আশপাশের স্কুলে বাৎসরিক পরীক্ষা শেষ। কিন্তু প্রতাপগঞ্জ জুনিয়ার হাইস্কুল? চার-চারটে ক্লাশ একা সামলে স্পষ্টতই বিধ্বস্ত স্কুলের এক মাত্র শিক্ষিকা জ্যোৎস্না রায় বলছেন, “আমার কি সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে?”
ধুলিয়ানের ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কী বলছেন? গত ১৩ সেপ্টাম্বর থেকে স্কুলে না আসা ওই শিক্ষক মহান দাস বৃহস্পতিবার আচমকা স্কুলে এসেই অবশ্য ‘ধরা’ পড়ে গেলেন অভিভাবকদের বিক্ষোভের ঘেরাটোপে। দীর্ঘ ‘স্কুল-কামাই’ শুধু নয়, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ পোশাকের টাকাও ‘আত্মসাৎ’ করে বসে আছেন তিনি। এমনই অভিযোগ। তবে বিক্ষোভের মুখে পড়ে ওই শিক্ষক অবশ্য এ দিন হাত জোড় করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “এ বার থেকে নিয়মিত স্কুলে আসব। ছেলেমেয়েদের স্কুলের পোশাকের টাকাও ২৬ নভেম্বরের মধ্যে ফেরত দেওয়া হবে।”
২০০৮ সালে অনুমোদন পাওয়া ওই জুনিয়ার হাইস্কুলটি চলছে গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলায়। এক তলায় চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। জুনিয়ার হাইস্কুলটির অচলাবস্থা নিয়ে গত এক সপ্তাহে একাধিকবার স্কুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন গ্রামবাসীরা। শিক্ষিকা জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “পঞ্চম থেকে অষ্টম, ৪টি ক্লাসে প্রায় ২০০ ছাত্রছাত্রী। খাতা কলমে ২ জন শিক্ষক থাকলেও ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রায়ই স্কুলে আসেন না। ফলে ৪টি ক্লাসের ছাত্রছাত্রী সামলাতেই দিন শেষ।” শিক্ষিকার অভিযোগ, দিনের পর দিন না-এসে এক দিন আচমকা এসে হাজিরা খাতায় সই করেই চলে যান মহানবাবু। তিনি বলেন, “আমি সহকারি শিক্ষক হয়ে বাধা দিতে পারি না। এ বারে তিনি শেষ স্কুলে এসেছেন গত ১৩ সেপ্টেম্বর। তার পর থেকে টানা অনুপস্থিত। হাজিরা খাতা এখনও ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ওঁর সঙ্গে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। অভিভাবকরা স্কুলে এসে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু ৪টি ক্লাসে ২৫টির বেশি বিষয়ে কি ভাবে প্রশ্ন করব?”
অভিভাবক সপ্তম সরকার বলেন, “স্কুলের অচলাবস্থা নিয়ে পরিচালন সমিতিকে জানিয়েছি। স্কুলে না গিয়ে শিক্ষক বেতন পান কি করে? এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।” স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি শীতলকুমার সরকার বলেন, “স্কুল পরিদর্শককে বহুবার বলেছি। কিন্তু তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি।” ধুলিয়ানের ভারপ্রাপ্ত অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুরজিৎ হালদার এ ব্যাপারে শুধুই ভরসা দিচ্ছেন, ‘‘এ বার আমি নিজে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আসব।” |