ইডেনের হাতঘড়ি বলছে, দুপুর দেড়টা। আনন্দের চোটে মাঠে বিরাট কোহলির নাচ ততক্ষণে শেষ। দ্রাবিড়-লক্ষ্মণকে সামনে রেখে ইডেনের ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়েছে টিম ধোনি। স্টেডিয়ামের হাজার দশেক দর্শক আড়মোড়া ভেঙে প্রস্তুত হচ্ছেন ফিরতি বাস ধরতে...।
আচমকা সিংহগর্জন!
ব্যাপার কী? একটু আগেই তো টেস্ট সিরিজ জয়ের উৎসব হয়ে গেল স্টেডিয়াম জুড়ে। তা হলে? কী আর, স্টেডিয়ামে ঢুকছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্টেডিয়াম জুড়ে ফের উল্লাস।
গত মাসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে থেকেই চেষ্টা হচ্ছিল মুখ্যমন্ত্রীকে মাঠে আনার। তখন আসতে না পারলেও মমতা এ দিন এলেন। ঠিক হয়, মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়েই ম্যাচের সেরাকে দেওয়া হবে বিশেষ রৌপ্য পদক। যা ভিভিএস লক্ষ্মণ পেলেন এবং বলে গেলেন, “ইডেনের চেয়েও আমার কাছে বেশি প্রিয় এই শহরের মানুষ। কলকাতা সত্যিই ক্রিকেটটা বোঝে।” মুখ্যমন্ত্রীও বা কম গেলেন কোথায়? কখনও ধোনির সঙ্গে দাঁড়িয়ে ‘ভি’ দেখিয়ে ছবি তুলছেন। কখনও সচিন তেন্ডুলকরকে হাল্কা রসিকতা করে বলছেন, “তুমি ইডেনে একশো সেঞ্চুরিটা করলে না, ওয়াংখেড়েতে করবে বলে?”
‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ কাজেও এ দিন সকাল থেকে নেমে পড়েছিলেন সিএবি কর্তারা। সাংবাদিকদের বোঝানো চলছিল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সচিনের বাইশ বছর পূর্তিতে কোনও ধুমধাম হয়নি ঠিকই, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে পদক দেওয়া হচ্ছে। সচিনকে সোনার গিনি দেওয়া গেল না বটে। কিন্তু এই যে দেশের মাটিতে ৭৫তম টেস্ট জয়ের দিন সিএবি-কে নিজেদের জার্সি দিয়ে গেলেন দ্রাবিড়-লক্ষ্মণ, সচিন আপাতত সোয়েটার দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেন শততম সেঞ্চুরির ব্যাটটা সিএবি-কেই দেবেন, ধোনি দিলেন নিজের ব্যাট-গ্লাভস, এ সব কী কম কিছু? |
সিরিজ জয়ের মুহূর্ত। বৃহস্পতিবার ইডেনে। ছবি: উৎপল সরকার |
নিজের সই করা ব্যাট সিএবিকে ধোনি দিলেন। কিন্তু একই সঙ্গে ইডেনের পিচ নিয়ে নিজের খুঁতখুঁতানিও গুঁজে দিলেন। সাড়ে তিন দিনে ম্যাচ পকেটে পোরার পরেও। বলে দিলেন, “পিচ থেকে খুব বেশি টার্ন পায়নি স্পিনাররা। দেশের মাঠে আমি এমন পিচ পছন্দ করব, যেখানে বল ঘুরবে। স্পিনাররা উইকেট পাবে। আশা করি সেটা আমাদের দেওয়া হবে।” উমেশ যাদবকে আগলে রাখতে চাইছেন অধিনায়ক। বলছেন, “ও অস্ট্রেলিয়ায় যাবে কি না এখনও ভাবিনি। আসলে কোনও বোলারকে আমি অতিরিক্ত ব্যবহার করতে চাই না। তাতে চোট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।” তবে ধোনি নিশ্চিন্ত টিমের বোলিং বিভাগের ভারসাম্য দেখে। যেমন নিশ্চিন্ত সিরিজটা জিতে। বলছিলেন, “ইংল্যান্ডে ওই অভিজ্ঞতার পর খুব দরকার ছিল এই টেস্ট সিরিজটা জেতা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং এমনিতেই ভাল। আর ওদের ব্যাটিংও যে খারাপ নয় সেটা আজ বুঝিয়ে দিয়েছে ডারেন ব্র্যাভো।”
ব্র্যাভো নিজে আবার বিরক্ত। একে তো সেঞ্চুরি করেও টিমকে বাঁচানো যায়নি, তার মধ্যে আবার লারার সঙ্গে তাঁর মিল নিয়ে ফের প্রশ্ন। বিরক্তিতে একবার বলেই ফেললেন, “তুলনাটা শুনলে ভয়ই লাগে এখন। মানছি, ও আমার তুতো ভাই হয়। ওর ব্যাটিং স্টাইলের সঙ্গে আমারটা মেলেও কিছুটা। কিন্তু লারা যা করেছে, নিজে করেছে। আমি আমারটা করতে চাই।” এ নিয়ে টেস্টে তাঁর দু’টো সেঞ্চুরি হল। প্রথমটা পেতে লেগেছে বেশ কিছু ম্যাচ। “দাদা ডোয়েন বলত, প্রথমটা পেলেই দেখবে পরেরগুলোও চলে আসবে আপনাআপনি। কিন্তু আজকেরটায় তো দলের কোনও লাভ হল না,” আফসোস করছিলেন লারার মতোই ত্রিনিদাদের বাঁ-হাতি। |