প্রতারণা মামলার তদন্তে নেমে লগ্নিকারী ও মোটা অঙ্কের কমিশন প্রাপকদের তালিকা তৈরি করছে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি জানান, শিলিগুড়ি পুলিশ যে তালিকা তৈরির কাজে নেমেছে, তাতে অন্তত ১ হাজার জনের নাম উঠে এসেছে। যারা ওই সংস্থায় দ্বিগুণ লাভের আশায় টাকা লগ্নি করেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা লগ্নি করিয়ে প্রচুর পরিমাণ কমিশন পেয়েছেন তাঁদের সকলের ব্যাপারে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “অতি অল্প সময়ে প্রচুর পরিমাণ টাকা এবং গাড়ি পেয়েও বিষয়টি নিয়ে নিশ্চুপ ছিলেন অনেকে। অনেকে প্রতারক সংস্থাটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাজার থেকে টাকা ওঠানোর কাজ করেছেন। প্রথম সারিতে যারা ছিলেন তাদের একটি আলাদা তালিকা তৈরি হচ্ছে। প্রত্যেক অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করা হবে।’’ পুলিশ ইতিমধ্যেই প্রতারণা মামলায় প্রতারক সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর রামশা জীবন সাহেবরাম চৌধুরী, জীবন বিমা নিগমের কর্মী রাজীব ভদ্র, বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী রণবীর দাস ও দেবব্রত পালকে গ্রেফতার করেছে। আটক করেছে একটি দামী মোটর বাইক ও বিলাসবহুল গাড়ি। একজন অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষকের নামও ধৃতদের জেরায় জানতে পেরেছে পুলিশ। ওই শিক্ষকের ব্যাপারেও বিশদে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। রবিবার রাতে শহরের মিলনপল্লি থেকে একটি দাবিদারহীন ছোট গাড়িও আটক করে পুলিশ। রাস্তার পাশে সেটি রাখা ছিল। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ওই গাড়িটিও প্রতারণা মামলায় অভিযুক্তদের কারও। গাড়ির মালিকের খোঁজে তল্লাশিতে নেমেছে পুলিশ। এই ব্যাপারে মহকুমা পরিবহণ দফতরের সঙ্গেও পুলিশ যোগাযোগ করেছে। আরও বেশ কয়েকজন অভিযুক্তের খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে। মুম্বইয়ের ওই সংস্থার বেশ কয়েকজন কর্তার ছবিও পুলিশের হাতে এসেছে। তাঁদের অনেকেই পালিয়ে আছেন বলে পুলিশ সুপার জানান। তাঁদের শনাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। এদিকে, ধৃতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রচুর টাকা লেনদেনের প্রমাণ মেলার পরে মঙ্গলবারও তদন্তকারী অফিসাররা এই ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ধৃত রাজীব ভদ্রের শিলিগুড়ি শহরে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। পুলিশের দাবি, তার মধ্যে স্টেশন ফিডার রোডের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে ১৬টি অ্যাকাউন্ট মিলেছে। মুম্বইয়ের ওই সংস্থাটি লগ্নিকারীদের গত জানুয়ারি মাস থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ করলেও ধৃত রণবীর দাসের স্ত্রী দেবলীনা দেবীর অ্যাকাউন্টে জুন মাসেও সংস্থাটি টাকা লেনদেন করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের সন্দেহ, মুম্বইয়ের ওই সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ মামলা দায়ের হওয়ার পরেই দেবলীনা দেবীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সমস্ত টাকা তুলে নেওয়া হয়। একই ভাবে স্টেশন ফিডার রোডের বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা সরিয়ে নেন রাজীবও। কোন ব্যাঙ্কে টাকা সরানো হয়েছে তার সন্ধান চলছে। এই ব্যাপারে ধৃতদের ফের জেলা করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। রাজীবের আইনজীবী সুনীল সরকারের বক্তব্য, রাজীবের কাছে যে তথ্য ছিল তা তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন। পুলিশকে তিনি সমস্ত রকম ভাবে সাহায্য করেছেন। তাও পুলিশ তাঁকে জেরার নামে হেনস্থা করছে। হেনস্থার অভিযোগ উড়িয়ে দেন তদন্তকারী অফিসারেরা। |