সরকারই মেলা পরিচালনা করবে। সল্টলেক মেলা যাতে বন্ধ না হয় তার জন্য, অন্তত এ বারের মতো সরকার সরাসরি মেলা পরিচালনার সঙ্গে নিজেদের জড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের সঙ্গে অবশ্যই থাকবে বিধাননগর পুরসভা। রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, প্রতিবারের মতো জানুয়ারিতেই বিধাননগর মেলা হবে। ১১ একরের এই মেলা প্রাঙ্গণের ভাড়া ৫০ গুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগরোন্নয়ন দফতর। এত দিন এই মেলা প্রাঙ্গণ থেকে সরকারের দৈনিক আয় ছিল এক হাজার টাকা। এখন থেকে তা বেড়ে হবে ৫০ হাজার টাকা।
সম্প্রতি বিধাননগরের মেলা প্রাঙ্গণকে ঘিরে জটিলতা তৈরি হয়। অভিযোগ, এত কম ভাড়ায় সরকারের কাছ থেকে মেলা প্রাঙ্গণ ভাড়া নিয়ে মেলার উদ্যোক্তারা কোটি কোটি টাকা আয় করে। অথচ সরকার তার বিনিময়ে কিছুই পায় না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের কর-বহির্ভূত রাজস্ব বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়ার পরেই নগরোন্নয়ন দফতর এই দিকটিতে নজর দেয়। সল্টলেকে করুণাময়ীর কাছে, সেন্ট্রাল পার্কের ১১ একর জমি নিয়ে যে মেলা প্রাঙ্গণটি গড়ে উঠেছে তার জন্য নগরোন্নয়ন দফতরের খরচ হয়েছিল পাঁচ কোটি আট লক্ষ টাকা। সেই বিনিয়োগ কার্যত কিছু মানুষ আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করছিলেন বলে অভিযোগ।
রাজ্যে এবং বিধাননগর পুরসভায় রাজনৈতিক পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এই অভিযোগগুলি মুখ্যমন্ত্রী থেকে নগরোন্নয়ন মন্ত্রী, সকলেরই গোচরে আসে। খতিয়ে দেখা হয় মেলার উদ্যোক্তাদের আয়ের পরিমাণ। দেখা যায় বিধাননগর মেলার উদ্যোক্তা কমিটি প্রায় বিনামূল্যে সরকারের কাছ থেকে মেলা প্রাঙ্গণ নিয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করছে। সরকারি এক কর্তা উদাহরণ টানতে গিয়ে বলেন: ১১ একর অর্থাৎ ৩৩ বিঘা অর্থাৎ ৬৬০ কাঠা। বর্গফুটের হিসেবে ধরলে মোট জায়গা ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ২০০ বর্গফুট। এই জায়গার অর্ধেকও যদি মেলার উদ্যোক্তারা স্টলের জন্য ভাড়া দেন তবে সেই জায়গার পরিমাণ ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬০০ বর্গফুট। উল্লেখ্য, গত বছরেও ৩০ দিনের জন্য উদ্যোক্তারা ৬০ থেকে ১২৫ টাকা দরে প্রতি বর্গফুট জায়গা ভাড়া দেন। গড়ে ১০০ টাকাও যদি প্রতি বর্গফুট ভাড়া হয়, তবে উদ্যোক্তারা দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা আয় করেছেন। সরকার কী পেয়েছে? মেলা প্রাঙ্গণের মালিক, নগরোন্নয়ন দফতর পেয়েছে ৩০ হাজার টাকা। পুরসভা পরিষেবা বাবদ পেয়েছে ৫ লক্ষ টাকা। ফায়ার লাইসেন্স বাবদ দমকল পেয়েছে ৬০ হাজার টাকা। স্টলে ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল উদ্যোক্তারা দোকানিদের থেকেই আদায় করেছে।
নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আগের সব মেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে সল্টলেকবাসী যাতে বঞ্চিত না হন সেই দিকে লক্ষ রেখেই আমরা এ বারের মতো মেলার আয়োজনে উদ্যোগী হয়েছি। পরের বছর কীভাবে কী করা যায় তা পরে দেখা যাবে।” সরস মেলা-সহ অন্য সব সরকারি মেলা ওই প্রাঙ্গণে হবে বলেও জানা গিয়েছে। |