|
|
|
|
উন্মুক্ত শিল্পপ্রদর্শনী হচ্ছে উত্তরসেহেলায় |
অরুণ মুখোপাধ্যায় • শান্তিনিকেতন |
শিল্পকর্ম শুধু চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এমনকী ছবি আঁকা বা ভাস্কর্য তৈরি করাকে ‘আর্ট’ বলা যায় না। প্রাকৃতিক পরিবেশে কোনও শিল্পকর্ম করলেও তা ‘আর্টে’র মধ্যে পড়ে। তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল আগেই। গত বছর জানুয়ারি মাসে ইলামবাজারের কাছে দ্বারন্দা গ্রামে অনুষ্ঠিত রাজ্য আদিবাসী সংস্কৃতি উৎসবে। এ বার সেই রকম একটি শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন জাপানের ৮ জন পুরুষ ও মহিলা শিল্পী। তাঁরা শিল্প প্রদর্শনীর জন্য বেছে নিয়েছেন শান্তিনিকেতন থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে উত্তরসেহেলা গ্রামটিকে।
গত বছর স্থানীয় একটি ফুটবল মাঠে হুবহু তুলে আনা হয়েছিল দ্বারন্দা আদিবাসী গ্রামটিকে। সেই কাজ হয়েছিল বিশিষ্ট নাট ব্যক্তিত্ব রতন থিয়ামের পরিকল্পনায়। চট ও খড় দিয়ে আদিবাসীদের বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। যা উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে শিল্পের চেহারা নিয়েছিল। ঠিক ওই রকম না হলেও কোপাই নদী ঘেরা আদিবাসী গ্রাম উত্তরসেহেলাকে নিয়ে শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন জাপানের ৮ তরুণ শিল্পী। |
|
ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী |
এই গ্রামে ৬০-৭০টি আদিবাসী ঘর আছে। গ্রামের চার পাশে রয়েছে ধানের জমি। একটিমাত্র ডোবায় গ্রামের মহিলারা স্নান করেন। ওই ডোবায় একদল হাঁস ও বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায় মুরগির পাল। ফাঁকা মাঠের মধ্যে একটি প্রাথমিক স্কুল। পড়াশোনার পরে কচিকাঁচারা খেলায় মেতে ওঠে। এই সব চিত্রকে নাটকীয় করে তোলার জন্য প্রাথমিক স্কুল থেকে একটু দূরে দু’টি বাঁশের সাহায্যে টাঙানো হয়েছে কমলা রঙের বিশাল পর্দা। পাশাপাশি আরও দু’টি বাটিকের পর্দা দাঙানো হয়েছে। এ ভাবেই গ্রামটিকে নাটকের মঞ্চের মতো করে দেখতে চাইছেন জাপানের ওই তরুণ শিল্পীরা। হাওয়ার ওড়া পর্দার আড়াল দিয়ে দেখা গ্রামবাসীদের জীবনযাবন সত্যিই নাটকীয় হয়ে উঠেছে। আর সেখানে বাড়ি, হাঁস, মুরগি সবই কুশীলব।
ওই শিল্পী দলের কর্ণধার জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সোহে আয়ু আট্টা গত তিন বছর ধরে শান্তিনিকেতনে রয়েছেন। বহু গ্রাম ঘুরে শেষ পর্যন্ত উত্তর সেহেলাকে নির্বাচন করেছেন। পরে অন্য শিল্পীরা গ্রামে আসেন। গত শনিবার থেকে ওই শিল্প প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। কাল শনিবার পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে। ওই প্রদর্শনীর নাম রাখা হয়েছে ‘আর্ট ইন পাবলিক প্লেস’। ওই শিল্পীদের কথায়, “শুধু ছবি আঁকা বা ভাস্কর্য তৈরি ‘আর্ট’ নয়। এ ভাবেও শিল্প করা যায়। এটি তারই পরীক্ষা।” শিল্পীদের এই ভাবনাকে মর্যাদা দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসী মোহন কিস্কু, ছুতোর কিস্কুরা বলেন, “ওড়া পর্দার আড়াল দিয়ে নিজেদের গ্রামটিকে দেখতে বেশ ভাল লাগছে। নিজেদেরকেও অন্য রকম মনে হচ্ছে।”
ওই শিল্পীরা একটি উন্মুক্ত শৌচাগারকে বাঁশ ও তালপাতা ও খড় দিয়ে বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীদের ওই রকম বাড়ি তৈরি করে নিতে বলেছেন। বাড়ির বাইরের দেওয়ালে স্টিলের থালা পেরেক দিয়ে বসানো হয়েছে। যাতে রাতে চাঁদের আলো ওই থালায় পড়লে এলাকা আলোকিত হয়ে থাকবে। আর তৈরি করা হয়েছে সিমেন্টের বড় জলাধার। সেটি অনেক উঁচুতে রয়েছে। জলাধারের মুখ তালপাতা দিয়ে ঢাকা। ডোবার সঙ্গে পাইপ যোগ করে বিদ্যুতের সাহায্যে জল তোলা হচ্ছে ডোবায়। সেই জল গ্রামবাসীরা ব্যবহার করতে পারবেন। ওই শিল্পীরা যেমন শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন তেমনি কী ভাবে ছোট জিনিস কাজে লাগানো যায় তাও দেখাচ্ছেন তাঁরা। |
|
|
|
|
|