পাঁচ মাস ধরে প্রশাসনের তাগাদা সত্বেও নিজের এলাকায় ‘উন্নয়নের’ কী কাজ হবে তা জানাতেই পারেননি জলপাইগুড়ি জেলার ৫ বিধায়ক। ঘটনাচক্রে এই পাঁচ জনের মধ্যে চারজনই বাম বিধায়ক এবং একজন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার। তার ফলে বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলে সব বিধায়কের খাতে প্রথম কিস্তির ত্রিশ লক্ষ টাকা করে গত অগস্ট মাসেই বরাদ্দ হয়ে গেলেও, কাজ শুরু করতে পারছে না জেলা প্রশাসন। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা বরাদ্দের সময় হলে এসেছে। প্রথম কিস্তির টাকার কাজ শুরু না হওয়ায় আদৌও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়া যাবে না বলেই আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন। বাকি বিধায়কদের ক্ষেত্রেও দু’তিন জন ছাড়া কেউই পুরো বছরের কাজের তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেয়নি বলে জানা গিয়েছে। বহুবার বিধায়কদের তাগাদা দিয়েও কাজের তালিকা না পাওয়ায় রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। গত সেপ্টেম্বর মাসে কাজের তালিকা জমা না দেওয়া বিধায়কদের নামের তালিকা করে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে। গত জুলাই মাসে বিধায়কদের কাছে প্রথম কিস্তির কাজের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। তালিকা চেয়ে প্রতি মাসে দফায় দফায় চিঠি পাঠিয়ে আর্জি জানানো হয়। তা সত্বেও মালবাজারের সিপিএম বিধায়ক বুলু চিকবরাইক, ধুপগুড়ির সিপিএম বিধায়ক মমতা রায়, ময়নাগুড়ির আরএসপি বিধায়ক অন্তদেব অধিকারী, মাদারিহাটের আরএসপি বিধায়ক কুমারী কুজুর, কালচিনির মোর্চা বিধায়ক উইলসন চম্পামারি কাজের তালিকাই জমা দিতে পারেননি বলে প্রশাসনের দাবি। জেলার অন্য এলাকায় উন্নয়নের কাজ শুরু হলেও এই এলাকাগুলিতে কাজ শুরুর প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। চলতি বছরে বিধানসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে জেলায় নব নির্বাচিত ১২ বিধায়ককে ডেকে এলাকা উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের টাকা খরচ করার জন্য কীভাবে কাজের তালিকা পাঠাতে হবে, তার ‘ক্লাস’ নেওয়া হয়। ১৩ জুলাইয়ের সেই বৈঠকেই প্রথম বছরের ৬০ লক্ষ টাকা কাজের তালিকা এক মাসের মধ্যে প্রশাসনে জমা দিতে বলা হয়। প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পরে চারটি চিঠি পাঠিয়ে বিধায়কদের কাছে কাজের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে বিধায়কদের কাছে জানতে চাওয়ায় সকলেই জানান, বিভিন্ন কাজে ‘ব্যস্ত’ থাকায় তালিকা তৈরি সম্ভব হয়নি। মালবাজারের সিপিএম বিধায়ক বলেন, “দু একটা করেছি। বাকিগুলি তৈরি করে জমা দিয়ে দেব।” ময়নাগুড়ির অনন্তদেব অধিকারী বলেন, “আসলে পানীয় জল ও ক্ষুদ্র সেচের ছোট ছোট প্রকল্প তৈরি করছি। উপভোক্তাদের নামের তালিকা তৈরি করতে সময় লেগে যাচ্ছে।” ধুপগুড়ির বিধায়ক মমতা রায় বলেন, “১৫ লক্ষ টাকার একটা প্রকল্প পুরসভাকে দিয়েছি। বাকি প্রকল্পগুলি তাড়াতাড়ি তৈরি করে জমা দিয়ে দেব।” যদিও জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ধুপগুড়ি পুরসভাকে নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা প্রকল্প জমা দিতে পারেনি। কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্পামারি বলেন, “প্রকল্প তৈরি করে ফেলেছি। দু’একদিনেই জমা হয়ে যাবে।” অন্যাদের মধ্যে ফুলবাড়ি-ডাবগ্রামের বিধায়ক উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী কাজের তালিকা জমা দেওয়ার নিরিখে শীর্ষে রয়েছেন। |