মরসুমের প্রথম ‘মহাযুদ্ধে’ খেলতে নামার বাহাত্তর ঘণ্টা আগে দুই প্রধানের কোচেরই নতুন করে অঙ্ক কষার পরিস্থিতি তৈরি হল।
ট্রেভর মর্গ্যানের অস্ত্র ভান্ডার থেকে খসে পড়ার পথে একটা অস্ত্র! টোলগে ওজবে তো নেই-ই, মেহতাবও পুরো ফিট হননি। রবিবারের ডার্বি ম্যচ খেলতে চাইছেন না লাল-হলুদের হৃদপিন্ড। তাঁর কুঁচকির চোট এখনও সারেনি।
সুব্রত ভট্টাচার্যের হাতে অবশ্য নতুন অস্ত্র চলে এল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। ভোর থেকে চেষ্টা চালিয়ে নতুন অস্ট্রেলীয় ডিফেন্ডার ড্যানিয়েল জিলানির ছাড়পত্র জোগাড় করে ফেললেন কর্তারা। অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত জানিয়ে দিলেন, আজ শুক্রবার সই করবেন ড্যানিয়েল। ড্যানিয়েলকে নিয়ে সমস্যা মিটলেও সামান্য অনিশ্চয়তা রয়েছে তাঁর সম্ভাব্য সঙ্গী স্টপার আনোয়ারকে নিয়ে। বুধবার জাতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন আনোয়ার। শেষ খবর, তাঁকে নামানোর জন্য চেষ্টা চলছে। হয়তো তিনি নেমেও পড়বেন। তবে ব্রাজিলিয়ান হাদসনকে এই ম্যাচে পাবে না মোহনবাগান। চোটের জন্য।
পরপর ম্যাচ খেলছেন বলে দু’দিন ফুটবলারদের ছুটি দিয়ে দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের ব্রিটিশ কোচ। আজ থেকে যুবভারতীতে বড় ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করবেন তিনি। যে অঙ্ক কষে মনে মনে এগোচ্ছিলেন মর্গ্যান, তা জোর ধাক্কা খেতে পারে মেহতাবের চোটে। এ দিন রাতে ইস্টবেঙ্গল মিডিও বলে দিলেন, “এখনও আমার কুঁচকির চোট সারেনি। দৌড়তে গেলে লাগছে। ফেড কাপ ফাইনালের মতো জোর করে মাঠে নেমে দলকে ডোবাতে চাই না। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে মাঠে নামব। এমনিতে এক মাস বসে আছি। আবার যদি খেলতে গিয়ে লেগে যায় তা হলে সারা মরসুমই খেলতে পারব না। কাল মাঠে গিয়ে কোচকে অনুরোধ করব আমাকে বাদ দিয়ে টিম করুন। আমি চাই আমাদের টিম জিতুক।” মেহতাবের আরও বড় সমস্যা চোট পাওয়ার পর ম্যাচ-প্র্যাক্টিসও পাননি।
সমস্যা তৈরি হলেও ইস্টবেঙ্গল কোচ কখনও এসব নিয়ে বেশি ভাবেন না। প্ল্যান বি তৈরি করে তিনি বহু কঠিন পরীক্ষায় উতরেছেন গত ষোলো মাসে। এ বার তাঁর অঙ্ক কী? জানা গেছে, সুপার কাপে সালগাওকরে বিরুদ্ধে জিতেছিলেন যে অঙ্কে সেটাই না কি ঘুরছে চতুর লাল-হলুদ কোচের মাথায়। টোলগের জায়গায় অ্যালান গাও, মেহতাবের জায়গা ভরাট করতে সুশান্ত বা পাইতেকে হয়তো নামিয়ে দেবেন তিনি। গোলে তরুণ গুরপ্রীত সিংহ না, অভিজ্ঞ সন্দীপ নন্দী তা অবশ্য ঠিক হয়নি। গোলকিপার কোচ অতনু ভট্টাচার্য বললেন, “কোচ কী চাইছেন সেটা জেনেই নিজের মতামত দেব।” নওবা-ওপারা-নির্মল-রবার্তোকে নিয়ে মর্গ্যানের রক্ষণ অবশ্য বেশ আঁটসাঁট। অনেক ম্যাচে একসঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে চার জনের।
উল্টো দিকে মোহনবাগানের রক্ষণ প্রতিদিনই ভাঙ্গা-চোরা হচ্ছে। আর যা নিয়ে চিন্তিত মোহন-টিডি নিজেই। তাঁর চিন্তা বাড়িয়েছে চোট-আঘাত। সুব্রত বললেন, “এত চোট আঘাত যে রক্ষণটা সাজিয়েই উঠতে পারছি না। একমাস-দেড় মাস পর এক একজন ফিরছে তো আর একজন বাইরে চলে যাচ্ছে। স্নেহাশিস ফিরল তো হাদসন বাইরে চলে গেল চোট পেয়ে।”
জাতীয় দলের হয়ে খেলে আসা সুনীল ছেত্রী, রহিম নবি, জুয়েল রাজারা এ দিনই নেমে পড়েছিলেন অনুশীলনে। তবে চোটের জন্য নামেননি আনোয়ার। সুযোগ পেয়ে অঙ্ক কষতেও শুরু করে দিলেন সুব্রত-প্রশান্তরা। তাঁদের মাথায় ঘুরছে নানা রকম অঙ্ক। তাঁরা যে প্রথম একাদশ তৈরি করে এ দিন পরীক্ষা করলেন, সেটাই যে রবিবার নামবে তেমন নিশ্চয়তা অবশ্য দিচ্ছেন না সুব্রত। যে টিম এ দিন খেলল সেখানে ফরোয়ার্ডে ওডাফার সঙ্গী হয়েছিলেন সুনীল। মাঝমাঠে ব্যারেটো, মাসি, জুয়েল, স্নেহাশিস। রক্ষণে ড্যানিয়েলের সঙ্গে স্টপারে কিংশুক। দুই সাইড ব্যাক রহিম নবি এবং সুরকুমার। মোহন-টিডি বললেন, “যে বেশি দৌড়বে সেই এই ম্যাচ জিতবে। ইস্টবেঙ্গল কিন্তু প্রচুর দৌড়োচ্ছে। খুব ব্যালান্সড সাইড। আমাদেরও দৌড়তে হবে। চোট পাওয়া ফুটবলারদের ফিটনেসটাই বড় সমস্যা আমার।”
আনোয়ার খেললে ড্যানিয়েলের সঙ্গে স্টপারে তিনিই। কিংশুক বা দলজিত তখন লেফট ব্যাক হয়ে যাবেন। স্নেহাশিসের বদলে মাঝমাঠে তখন নবি। এত অঙ্ক অবশ্য মর্গ্যানকে ভাবতে হচ্ছে না। তাঁর চিন্তার জায়গা শুধু মেহতাবের বিকল্প। বাকি দশজন নিয়ে কিন্তু তেমন চিন্তা থাকছে না। |