সহায়ক মূল্যে ধান কেনা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে জেলার চালকলগুলিতে অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও খাদ্য দফতর। মঙ্গলবার জেলাশাসক কয়েকটি চালকলে পরিদর্শনে যান। বৃহস্পতিবার তিনি এবং জেলা প্রশাসনের অন্য আধিকারিকেরা কয়েকটি চালকলে হাজির হন। আগের দিন রায়নার একটি চালকলে বাঁকুড়ার পাত্রসায়র থেকে আনা ধানভর্তি ট্রাক্টর দেখতে পান জেলাশাসক। এ দিনও গলসির একটি চালকলে বীরভূমের রামপুরহাট থেকে আসা প্রায় ৩০০ বস্তা ধান বোঝাই দু’টি ট্রাক দেখতে পান প্রশাসনের আধিকারিকেরা। এই ধান সরকারি সহায়ক মূল্যের নীচে কেনা হয়েছে কি না, তার তদন্ত শুরু হয়েছে।
জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “জেলার মোট ৪৭০টি চালকলকে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সহায়ক মূল্য অনুযায়ী কুইন্ট্যাল পিছু সাধারণ ধানের ক্ষেত্রে ১০৮০ টাকা এবং সরু ধানের ক্ষেত্রে ১১২০ টাকার কম দামে ধান কেনা যাবে না। এই কাজ করতে হবে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।” ধান কেনার টাকা চাষিদের ‘অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক’-এর মাধ্যমে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ধান কেনার হিসেবে গোলমাল ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট চালকলকে বাজারে চাল বিক্রির জন্য শংসাপত্র দেওয়া হবে না বলে তিনি জানিয়েছেন।
গত ১ অক্টোবর থেকে ধানের অভাবি বিক্রি রুখতে সরকার সহায়ক মূল্যে ধান কিনতে শুরু করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া মাঝে যে যথেষ্ট বিলম্বিত হয়েছিল তা কবুল করেন জেলাশাসক। তিনি বলেন, “কিছু চালকল দাবি করছিল, এলাকায় ধান মিলছে না। তাই ব্লক অফিসগুলিকে চালকলের সঙ্গে গাঁটছাড়া বেধে ধান কিনতে বলা হয়। সেই কাজও জেলার বিভিন্ন ব্লকে, বিশেষত ভাতারে গত ১৪ নভেম্বর বন্ধ হয়ে যায়। তাই প্রশাসন পরিস্থিতির উপর নজর রাখা শুরু করেছে।”
চাষিদের অভিযোগ, সহায়ক মূল্যে ধান কেনার ব্যাপারে চালকলগুলি টালবাহানা করছে। মঙ্গলকোটের স্বপন দত্ত, রায়নার দেবেন্দ্রকুমার আশদের কথায়, “চাষিরা নিজেদের খরচে ধান নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রির জন্য। কিন্তু কখনও কর্মী নেই বলে দেরি করানো, কখনও ধানের মান খারাপ বলে দাবি করা হচ্ছে। বস্তা পিছু প্রায় ৪-৫ কিলোগ্রাম করে ধান বাদ দিয়েই তা কিনছে চালকল। জেলাশাসক অবশ্য বলেন, “এখন চাষিরা যে ধান বিক্রি করতে চালকলে আনছেন, সেগুলি বেশ কয়েক দিন ধরে রাখা। তাই কিছুটা ধান বাদ দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তবে কোনও চালকল যদি ধান কিনতে অস্বীকার করলে চাষিরা যেন খাদ্য ইন্সপেক্টর বা বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেন। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”
জেলাশাসকের আশ্বাস, “খরিফে প্রায় ১৪-১৫ লক্ষ মেট্রিক টন ধান হবে। তার মধ্যে অন্তত ৭-৮ লক্ষ মেট্রিক টন ধান সরকার কিনবে। শীঘ্রই বেনফেড-কনফেডের মাধ্যমেও ধান কিনবে সরকার। তাই চাষিদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
এ দিকে, জেলা চালকল সমিতির সভাপতি দেবনাথ মণ্ডল বলেন, “ধান না পেয়েই অনেক চালকল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এত দিন ধান এনে দিতেন ব্যবসায়ীরা। এখন এই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কেনা বন্ধ রয়েছে। এ দিকে, অন্য জেলা থেকে ধান আনার ব্যাপারেও প্রশাসনের আপত্তি রয়েছে। এ দিকে, চাষিরা যে ধান আনছেন তা নিম্নমানের। তাই লোকসানের আশঙ্কায় অনেক চালকলই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” |