অবশেষে জট কাটল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির হস্তক্ষেপে নিজেদের আপত্তি থেকে সরে এসে বাবুঘাট থেকে প্রিন্সেপ ঘাট পর্যন্ত গঙ্গার ঘাটগুলির সংস্কারে সবুজ সঙ্কেত দিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা একটি চিঠিতে অ্যান্টনি জানিয়েছেন, “গঙ্গার সৌন্দর্যায়নের জন্য কলকাতা পুরসভাকে প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”
প্রিন্সেপ ঘাট থেকে সর্বমঙ্গলা ঘাট এই ১১ কিলোমিটার দূরত্বে গঙ্গার দু’পারের মোট ১৪টি ঘাট ও তীর সংলগ্ন এলাকা সংস্কার করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রথম পর্যায়ে বাবুঘাট থেকে প্রিন্সেপ ঘাট পর্যন্ত সংস্কারের কাজ হওয়ার কথা থাকলেও যে হেতু ওই এলাকাটি কলকাতা ময়দানের ‘ব্লু জোনের’ আওতায় রয়েছে, তাই পুরসভার কাজে আপত্তি জানায় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কম্যান্ড। বিষয়টি নিয়ে জটিলতা কাটাতে গত ১০ মার্চ সেনাকে একটি চিঠিও লেখে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। গোটা বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। গত জুলাই মাসে অ্যান্টনির সঙ্গে দেখাও করেন সুদীপবাবু। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “তার পরেই জল গড়ায়। মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ইস্টার্ন কম্যান্ডকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। এখন পুরসভা ওই এলাকায় কাজ শুরু করতে পারবে।”
তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কলকাতা পুরসভাকে কাজ করার অনুমতি দিলেও এ বিষয়ে সেনার পক্ষ থেকে বেশ কিছু শর্তও রাখা হয়েছে। প্রথমত, কলকাতা পুরসভা কেবলমাত্র ওই এলাকায় মেরামতি ও সংস্কারের কাজই করতে পারবে। কোনও ধরনের স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, ওই এলাকায় সংস্কারের কাজের দায়িত্ব পুরসভার হাতে থাকলেও তাদের কোনও সম্পত্তির অধিকার থাকবে না। তৃতীয়ত, সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে কোনও ধরনের গাছ কাটা যাবে না এবং গাছের চারপাশে সিমেন্টের বেদী নির্মাণেও আপত্তি রয়েছে সেনার। এ ছাড়া, ওই এলাকায় কোনও ধরনের বাণিজ্যিক হোর্ডিং লাগানো যাবে না বলেও জানিয়েছে সেনাবাহিনী। ওই এলাকায় কোনও মেলা, অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী বা শু্যটিং করাও সেনার অনুমতিসাপেক্ষ বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
বর্তমানে কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে ঘাট ও সংলগ্ন এলাকা সংস্কারের ক্ষেত্রে যে কাজগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, সেগুলি হল:
• নদীর তীরবর্তী রাস্তা এবং ঘাট থেকে বড় রাস্তায় আসার পথ থেকে স্তূপাকার হয়ে থাকা জঞ্জালের অপসারণ।
• রাস্তা মেরামতি করা, যাতে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে সমস্যা না হয়।
• জবরদখল হটানো।
• বেআইনি মদের আসর ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করা।
• চক্ররেলের পথে জঞ্জাল সরানো। |