সন্ন্যাসিনী সিস্টার ওয়ালসা হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদে ঝাড়খণ্ড পুলিশ এখনও অন্ধকারে। গত মঙ্গলবার রাতে পাকুর জেলার পাচুয়ারা গ্রামে সিস্টারকে তাঁর ঘর থেকে টেনে বাইরে এনে কুপিয়ে খুন করে এক দল দুষ্কৃতী। এখনও পর্যন্ত এই খুনের যুক্তিগ্রাহ্য কোনও সূত্র পুলিশ পায়নি। কেউ ধরাও পড়েনি। ধর্মীয় রীতি মেনে এ দিন পাকুরের বিজয়পুরে সিস্টারের মরদহ সমাহিত করা হয়েছে।
ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী স্টিফেন মরান্ডি জানিয়েছেন, সমাজসেবার কাজেই ওয়ালসা সুদূর কেরল থেকে ঝাড়খণ্ডে এসেছিলেন। পাকুর জেলায় সাঁওতাল অধ্যুষিত আমরাপাড়া ব্লকে মূলত উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন তিনি। নয়ের দশকের মাঝামাঝি আদিবাসীদের নিয়ে ‘রাজমহল পাহাড় বাঁচাও’ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন ওয়ালসা। একই ভাবে বছর দশেক আগে বেসরকারি একটি কয়লাখনির জন্য উচ্ছেদ হওয়া আদিবাসীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে গ্রামবাসীদের নিয়ে তিনি টানা আন্দোলন চালিয়ে ছিলেন দীর্ঘদিন।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, আন্দোলনের ফলে ওয়ালসা গরিব গ্রামবাসীদের ‘ভরসা-দিদি’ হয়ে উঠেছিলেন ঠিকই। কিন্তু নিজের অজান্তে একই সঙ্গে কিছু শত্রুও তৈরি করে ফেলেছিলেন তিনি। বিশেষত ক্ষতিপূরণের শর্ত অনুযায়ী পরবর্তী কালে কয়লাখনি কর্তৃপক্ষের গড়া একটি প্রাথমিক স্কুল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র দেখভালের দায়িত্ব ওয়ালসার হাতে আসার পর থেকে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর ওই বেসরকারি খনি সংস্থার উপ-প্রধানকে হত্যা করে মাওবাদীরা। খনি-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সিস্টারের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে ওঠাকেও সুনজরে নেননি গ্রামবাসীদের একাংশ। সাঁওতাল পরগণার ডিআইজি ভি কে পান্ডে গত কাল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, উচ্ছেদ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোই সম্ভবত ওয়ালসা-হত্যার কারণ।
পাকুর জেলা পুলিশ কর্তারা আরও জানাচ্ছেন, কয়েক মাস ধরেই সিস্টারের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ গ্রামবাসীদের একাংশকে প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা করতে দেখা যাচ্ছিল। সিস্টারকে গ্রামছাড়া করার দাবি নিয়েও পথে নামেন অনেকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওয়ালসা বেশ কিছু দিন গ্রামের বাইরে থাকতে হয়েছিল। ৭ই নভেম্বর তিনি গ্রামে ফিরেছিলেন।
জেলার পুলিশ সুপার অমরনাথ খান্না বলেন, “সিস্টারের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীরা আন্দোলনে নামে ৮ নভেম্বর। সিস্টারের উদ্দেশে গ্রামছাড়ার দাবি তুলে ওই দিন রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।” এর পরে সিস্টারের নিরাপত্তার কোনও বাড়তি ব্যবস্থা কি করেছিল পুলিশ? পুলিশের পদস্থ আধিকারিকেরা উত্তরে বলেন, “সিস্টার পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাননি।” এখনও পর্যন্ত এউ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতারও করতে পারেনি পুলিশ। ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির তরফে এ দিন ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করা হয়েছে। |