানো কেন, প্রশ্ন করলে কেউ-কেউ হেসে চাপা স্বরে বললেন, “বোঝেনই তো! রাস্তায় পুলিশের ঝুট-ঝামেলা এড়ানো যায়।” ব্যাজ ঝোলানো এমনই একটি গাড়ির মালিক জনৈক বিমল মণ্ডল আবার ট্র্যাফিকেরই এক ইন্সপেক্টরের নাম করে বললেন, “উনি আমার বাড়িতে থাকেন। বলেছেন ব্যাজটা ঝুলিয়ে রাখতে। তা হলে পথেঘাটে সমস্যা কম হবে।” সেই অফিসারকে ফোন করা গেল। লজ্জিত গলায় বললেন, “আমি ওঁর বাড়িতে ভাড়া থাকি। ব্যাজটি খুলে ফেলতে বলে দিচ্ছি।”
কী বলছেন পুলিশ কর্তারা? উত্তর ২৪ পরগনা ট্রাফিক পুলিশের ডেপুটি সুপার সমরেন্দ্র দাশ বলেন, “কিছু ট্র্যাভেল এজেন্সিও এ ভাবে ব্যাজ ঝুলিয়ে ঘুরছে। অনেক সময়ে নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের কেউ-কেউ চোটপাট করে বেরিয়ে যায়। তবে এ ব্যাপারে অবিলম্বে পদক্ষেপ করা হবে।” খাস কলকাতায় ঢুকে ব্যাজ দেখিয়ে পার পাওয়া যাবে না বলে বিলক্ষণ জানেন আইনভঙ্গকারীরা। কলকাতায় ঢোকার আগে বিধাননগর মোড়ের কাছে কিছু গাড়ি থেকে ব্যাজ খুলে ফেলা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ভাবে ট্র্যাফিক সিগন্যাল অমান্য করা পুরোপুরি বেআইনি কাজ বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের ডিসি ট্র্যাফিক দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “অনেক সময়ে কিছু গাড়ি কলকাতা ঢোকার পরে ব্যাজ, পতাকা খুলে ফেলে। আইন না মানলে পতাকা-ব্যাজ থাকলেও গাড়ি আটকাবার নির্দেশ আছে আমাদের।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.