দলের তরফে ‘আনুষ্ঠানিক ভাবে’ যা-ই বলা হোক, কংগ্রেসে রাহুল গাঁধীর গুরুত্ব ও ভূমিকা যে অতি দ্রুত বাড়ছে, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ ভোটে কংগ্রেসের প্রার্থী বাছাই থেকে প্রচার সব দায়িত্ব ইতিমধ্যেই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন রাহুল। আর এ বার ২০১২ সালে বকেয়া চার রাজ্যের ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ‘স্ক্রিনিং কমিটি’ও গড়ে দিলেন তিনি। বহু দিনের ‘প্রথা’ ভেঙে প্রবীণদের পরিবর্তে সেখানে নিয়ে এলেন আনন্দ শর্মা, গুলাম নবি আজাদ, সি পি জোশী, অস্কার ফার্নান্ডেজের মতো অপেক্ষাকৃত কমবয়সী নেতাদের। যার অর্থ, শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, ২০১২ সালের সবক’টি ভোটের প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে প্রচারের কৌশল নির্ধারণ সব ক্ষেত্রেই বৃহত্তর ভূমিকা নিচ্ছেন গাঁধী পরিবারের এই তরুণ প্রজন্ম। একই সঙ্গে দিল্লিতে আসন্ন পুরসভা নির্বাচন ও যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্মেলনের আগে আজ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত ও প্রদেশ সভাপতি জয়প্রকাশ অগ্রবাল-সহ রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি।
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, সামগ্রিক ভাবে কংগ্রেসের সার্বিক সাংগঠনিক দায়িত্ব যে রাহুল ক্রমশই নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন, তা বেশ স্পষ্ট। আর তাতেই দলের অন্দরে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্নে এখন ‘পরিবর্তনের’ হাওয়া! বিশেষত যে দল ভোটের দু’সপ্তাহ আগে পর্যন্ত প্রার্থী বাছাই করতে হিমসিম খেতে অভ্যস্ত ছিল, সেই কংগ্রেসই এখন ছ’মাস আগে থেকে রাজ্যে রাজ্যে প্রার্থী ঘোষণায় তৎপর। গত কাল গভীর রাতে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের আরও ৭৮ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু দলে প্রচলিত ব্যবস্থার মতো তালিকা প্রকাশ করেই ক্ষান্ত
থাকেননি রাহুল। বরং তার মধ্যে দিয়ে মায়াবতীকে সমালোচনা করে বলেছেন, “মায়াবতীর সামাজিক পুনর্বিন্যাস লোকদেখানো। তুলনায় কংগ্রেসের প্রার্থী বাছাইয়ে বহুত্ববাদের প্রতিফলন ঘটেছে।”
আগামী বছর যে চার রাজ্যে ভোট, সেখানকার জন্য রাহুল যে স্ক্রিনিং কমিটি গড়েছেন তা এখনও ঘোষণা করা হয়নি। তবে কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, রাহুলের পরামর্শ অনুযায়ী পঞ্জাবের স্ক্রিনিং কমিটির চেয়ারম্যান করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সি পি জোশীকে। বাণিজ্য মন্ত্রী আনন্দ শর্মাকে উত্তরাখণ্ডের, স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদকে মণিপুরের এবং অস্কার ফার্নান্ডেজকে গোয়া-র স্ক্রিনিং কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের কমিটি আগেই তৈরি করে দেন রাহুল।
সে ক্ষেত্রেও অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতা মোহনপ্রকাশকে কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়।
অথচ এর আগে জনার্দন দ্বিবেদী, মতিলাল ভোরা, বি কে হরিপ্রসাদের মতো প্রবীণ নেতাদেরই স্ক্রিনিং কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হত। রাহুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, তিনি এমন নেতাদের প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দিতে চাইছেন, যাঁদের জমির সঙ্গে যোগ রয়েছে। কারণ শুধুই সদর দফতরে বসে সাংগঠনিক দায়িত্ব যাঁরা পালন করেন, তাঁদের পক্ষে জমির প্রকৃত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বোঝা সম্ভব নয়। রাহুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বক্তব্য, প্রবীণদের স্ক্রিনিং কমিটির দায়িত্ব দেওয়ার নেতিবাচক ফল অতীতে দেখা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে স্বজনপোষণেরও আশঙ্কা থাকে। অতীতে এমন ব্যক্তিও টিকিট পেয়েছেন, যিনি অতীতে সংশ্লিষ্ট আসনে দু’-তিন বার দাঁড়িয়েও হেরেছেন। এখন সেই প্রথা ভাঙতে চাইছেন রাহুল।
আর সেই অঙ্কেই এ বার উত্তরপ্রদেশে প্রচুর প্রার্থী বদল করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ঘোষিত ২১৩ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশই নতুন মুখ।
আরও একটি বড় বিষয় হল, এ ধরনের কমিটি গঠন নিয়ে আগে সনিয়াই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন। এখন বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন রাহুল আর তাতে অনুমোদন দিচ্ছেন সনিয়া।
সব মিলিয়ে স্পষ্ট, আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের দায়িত্ব নেওয়াটাই বাকি রয়েছে রাহুলের। যা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। |