তেলেঙ্গানা থেকে উত্তরপ্রদেশ— রাজ্য ভাগের দাবি যে ভাবে উঠছে, তাতে আজ না হোক কাল দ্বিতীয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিটি গঠন করা ছাড়া উপায় নেই বলেই মনে করছেন কংগ্রেস তথা সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে সরকার সেই সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে এমন কোনও এক সময়ে, যখন তাদের পক্ষে রাজনৈতিক ফায়দা তোলাটা সুবিধাজনক হবে।
সরকার ও কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা জানান, পৃথক রাজ্যের দাবিতে তেলেঙ্গানা যে ভাবে উত্তপ্ত, তাতে দ্বিতীয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিটি (এসআরসি) গঠন করাই এই জটমুক্তির একমাত্র পথ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে গত সোমবার কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, এসআরসি গঠন নিয়ে তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সমস্ত শরিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু ঠিক তার পরেই, গত মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী তাঁর রাজ্যকে চার ভাগ করার প্রস্তাব দিয়ে বল যে ভাবে কেন্দ্রের কোর্টে ঠেলে দিয়েছেন তাতে এসআরসি গঠন নিয়ে আলোচনা দীর্ঘায়িত করা যাবে না বলেই মনে করছেন সরকার ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা।
দ্বিতীয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিটি নিয়ে আলোচনা চালালেও কংগ্রেস কিন্তু উত্তরপ্রদেশ ভাগের প্রশ্নে মায়াবতীকে সহজে জমি ছাড়তে নারাজ। বস্তুত, মায়াবতীর রাজ্য ভাগের প্রস্তাবের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে বিজেপি ও মুলায়ম সিংহরাও এখন কিছুটা কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন। আর সেটাই অক্সিজেন জুগিয়েছে কংগ্রেসকে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের এক শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী আজ বলেন, রাজ্য ভাগের প্রস্তাব মায়াবতী বিধানসভায় পাশ করাতে পারেন কি না, আগে সেটাই দেখতে চায় কংগ্রেস। বসপা নেত্রী তাতে সফল হলে কংগ্রেস তথা কেন্দ্রের তরফে বলা হবে কোনও রকম সমীক্ষা বা আলোচনা ছাড়া রাজ্য ভাগের সিদ্ধান্ত এমন ভাবে নেওয়া যায় না। এর নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে, বিশেষ করে রাজ্য ভাগ নিয়ে যখন উত্তরপ্রদেশের কোথাও কোনও আন্দোলনই চলছে না। তাই উত্তরপ্রদেশে ভোটের পর নতুন সরকারও যদি রাজ্য ভাগের প্রস্তাব বিধানসভায় পাশ করায়, কেবল তখনই কেন্দ্র বিবেচনা করবে। সরকারের ওই শীর্ষ নেতার কথায়, উত্তরপ্রদেশের নতুন সরকারও রাজ্য ভাগের প্রস্তাব দিলে দ্বিতীয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গড়তেই হবে।
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকের পরে এসআরসি গঠনের প্রস্তাব নিয়ে সম্প্রতি ডিএমকে নেতা টি আর বালুর সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তবে বালু তাঁকে জানিয়েছেন, ডিএমকে প্রধান করুণানিধির সঙ্গে কথা বলে তিনি দলের সিদ্ধান্ত জানাবেন। ডিএমকে-র পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শরদ পওয়ারের সঙ্গে কথা বলবে কংগ্রেস। কারণ রাজ্য ভাগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্র দুই রাজ্যেই পুরনো আন্দোলন
অব্যাহত। সুতরাং মমতা বা পওয়ারের আপত্তি থাকলে এই প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্রের পক্ষে এগোনো মুশকিল হবে। তা ছাড়া এ বিষয়ে বামেদের
আপত্তিও রয়েছে।
কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ এই প্রসঙ্গে বলেন, “দ্বিতীয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি না, তা কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারে। কেন্দ্র সেই সিদ্ধান্ত নিলে কংগ্রেসের কোনও আপত্তি নেই। তবে নতুন রাজ্য গঠনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, জাতীয় নিরাপত্তা, ঐতিহাসিক দাবি ইত্যাদি বিষয়গুলি বিবেচনা করে দেখতে হবে।” |