দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং, পাহাড়ের তিন পুরসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতা দখল করতে চলেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। মঙ্গলবার পুর নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনের ছবিটা এমনই। দার্জিলিঙের ৩২টি, কালিম্পঙের ২৩টি এবং কার্শিয়াঙের ২০টি আসনে মোর্চার প্রার্থীরা ছাড়া কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি। বাকি রয়েছে মিরিক পুরসভা। সেখানে ৯টি আসন। মোর্চার প্রার্থীরা সব কটিতে দাঁড়িয়েছেন। ৮টি আসনে নির্দল প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মোর্র্চার তরফে দাবি করা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তাঁদের আর্জি মেনে দলের যে বিক্ষুব্ধরা টিকিট না-পেয়ে নির্দল হিসেবে দাঁনিয়েছেন, তাঁরাও মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন। তা হলে পাহাড়ের ৪টি পুরসভা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করা যাবে বলে আশাবাদী মোর্চা। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “পাহাড়ের উন্নয়ন ও মানুষের প্রত্যাশা আমাদের দলই পূরণ করতে পারে, এি বিশ্বাস পাহাড়বাসীর আছে। সে জন্যই অন্য কোনও দল প্রার্থী দিতে চায়নি। দার্জিলিং ও কালিম্পঙে শুধু আমরাই মনোনয়ন দাখিল করেছি বলে জেনেছি। মিরিকে নির্দল।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দার্জিলিং পাহাড়ের ৪ পুরসভায় ১১ ডিসেম্বর ভোট হওয়ার কথা। কিন্তু, পাহাড়ের অবাধে ভোট হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই, এই অভিযোগে গত রবিবার ভোটে অংশ নেবে না বলে জিএনএলএফ জানিয়ে দেয়। দলের সভাপতি সুবাস ঘিসিং ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন না বলে ঘোষণা করেন। পরদিন, সোমবার প্রথমে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট ও পরে অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ ঘিসিংয়ের সুরেই জানিয়ে দেয়, তারা আসন্ন পুরভোটে অংশগ্রহণ করবে না। পাহাড়ের অন্যান্য যে দল রয়েছে সেগুলির তরফেও ভোটে দাঁড়ানোর ব্যাপারে কোনও আগ্রহ প্রকাশ করা হয়নি। দলীয় সূত্রের খবর, কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসও পাহাড়ে এখনও সে ভাবে সংগঠন না-থাকায় প্রার্থী দেওয়ার রাস্তায় হাঁটেনি। স্বভাবতই মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শে দিনের ছবিটা কী দাঁড়ায় তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে কৌতুহল ছিল তুঙ্গে। আজ, বুধবার মনোনয়ন পত্র পরীক্ষা করে দেখা হবে। আগামী ১৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। মোর্চা নেতাদের আর্জি মেনে মিরিকের নির্দলরা মনোয়ন পত্র প্রত্যাহার করলে শেষ পর্যন্ত পাহাড়ে বিনা লড়াইয়ে পুরসভাগুলি দখল করবে মোর্চা। দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “এখনই আমরা কিছু বলছি না। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরেই পুরসভাগুলির অবস্থা কী দাঁড়াল তা জানানো হবে।” জিএনএলএফ, সিপিএম এবং গোর্খা লিগের অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “বামফ্রন্টের আমলেই তো পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল না। সিপিএমের মদতে সুবাস ঘিসিং দিনের পর দিন কোনও নির্বাচন ছাড়াই পাহাড়ের ক্ষমতায় ছিলেন। পার্বত্য পরিষদের কোটি কোটি টাকার কোনও অডিট করা হয়নি। পরিস্থিতি তখন কী ছিল? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পাহাড়ে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। এরই অঙ্গ হিসাবে পুরভোট হচ্ছে। আর ভোটটা নির্বাচন কমিশন করে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ না-থাকলে কমিশন ভোটের দিন ঘোষণা করত না।” |