গত ১১ বছরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের জন্য বরাদ্দ ৩৭০ কোটি টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে ‘স্পেশাল অডিট’ করানোর নির্দেশ দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ির সার্কিট হাউসে উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার প্রশাসনিক আধিকারিক নিয়ে বৈঠক করেন গৌতমবাবু। সেখানে ছয় জেলার বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে কী ভাবে ‘স্পেশাল অডিট’ হবে তারও রূপরেখা তৈরির জন্য অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। পাশাপাশি, বতর্মানে পর্ষদের চলতে থাকা ৩৬১টি প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়মিত তদারকির নির্দেশও দিয়েছেন মন্ত্রী। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য ও পরিসংখ্যানের সঙ্গে সামঞ্জস্য পূর্ণ ভিডিও ফুটেজও সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের কাছে চেয়েছেন মন্ত্রী। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “বামেদের আমলে ১১ বছরে পর্ষদের জন্য সব মিলিয়ে ৩৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। ওই টাকায় কীভাবে, কোন প্রকল্পে, কতটা, কেমন খরচ হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে ‘স্পেশাল অডিট’ করা হবে। এ ছাড়া বর্তমানে পর্ষদের ৩৬১ টি প্রকল্পের কাজ চলছে। সেগুলিও খতিয়ে দেখা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি অনুমোদন করেছেন। দ্রুত ওই অডিট শেষ করা হবে।” উল্লেখ্য, রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরেই প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে পর্ষদের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পর্ষদের পক্ষ থেকে এদিন বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজে গতি আনতে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। তার মধ্যে অগ্রাধিকারের তালিকায় জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী পরিকাঠামো, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া জমিতে ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, পাহাড়ে বালাসন জলপ্রকল্প রয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সমস্ত রাস্তার সংস্কারের জন্য পূর্ত দফতর এবং মহাসড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফের আলোচনা করে তা দ্রুত সম্পূর্ণ করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলির উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রকল্প (বিআরডিএফ) পাঠানোর জন্য সমীক্ষার কাজ শীঘ্রই শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এদিনের বৈঠকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, পূর্ব ঘোষণা মতো মাটিগাড়ার উত্তরায়ণ উপনগরীতে মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গের সচিবালয় তৈরি করা হবে না। কারণ, ওই এলাকায় উপনগরী প্রকল্পের গোড়াপত্তনের সময়ে পুলিশের গুলিতে দুজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী সেখানে সচিবালয় করতে রাজি নন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “সচিবালয় ওই উপনগরীতে হচ্ছে না। চা বাগান আন্দোলন এবং শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ওই জমিকে ঘিরে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী চান না সেখানে কোনও কাজ হোক। আমরা অন্যত্র জমি দেখেছি। সমীক্ষার কাজও শেষ হয়েছে। শিলিগুড়ি শহরের মধ্যে কিংবা লাগোয়া এলাকায় সরকারি জমিতে তা হবে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, বৈঠকে আসন্ন উত্তরবঙ্গ উৎসব নিয়েও আলোচনা হয়। ওই উৎসব শুরু হবে ৩১ ডিসেম্বর। শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়িতে নানা অনুষ্ঠান হবে। সপ্তাহ ব্যাপী উৎসব সফল করতে জেলাশাসকদের উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী।
|
মন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকা |
১। জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী পরিকাঠামোয় বরাদ্দ ৬.৫ কোটি টাকার কাজে দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়া শুরু।
২। বালুরঘাটে কৃষি কলেজ এবং কোচবিহারে ভিক্টর প্যালেস পর্যটন দফতরের হাত থেকে নিয়ে সেখানে রাজবংশী অ্যাকাডেমি চালু। ডুয়ার্সে ‘আর্চারি’ অ্যাকাডেমি গড়ে তোলা।
৩। আগামী বছরের মার্চ মাসেই তিস্তা নদীর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ৩২ মেগাওয়াটের উৎপাদন নিশ্চিত করা। পশ্চিমবঙ্গই এই বিদ্যুৎ পাবে।
৪। তিস্তা সেচ প্রকল্পের বাঁ হাতি এবং ডান হাতি খাল থেকে জানুয়ারিতে জল ছাড়া। প্রকল্পের জমি অধিগ্রগ্রণের জটিলতা নিয়ে ৯ ডিসেম্বর ইসলামপুরে বৈঠক।
৫। দার্জিলিংয়ে বালাসন জল প্রকল্পের পুরানো সমস্ত পাইপ মেরামত করে দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করা। |
|