সারা বছরের অপেক্ষার অবসান।
আজ, শুক্রবার কাটোয়া শহরে কার্তিকের শোভাযাত্রা। যা আক্ষরিক অর্থেই ‘লড়াই’। আর এই লড়াইয়ে জিতবে কে, আজ রাতে তার বিচার করবে জনতাই।
‘থিম’ পুজোর উদ্যোক্তারা অবশ্য কার্তিকের এই শোভাযাত্রায় যোগ দেন না। যোগ দেন মূলত ‘থাকা’ পুজোর উদ্যোক্তারা। বাঁশের খাঁচায় ২৫-৩০টি পুতুল থাকে থাকে সাজানো হয়। পুরাণের বিভিন্ন কাহিনী থাকায় তুলে ধরা হয়। যদিও সেখানে অন্যান্য দেবদেবীর ভিড়ে গৌণ হয়ে পড়েন খোদ দেব সেনাপতিই।
‘থাকা’য় অন্যান্য দেবদেবীর আবাহন হলেও বিসর্জন হয় না। কার্তিক-লড়াই শেষ হলেই তাঁদের ঠাঁই হয় ক্লাবঘরে কিংবা কোনও বাড়ির চিলেকোঠায়। আবার লড়াইয়ের সুর বাজতেই মূর্তিগুলিকে নামানো হয়। পরিষ্কার করে পাঠানো হয় পাল বাড়িতে। সেখানে মূর্তিগুলিকে মেরামত করা হয়। রঙের প্রলেপ পড়ে মূর্তির গায়ে। প্রয়োজনে বদলে যায় মূর্তির মুখও। এই থাকা পুজোর উদ্যোক্তারা বলেন, “থাকা প্রচলন হওয়ার পর থেকেই এই ব্যবস্থা চলে আসছে। সম্ভবত আর্থিক কারণেই এই ব্যবস্থা চালু হয়। সেই প্রথা এখনও চলে আসছে।” |
বিভিন্ন পুজোর চিরাচরিত প্রথা অবশ্য ভেঙেছে। কিন্তু কাটোয়ার থাকার থিম আজও সেই পুরাণ কাহিনীকে ঘিরেই। কাটোয়ার তাঁতিপাড়ার শান্তনু চট্টোপাধ্যায়, কলেজ ছাত্র সায়ন মুখোপাধ্যায়রা মনে করেন, “পুরাণ কাহিনী ছাড়াও আধুনিক কোনও কাহিনী বা বিজ্ঞানকে সামনে রেখে থাকতা সাজানোর কথা ভাবা যেতেই পারে।” এ বছর প্রতিবাদ ও আওয়াজ ক্লাবের থাকা সাজিয়েছেন গৌরাঙ্গপাড়ার নিত্যগোপাল গোস্বামী। তিনি বলেন, “চিরাচরিত প্রথার বাইরে কেউ ভাবতে চান না। পরেব বার উদ্যোক্তাদের পরিবর্তন আনার কথা বলব।”
কাটোয়ার কার্তিক লড়াইয়ে এই থাকার আকর্ষণে কলকাতা-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন ভিড় জমান। কলকাতার টালিগঞ্জের সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বিভিন্ন জায়গায় লোক উৎসব নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, “রাসে বিভিন্ন জায়গায় থাকা হয় ঠিকই, কিন্তু কোথাও এত সুন্দরভাবে গল্প তুলে ধরা হয় না। এখানে থাকার ফিনিসিংও অনেক ভাল।”
উদ্যোক্তাদের দাবি, নতুন প্রজন্ম আর ‘থাকা’ তৈরিতে এগিয়ে আসছেন না। ফলে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। কুমোরপাড়া, চাউলপট্টি এ বার ‘থাকা’ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, থাকা তৈরির জন্য কারিগর পাওয়া যায়নি। তাই আর থাকা তৈরি করা যায়নি। |
অন্য দিকে, দীর্ঘ ১৫ বছর পরে নিচুবাজার ব্যবসায়ীবৃন্দ ফের ‘সিংহ দরজা’য় কার্তিক পুজো করছেন। এক সময় তাঁরা ‘থাকা’ করতেন। এ বার দৃশ্যাঙ্কনের মাধ্যমে পুজো করেছেন। এখানকার ব্যবসায়ী শ্যামল শেখ, বাপি দাসরা বলেন, “এক পীরবাবার মাজারে যাওয়ার পথটি সিংহ দরজা বলে পরিচিত। সিংহ দরজার সঙ্গে কার্তিক লড়াই ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত। লোকজনের অভাবে পুজো বন্ধ ছিল। আবার শুরু হল।”
কার্তিক লড়াই নিয়ে প্রস্তুতিও চরমে। হরেককম বাদ্য আর আলোকসজ্জা নিয়ে লড়াইয়ের জন্য তৈরি কাটোয়া। এক একটি পুজো উদ্যোক্তা চার-পাঁচ রকমের ব্যদ্য রাখবেন বলে জানা গিয়েছে।
তবে কাটোয়াবাসীর জন্য সুখবর! এ বার ‘জলসা’ কিংবা লড়াইয়ে ‘ডিস্কোজকি’ (ডিজে) বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। ফলে শব্দ দূষণের হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবেন তাঁরা। |