|
|
|
|
মাওবাদী-বিরোধী ‘জনজাগরণ’ শুরু হয়েছে, বললেন শুভেন্দু |
নিজস্ব সংবাদদাতা • সাঁকরাইল ও মেদিনীপুর |
সেই সাঁকরাইল। ২০০৯-এর ২০ অক্টোবর সাঁকরাইল থানাতেই হামলা চালিয়েছিল মাওবাদীরা। দুই পুলিশ কর্মীকে মেরে, অস্ত্র লুঠ করে যাওয়ার সময়ে হামলাকারীরা অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল ওসি অতীন্দ্রনাথ দত্তকেও। রাজ্যে থানায় মাওবাদী হামলার সেটাই প্রথম ঘটনা। বৃহস্পতিবার সেই সাঁকরাইল থানার অদূরে কেশিয়াপাতায় ভিড়ে ঠাসা সমাবেশে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করলেন, মাওবাদীদের বিরুদ্ধে জঙ্গলমহলে ‘জনজাগরণ’ শুরু হয়েছে।
এ দিনই আত্মসমর্পণ করেছেন মাওবাদীদের অন্যতম শীর্ষনেত্রী জাগরী বাস্কে ও তাঁর স্বামী রাজারাম সোরেন। মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে জাগরী বলেছেন, “মাওবাদীরা আর গরিব মানুষের স্বার্থ দেখছে না। শুধু খুনের রাজনীতিই করছে।” মাওবাদী নেত্রীর এই বক্তব্য ও আত্মসমর্পণ প্রসঙ্গে শুভেন্দুর প্রতিক্রিয়া, “শুভ পদক্ষেপ। আগেই বলেছি, বন্দুকগুলো থানায় জমা দিয়ে ওরা আত্মসমর্পণ করুক।” একই প্রসঙ্গে কেশিয়াপাতার সমাবেশে উপস্থিত তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের মন্তব্য, “পথভ্রষ্টরা মূল স্রোতে ফিরতে চাইছেন। আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।” |
|
কেশিয়াপাতায় শুভেন্দুর সভা। নিজস্ব চিত্র |
বস্তুত, ভাল ‘প্যাকেজ’ দিয়ে আত্মসমর্পণে আগ্রহী মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা ধারাবাহিক ভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি রাজনৈতিক ভাবেও মাওবাদীদের জন-বিচ্ছিন করার কর্মসূচি নিয়েছে শাসকদল তৃণমূল। সেই লক্ষ্যেই জঙ্গলমহলে ধারাবাহিক ভাবে সভা-মিছিলের আয়োজন করে চলেছে দল। গত ১২ নভেম্বর ঝাড়গ্রামের আগুইবনি অঞ্চলে পদযাত্রা করেন শুভেন্দু। কুড়াশোলে পদযাত্রা শেষে মাওবাদী নেতাদের নাম করে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার কেশিয়াপাতার সভাতেও শুভেন্দু বলেন, “আকাশ, বিকাশ, জয়ন্ত, হেমন্তরা খুন-সন্ত্রাস করছে। সিপিএমের হার্মাদরা ওদের অস্ত্র সরবরাহ করছে। আমরাও আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রদর্শিত পথে ‘জনজাগরণ’ শুরু করেছি। দেখতে চাই, কারা শেষ কথা বলবে, ওদের বন্দুক, নাকি আমাদের সঙ্গে থাকা মানুষ।”
মুকুলবাবু বলেন, “আমরা ৫ মাস মাত্র ক্ষমতায় এসেছি। সময় দিন। আমাদের নেত্রী আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ করবেন।” মাওবাদী নেতা জয়ন্তর পরিবারের সদস্যদের পুলিশে চাকরির আবেদন করা প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “এর থেকেই প্রমাণ হচ্ছে জঙ্গমহলের মানুষ কাজ চান। চান খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা-সহ উন্নয়নের সুযোগ। রক্তপাত চান না।” তবে এ দিনই সংবাদমাধ্যমে পাঠানো দু’পাতার ছাপানো বিবৃতিতে মাওবাদী রাজ্য সম্পাদক আকাশ শুভেন্দুবাবুদের বিরুদ্ধে ফের তোপ দেগেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘আকাশ, বিকাশ, জয়ন্ত-সহ অন্য মাওবাদী নেতৃত্বের জন্মস্থান জঙ্গলমহল। এখান থেকে তাঁদের পালানোর প্রশ্নই নেই। বরং আপনাদের শোষণ-লুঠ থেকে মানুষের মুক্তির জন্যই আমাদের আন্দোলন’।
মাওবাদীদের একাংশ মূলস্রোতে ফিরতে চাইলেও অন্য অংশ যে নাশকতার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে, তার প্রমাণ অবশ্য প্রতি দিনই মিলছে। যৌথ বাহিনীর তল্লাশি অভিযানে বৃহস্পতিবার ফের শালবনির মথুরাপুর ও বেড়ার জঙ্গল থেকে একটি ইনসাস, একটি এসএলআর, ১২০টি ডিটোনেটর, প্রায় আড়াইশো রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের কাছে খবর ছিল, ওই জঙ্গলে মাওবাদীরা ঘাঁটি গেঁড়েছে। যদিও কাউকে ধরা যায়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি প্রবীণ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, জঙ্গলে লাগাতার তল্লাশি অভিযান চলবে। |
|
|
|
|
|