তারকেশ্বরে সার কেলেঙ্কারি
তদন্ত শুরু হতেই পলাতক সমবায়ের অভিযুক্ত কর্তারা
পাণ্ডুয়ার সরাই কৃষি সমবায়ের পরে এ বার তারকেশ্বরের কুলতেঘরী-কেটেরা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির বিরুদ্ধেও সারের কালোবাজারির অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই সমবায় থেকে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে অতিরিক্ত দামে চাষিদের কাছে সার বিক্রি করা হচ্ছিল বলে থানায় নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয় প্রশাসনের তরফে। পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত ম্যানেজার এবং সচিব দু’জনেই পলাতক।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তারকেশ্বরের বেশ কয়েকটি গ্রামের চাষিরা ওই সমবায় থেকে সার কেনেন। সমবায়ের গুদামের সংখ্যা ৬টি। এর মধ্যে কুলতেঘরি গ্রামে ৩টি, কেটেরা গ্রামে ২টি এবং সাহাপুরে ১টি গুদাম রয়েছে। মূল অফিস কুলতেঘরিতে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অফিসের খাতাপত্র মিলিয়ে দেখার কাজ শুরু করে। বৃহস্পতিবার কুলতেঘরির একটি গুদামে সারের বস্তার হিসেব খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করে তারা।
তদন্তকারী এক পুলিশ অফিসার বলেন, “৬টি গুদাম মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার সারের বস্তা রয়েছে। সমস্ত হিসেব মিলিয়ে দেখে গুদাম সিল করা হবে। অভিযুক্ত ম্যানেজার এবং সচিবের খোঁজ চলছে।” গ্রামবাসীরা অবশ্য পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। তাদের বক্তব্য, গত কয়েকদিন ধরেই ওই সমবায়ের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে হইচই হচ্ছিল। ঘটনার কথা জানতেই প্রশাসনের কর্তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কথাও বলেন। অথচ পুলিশ অভিযুক্তদের গতিবিধির কোনও খোঁজই রাখেনি। সেই সুযোগে এফআইআর হতেই গা-ঢাকা দিয়েছেন তাঁরা। এমনকী, লিখিত অভিযোগ নিতেও পুলিশ টালবাহানা করে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শুধু এই ঘটনাই নয়, দীর্ঘদিন ধরেই ওই সমবায়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের দাপটে ওই সমবায়ের বিরুদ্ধে এত দিন কেউ টুঁ শব্দ করতে পারেননি। ফলে ‘দুর্নীতি’ প্রকাশ্যে আসেনি। এখন ওই রাজনৈতিক দলের প্রভাব অনেকটাই কমে যাওয়ায় গ্রামবাসীরা মুখ খুলছেন। পাণ্ডুয়ার সরাই কৃষি সমবায়ের চার কর্তার বিরুদ্ধেও সম্প্রতি প্রশাসনের তরফে থানায় এফআইআর করা হয় ‘বেআইনি’ ভাবে সার বিক্রির অভিযোগে। সেখানেও অভিযুক্তদের কাউকেই পুলিশ ধরতে পারেনি। অভিযোগ, এ ক্ষেত্রেও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই অভিযুক্তেরা পালিয়ে গিয়েছেন।
তারকেশ্বরের সমবায়টিতে সারের নির্ধারিত মূল্যের (এমআরপি) থেকে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। যদিও, ক্যাশমেমোতে শুধুমাত্র মূল দামই লেখা হচ্ছিল। অন্য একটি ছাপানো কাগজে (সমবায়ের নাম বা স্ট্যাম্প ছাড়াই) অতিরিক্ত টাকার হিসেব লিখে দেওয়া হচ্ছিল ‘পরিবহণ ও পরিষেবা’ খরচ হিসেবে। গত ১৪ নভেম্বর তারকেশ্বরের কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক, চন্দননগরের মহকুমাশাসক, জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠান চাষিরা। প্রমাণস্বরূপ একাধিক চাষির বিলের প্রতিলিপিও পাঠানো হয়। তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত নিজে লিখিত অভিযোগ জানান রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী এবং কৃষি দফতরের প্রধান সচিবকে। নড়েচড়ে বসেন প্রশাসনের কর্তারা। মহকুমাশাসক অভিজিৎ মিত্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন পুলিশের সঙ্গে। চাষিদের অভিযোগের প্রতিলিপিও তিনি পুলিশকে পাঠিয়ে দেন। বুধবার সমবায়ের ম্যানেজার বাসুদেব হাজরা এবং সচিব সুকান্ত পালের বিরুদ্ধে তারকেশ্বর থানায় এফআইআর করেন কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক সন্দীপ দাস।
চাষিদের বক্তব্য, দোষীদের ‘দৃষ্টান্তমূলক’ শাস্তি দেওয়া হোক। সমবায়ের গুদাম সিল করলেও সঠিক দামে সারের জোগানের দাবিও জানিয়েছেন চাষিরা। এসডিপিও তথাগত বসু বলেন,“ওই সমবায়ের কর্তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। তদন্তে সমবায়ের হিসাবে গরমিল রয়েছে পুলিশ সব কিছু তদন্ত করেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.