রাজ্যের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরের প্রতিমন্ত্রী প্রমথনাথ রায়ের পদত্যাগ দাবি করল তৃণমূল। সম্প্রতি রায়গঞ্জে এইমস-এর ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে কংগ্রেস যে আন্দোলনে নেমেছে, তাতে কালিয়াগঞ্জের ওই কংগ্রেস বিধায়কও সামিল হয়েছেন। তৃণমূলের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগ তুলেই কংগ্রেস আন্দোলনে নেমেছে। মন্ত্রীও ওই আন্দোলনে সামিল হয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।
মঙ্গলবার রায়গঞ্জে সাংবাদিক বৈঠক করে উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের অন্যতম নেতা তিলক চৌধুরী বলেন, “রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েও প্রমথনাথবাবু মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে সামিল হয়েছেন। তাঁর আর মন্ত্রিসভায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই। উনি এ বার পদত্যাগ করুন।” প্রমথনাথবাবু অবশ্য তৃণমূলের ওই দাবি নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন। তিনি বলেন, “মানুষের
স্বার্থে কাজ করছি। কে, কোথায় আমার পদত্যাগ দাবি করল তা নিয়ে মাথা ঘামানো বা মন্তব্য করার মানসিকতা আমার নেই।”
তৃণমূলের দাবি, আগামী পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কংগ্রেস হাসপাতাল নিয়ে রাজনীতি করছে। তিলকবাবু বলেন, “রায়গঞ্জে হাসপাতাল হোক, সেটা আমরাও চাই। এই ব্যাপারে দলের একটি প্রতিনিধিদল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে কলকাতায় যাবে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতাও কলকাতায় গিয়ে এই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। সেটা না করে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।”
রায়গঞ্জে এইমস-এর ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের দাবিতে কংগ্রেস লাগাতার আন্দোলনে নামার পরে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দুই জোট শরিকের মধ্যে তিক্ততা ক্রমশ বাড়ছে। ডালখোলায় কংগ্রেসের মিছিলের মধ্যে রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরীর গাড়ি ঢুকে পড়লে উত্তেজিত হয়ে পড়েন কংগ্রেস কর্মীরা। হাসপাতালের জমি অধিগ্রহণের দাবিতে সোমবার প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা রায়গঞ্জ শহরে মিছিল করেন। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের তরফে ২০ নভেম্বর থেকে পাল্টা আন্দোলনে নামার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
কংগ্রেস রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের পরিচালন সমিতি দখলের পরে এ দিন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কারচুপির অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। ওই নির্বাচন বাতিলের দাবিতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তিলকবাবু। পাশাপাশি, সোমবার সন্ধ্যায় কংগ্রেস কর্মীরা রেল অবরোধ করে যাত্রী এবং রেলকর্মীদের হেনস্থা করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। রেল-কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার আর্জিও জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তিলকবাবুর অভিযোগ, “সামান্য কারণে কংগ্রেস সোমবার ট্রেন অবরোধ করে যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলেছে। রেলকর্মীদের হেনস্থা করেছে। স্কুল নির্বাচনেও ব্যাপক কারচুপি এবং ছাপ্পা ভোট হয়েছে। সেই জন্য আমরা নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছি।”
জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের পাল্টা দাবি, “রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তকে পরিকল্পিত ভাবে রেলের ‘কোটা’র টিকিট থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা হয়েছে। সেই জন্যই রেল অবরোধ করে প্রতিবাদ করা হয়েছে। যাত্রীদের হেনস্থার প্রশ্ন নেই।
স্কুল নির্বাচন নিয়েও তৃণমূলের ভিত্তিহীন অভিযোগের জবাব দিতে চাই না।” রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ভিত্তিহীন। সরকারি নিয়ম মেনে নির্বাচন হয়েছে।” |