“ক’টা উইকেট পড়ল?”
বৃহস্পতিবার সকালে সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে হাজির জনা তিরিশেক দর্শকের মুখে মুখে একটাই প্রশ্ন। চোখের সামনে ব্যাট-বলের যে লড়াই চলছে সেটার ব্যাপারে নয় কিন্তু। প্রশ্নটা ইডেনের ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ঘিরে।
মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে টস জিতে ব্যাট করতে নেমেছে বাংলা। চার ওভার যেতে না যেতেই ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়েছেন ওপেনার পার্থসারথি ভট্টাচার্য (১২)। স্কোরবোর্ডে ৫০ ওঠার আগে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে গেলেন অরিন্দম ঘোষও (১৬)। দেখলেন সবাই-ই, কিন্তু কারও মনে দাগ কাটল কি? তার চেয়ে তখন অনেক বেশি আগ্রহ মোবাইল ফোন মারফত পাওয়া অন্য দুটো আউটের খবর নিয়ে। ফিরে গিয়েছেন ইডেনের ক্রিজে জমে যাওয়া ধোনির দুই ক্যারিবিয়ান গাঁট চন্দ্রপল এবং ব্র্যাভো।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ অল আউট হয়ে যাওয়া পর্যন্ত হয়তো এ রকমই চলত। চলতে দিলেন না ‘ডন’ আর ‘মান্নি’।
চিনতে পারলেন না? ইডেন থেকে সল্টলেকের ম্যাচের দিকে দর্শকদের আগ্রহ ফিরিয়ে আনলেন অরিন্দম দাস এবং মনোজ তিওয়ারি। যাঁদের জোড়া সেঞ্চুরি এ দিন রঞ্জির দ্বিতীয় ম্যাচে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে বাংলাকে ৪৯-২-র নড়বড়ে অবস্থা থেকে নিয়ে গেল ২৫৮-৩-র মোটামুটি স্বস্তির স্টেশনে। লাঞ্চের পরের দু’ঘণ্টায় দ্রুত ১৩৪ রান তুলে ফেললেন দুই ব্যাটসম্যান। ততক্ষণে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে দর্শকদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। ৩৪৮ বলে ২০৯ রানের জুটিতে বেশি আক্রমণাত্মক দেখাল বাংলা অধিনায়ককে। ২০১ বলে আসা তাঁর ১৩৬ রানের মধ্যে রয়েছে ১৬টা বাউন্ডারি। তুলনায় ‘ডন’ কিছুটা শান্ত। ১০৫ করতে নিলেন ২২৫ বল। খেলার শেষে অরিন্দমকেই প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন মনোজ। “ও কমপ্যাক্ট ওপেনার। টেকনিক্যাল দিক দিয়ে খুব শক্তিশালী। উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে ওর ব্যাটিং দেখতে দারুণ লাগে।”
|
সৌরভ-মনোজ: বাংলাকে যাঁরা টানছেন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে দল নির্বাচনের আগে পরপর দুটো ম্যাচে দুটো সেঞ্চুরি। মধ্যপ্রদেশের অনভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকড়ানোর সুযোগ। পড়ন্ত বিকেলে মনোজের গলায় স্বভাবতই স্বস্তি, “ইডেনে ভারতের হয়ে দু’টো ম্যাচ খেলা, তার পর গুজরাতের বিরুদ্ধে রঞ্জি সেঞ্চুরি সব মিলিয়ে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছিল। প্রচুর খেটেছি। রামন স্যরের সঙ্গে কয়েকটা টেকনিক্যাল সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। আবার জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার কথাটা মনের মধ্যে তো থাকেই। দেখা যাক।” মাঠ ছাড়ার সময় মনোজের সঙ্গে ৩৭ রানে অপরাজিত থাকা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তো বলেই গেলেন, “ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা মনোজের প্রাপ্য।”
মনোজের বাংলার এখন যা পরিস্থিতি, শুক্রবার সকালের প্রথম একটা ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। ওই সময়টা বাংলার সেরা ব্যাটিং জুড়ি খেলে দিতে পারলে সল্টলেকের এই পাটা উইকেটে মধ্যপ্রদেশের অনামী বোলারদের পক্ষে বাংলার রানের পাহাড়ে চড়া আটকানো প্রায় অসম্ভব। যে ম্যাচে তারপর অফ ফর্মে থাকা অফস্পিনার সৌরাশিস লাহিড়িকে বাদ দিয়ে পেস ব্যাটারি নিয়ে পাঁচ পয়েন্টের জন্য ঝাঁপাবে বাংলা। তিন পেসার রণদেব বসু, অশোক দিন্দা, সামি আহমেদের সঙ্গে একমাত্র বাঁ-হাতি স্পিনার ইরেশ সাক্সেনা।
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা ৩১৮-৩ (মনোজ ব্যাটিং ১৩৬, অরিন্দম দাস ১০৫, সৌরভ ব্যাটিং ৩৭। আনন্দ রাজন ১-৪৪)।
|