দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই বছরের পর বছর জেলে থাকা বন্দিরা এ বার তাই নেমেছেন অনশন-আন্দোলনে। ‘হয় জামিন দাও, নয় মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করো’ এই দাবিতে আপাতত ‘ভুখা হরতাল’ করছেন আলিপুর, প্রেসিডেন্সির হাজারখানেক বিচারাধীন বন্দি। কারা-সূত্রের খবর, অনশনের জেরে ওঁদের ৬০ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবু মঙ্গলবার রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে আলোচনার পরেও তাঁরা অনশন তোলেননি। এ দিকে তাঁদের সমর্থনে অন্যান্য জেলের বিচারাধীন কয়েদিরাও এগিয়ে আসছেন বলে কারা দফতর জানিয়েছে।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, আন্দোলনকারীদের দাবি নিয়ে
তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন।
কিন্তু এই অবস্থা হল কেন?
কারা-সূত্রের ব্যাখ্যা: বহু অভিযুক্ত পাঁচ বছরেরও বেশি জেলে রয়েছেন। অথচ তাঁদের বিচার শুরুই করা যায়নি। অনেকে নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করে বসে রয়েছেন প্রায় দশ বছর। সেই মামলা হাইকোর্টে ওঠেইনি। ফৌজদারি মামলার বিশিষ্ট আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “যাঁরা হাইকোর্টে আপিল করে জামিন পেয়েছেন, তাঁদের মামলার তবু বিচার হয়। বাইরে থাকায় ওঁরা মামলার তদ্বির করতে পারেন। কিন্তু যাঁরা জামিন না-পেয়ে জেলে রয়েছেন, তাঁদের আপিল-মামলার শুনানি কবে হবে, কেউ জানে না।” মিলনবাবুর আক্ষেপ, “বিচার ব্যবস্থার খোলনলচে না-পাল্টালে এমনই চলবে। মাঝেমধ্যে হইচই হবে। পরে যে-কে সে-ই।”
আবার দীর্ঘ দিন জেল খাটার পরে অনেক অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেয়েছেন, এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি হিমাংশু দে’র বক্তব্য, “আদালত ও সরকার সক্রিয় না-হলে সমস্যা মিটবে না। কেউ জেল খাটার পরে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাঁকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না কেন, এখন সেই প্রশ্ন তোলারও সময় এসেছে।”
বন্দিদের অনশন যে বিচার ব্যবস্থার এই অতি গুরুতর গলদটিকে সামনে নিয়ে এসেছে, তা স্বীকার
করছেন সরকারি আইনজীবীরাও। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত
গুরুতর। প্রয়োজনে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলব।” রাজ্যের পাবলিক প্রসিকিউটর দেবাশিস রায়ের মন্তব্য, “বিচারপতি ও বিচারকের সংখ্যা না-বাড়লে কোনও সুরাহা হবে না।” |