|
|
|
|
ফের কাঁসাইয়ে ডুবে মৃত ২ ছাত্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
স্নান করতে নেমে ফের কাঁসাইয়ে তলিয়ে গেল দুই ছাত্র। অবৈধ বালি তোলার জেরে নদীখাতে তৈরি হওয়া মরণ-ফাঁদ কেড়ে নিল আশিস শঙ্কর (১৮) ও নিকু সাউ (১৮) নামে দশম শ্রেণির ওই দুই ছাত্রকে। বৃহস্পতিবার সকালে মেদিনীপুর শহর-সংলগ্ন রেলসেতুর কাছে নদী থেকে দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরে আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে নদীপাড়ে এসেছিল আশিস ও নিকু। জলে নামার পরই তলিয়ে যায়। বিকেল থেকেই তল্লাশি শুরু হয়। ডুবুরি নামানো হয়। কিন্তু, রাত পর্যন্ত কারও খোঁজ মেলেনি। বৃহস্পতিবার সকালেই দু’টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। আশিসের বাড়ি খড়্গপুর শহরের গোলবাজার এলাকার জনতা মার্কেটের পাশে। নিকুর বাড়ি ভবানীপুরের গোয়ালাপাড়ায়। মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোকগ্রস্ত দুই পরিবার। নদী থেকে যথেচ্ছ বালি তোলার জেরে পর পর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
মেদিনীপুর-খড়্গপুরের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে কাঁসাই। নদীতে বছরের প্রায় সব সময়ই জল থাকে। গ্রীষ্মকালে অবশ্য জলস্তর অনেক নেমে যায়। কাঁসাই নদীর আশপাশ এলাকা থেকে প্রতিদিন কয়েকশো লরিতে চলে বালি তোলা। নদী-বিজ্ঞানের তোয়াক্কা না করে যথেচ্ছ বালি তোলার জেরে নদীখাতে তৈরি হয়েছে অনেক গর্ত। জল থাকলে সে গর্ত নজরে পড়ে না। স্নান করতে নেমে সেই গর্তেই তলিয়ে অকাল-মৃত্যু ঘটে চলেছে নিয়মিত। নির্বিকার প্রশাসন। নজরদারির লোক দেখানো হুঁশিয়ারির বাইরে যথেচ্ছ বালি তোলা বন্ধে কোনও উদ্যোগই নেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের। বারে বারে প্রশাসনের দুয়ারে এ নিয়ে আবেদন-নিবেদনেও হুঁশ ফিরছে না। স্বভাবতই প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে অবৈধ বালি কারবারিদের আঁতাতের অভিযোগ জোরালো হচ্ছে। যে আঁতাতের জেরে ভূমি-রাজস্ব ফাঁকি দিয়েই বালি তোলা চালিয়ে যেতে পারছে কারবারিরা। অভিযোগ, কারবারিদের মুনাফার একাংশ পাচ্ছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। সে কারণেই তাঁরা মুখে নজরদারির কথা বলে কার্যত চোখ বন্ধই রেখেছেন।
যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অবৈধ বালি তোলার জেরে নদীপাড়েও ধস নামছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অ্যানিকেত-বাঁধ। নির্লিপ্ত প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দা আসগার আলির কথায়, “প্রশাসনকে এ ব্যাপারে বহু বার জানানো হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।” জেলা প্রশাসনের রুটিন বক্তব্য, অবৈধ ভাবে বালি তোলা রুখতে অভিযান চলে। নজরদারিও নাকি বাড়ানো হয়েছে। ক’বছর আগে অ্যানিকেত ভাঙার পর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রশাসন জানায়, অ্যানিকেতের দু’শো মিটারের মধ্যে বালি তোলা যাবে না। কিন্তু, তাও মানা হচ্ছে না। অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েক জন নেতা ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের মদতেই অবৈধ বালি তোলায় দাঁড়ি টানা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দুই ছাত্রের দেহ উদ্ধারের পর অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শুভাঞ্জন দাস জানিয়েছেন, নতুন করে আর কাউকে বালি তোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।” তাঁর দাবি, “এলাকায় মাঝেমধ্যেই তল্লাশি চলে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপই করা হয়। নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।” |
|
|
|
|
|