আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোচবিহারের দিনহাটায় কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্ট শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক হাত মেলাতে পারে বলে আশঙ্কা করে কর্মীদের সতর্ক করে দিল সিপিএম। সম্প্রতি দলের কোচবিহারের ভেটাগুড়ি লোকাল সম্মেলনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে ওই আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে দলীয় কর্মীদের আগে থেকে সতর্ক হওয়ার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমত অস্বস্তিতে পড়েছেন কোচবিহার জেলা সিপিএম। কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন জেলার ফরওয়ার্ড ব্লক নেতারাও। সব মিলিয়ে দুই বাম শরিকের কাজিয়া চরম আকার নেওয়ার আশঙ্কা করছে রাজনৈতিক মহল। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বেণুবাদল চক্রবর্তী বলেন, “দলের লোকাল কমিটির সম্মেলনে স্থানীয় স্তরের ভাবনায় অনেক কিছুই উঠতে পারে। সেখানে আমাদের সমালোচনাও হয়। ভেটাগুড়ি লোকাল কমিটির ওই ধারণার কারণ নিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে বলে আমাদের আশা।” আর দলের ভেটাগুড়ি লোকাল সম্পাদক অমল আচার্য বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় আমরা আগাম প্রস্তুতিতে জোর দিচ্ছি।” দিনহাটার পুঁটিমারিতে খরখরিয়া প্রাথমিক স্কুলে গত ১২-১৩ নভেম্বর সিপিএমের ভেটাগুড়ি লোকাল সম্মেলন হয়। সম্মেলনে প্রতিনিধিদের মধ্যে বিলি করা সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে ‘অঞ্চলগত সংগঠন’ আলোচনায় ২০০৮ সালে নির্বাচনে সিপিএমকে নিশ্চিহ্ন করতে ফরওয়ার্ড ব্লক কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সঙ্গে মহাজোট করে লড়াইয়ে নমেছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তার পরেই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, আগামীতে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসছে। মনে হয় এই ফ্রন্ট শরিক মহাজোটের দিকে ছুটবে। এখন থেকেই আমাদের সতর্ক হতে হবে। গত বিধানসভায় আমাদের বিধায়কদের সকলকেই এরা হারিয়ে দিয়েছে। দলের নেতারা তা বুঝতে পারছেন কী না জানা নেই। এর পরেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লক কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তিনটি অঞ্চলে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। আমাদের পার্টিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার যে পরিকল্পনা করেছিল তা সফল হয়নি। পাশাপাশি, বিধানসভা এবং লোকসভায় জেতার জন্য সিপিএমকে ব্যবহার করা হয়ে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সিপিএমের অভিযোগ, দলের ভেটাগুড়ি লোকালের ভেটাগুড়ি ১ এবং ২ ছাড়াও পুঁটিমারি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ দিনহাটা মহকুমায় বিভিন্ন এলাকায় কংগ্রেস-তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে ফরওয়ার্ড ব্লক। সিপিএমকে আটকাতে বিরোধীদের সমর্থনে প্রধান পদও নেয়। ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতারা পাল্টা অভিযোগ করেন, দিনহাটার শুকারুরকুঠীতে ভোটের পর তৃণমূলের সমর্থনে প্রধানপদ দখল করে সিপিএম। পুঁটিমারিতে কংগ্রেস উপপ্রধানকে আনাস্থা এনে সরানো হয়। বামনহাট-১ এবং চৌধুরীহাট-সহ বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে বাম বিরোধীদের সরিয়ে সিপিএমের উপপ্রধান হয়েছেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “২০০৮ সালে নিচুতলায় ভুল বোঝাবুঝির জন্য কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল। পরে তা আলোচনার মাধ্যমে মেটানো হয়। তবে কোনও দল বা নেতা যদি তাঁদের কথাই শেষ কথা বলে এবার মনে করেন তাহলে সমস্যা হবে। আমরাও বাম ঐক্য চাই।” |