শরিক দল হয়েও তৃণমূল এ বার পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে লোকসভায় আলোচনা চাইছে, বিধানসভা ভোটের আগে যে ভূমিকায় দেখা যেত বামেদের। আবার অতীতে নিজেদের যা অবস্থান ছিল, তা থেকে সম্পূর্ণ উল্টো দিকে ঘুরে বামেরা রাজ্য সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে সরব হতে চাইছে লোকসভায়। শীতকালীন অধিবেশনের আগে আজ স্পিকারের ডাকা সর্বদল বৈঠকেই স্পষ্ট মিলল এই ‘ভূমিকা বদলের’ ইঙ্গিত।
আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্য সরকারের নীতি নিয়ে সরব হতে চান বাম-সাংসদরা। তার আগে আজ স্পিকার মীরা কুমারের ডাকা বৈঠকে বামেরা দাবি তুলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে যে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে গিয়ে নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাচ্ছেন না, সে বিষয়ে লোকসভায় আলোচনার সুযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে শিশুমৃত্যু ও মাওবাদীদের কার্যকলাপ নিয়েও আলোচনার দাবি তুলেছেন তাঁরা। মাওবাদীদের হামলায় বলরামপুরে দুই তৃণমূল কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনারও উদাহরণ দেন লোকসভায় সিপিএমের দলনেতা বাসুদেব আচারিয়া। অবশ্য মাওবাদী কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা চেয়েছে তৃণমূলও।
আজ স্পিকারের বৈঠকে তৃণমূলের সঙ্গে বামেদের বচসা না হলেও, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাসুদেব আচারিয়ার এক দফা বিতর্ক হয়ে গিয়েছে। বাসুদেব জানান, তাঁরা পেনশন তহবিল পরিচালনাকারী সংস্থায় বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাবের বিরোধিতা করবেন। গত কালই পেনশন তহবিল পরিচালকারী সংস্থায় বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। আজ তার সমালোচনা করে বাসুদেব জানান, এতে শ্রমিকদের উপর আঘাত আসবে। কারণ, সরকার কোনও নিশ্চিত আয়ের প্রতিশ্রুতি ছাড়াই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে পেনশন তহবিলের অর্থ তুলে দিতে চাইছে।
এই সমালোচনা শুনে প্রণববাবুর প্রশ্ন তোলেন, স্পিকারের বৈঠক কি কোনও বিলের ভাল-মন্দ দিক নিয়ে আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে? বাসুদেব পাল্টা যুক্তি দেন, বিরোধিতা করতে গেলে তার কারণও ব্যাখ্যা করতে হয়। প্রণব তখন অভিযোগ তোলেন, বামেদের জন্যই এই সব আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচি আটকে ছিল। প্রথম যখন এই বিল পেশ করা হয়, তখনও বামেরা সংসদে আপত্তি তুলেছিলেন। বাসুদেব তাতে দমে না গিয়ে জানিয়ে দেন, তাঁরা এর বিরোধিতা করেন।
শুধু বিরোধীদের সঙ্গে তর্ক হয়, শরিকদের কাছ থেকেও সমালোচনা শুনতে হল সরকারকে। তৃণমূলের মুখ্য সচেতক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি কখন ঘটছে, কেন ঘটছে, তা লোকসভায় বিশদে ব্যাখ্যা করুক সরকার। গত এক বছরে ১১ বার পেট্রোলের দাম বেড়েছে। এ বার ১ টাকা ৮৬ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ৩০ পয়সা কমানো হল। আমজনতার কাছে এর থেকে কী বার্তা যাবে?” অদূর ভবিষ্যতে যাতে ডিজেল, রান্নার গ্যাস বা কেরোসিনের দাম বাড়ার মতো ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে নিশ্চয়তা চেয়েছে তৃণমূল। এর আগে একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছিলেন লোকসভা ও রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে ‘কড়া পদক্ষেপ’-এর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। আজ কালো টাকার বিষয়েও লোকসভায় পূর্ণাঙ্গ আলোচনার দাবি তুলেছেন সুদীপবাবু। তাঁর কথায়, সমান্তরাল অথর্নীতি চলছে। অবিলম্বে তা বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নিক সরকার।
তৃণমূল যখন কেন্দ্রের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি করছে, তখন জাতীয় স্তরে বামেরা তৃণমূলের কাছে প্রশ্ন তুলেছে, পশ্চিমবঙ্গে কৃষকরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাচ্ছে না কেন? বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল সাংসদরা রাজ্যের বিষয় নিয়ে লোকসভায় সরব হলে বামেরা দাবি তুলতেন, এগুলি রাজ্যের বিষয়। সংসদে এ নিয়ে হইচই করা অযৌক্তিক। এখন বামেরা রাজ্যের বিষয় সংসদে তুলতে চাইছেন কেন? লোকসভায় সিপিএমের দলনেতা বাসুদেবের জবাব, বিভিন্ন রাজ্যেই কৃষকরা নির্ধারিত সহায়ক মূল্য পাচ্ছেন না। পশ্চিমবঙ্গে পরিস্থিতি আরও খারাপ। ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের অর্ধেক পাচ্ছেন কৃষকরা। কম দামেই কৃষকদের বাধ্য হয়ে খাদ্যশস্য বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। রাজ্য এই সমস্যায় কর্ণপাতই করছে না। সিপিএমের অভিযোগ, রাজ্যে যৌথ অভিযান বন্ধ করায় মাওবাদীরা সংগঠন মজবুত করেছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, দেশে মাওবাদীদের কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনার দাবি তুলেছে তৃণমূলও। সুদীপবাবুর দাবি, মাওবাদীদের কার্যকলাপ নিয়ে আমরাও আলোচনা চাই। |