মাসুল না বাড়লে ধার নয়,
সঙ্কটে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা
মাথায় পাহাড় প্রমাণ ঋণের বোঝা রয়েছে বলে ব্যাঙ্কগুলি আর ধার দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এ দিকে বিদ্যুৎ কিনে যে রাজ্যের গ্রাহকদের সরবরাহ করা হবে তার টাকাও নেই ভাঁড়ারে। এই পরিস্থিতিতে গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন নিগমের কাছে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ চেয়েছিল রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। সেই ঋণ অনুমোদনও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ বিদ্যুদয়ন নিগম নতুন শর্ত দেওয়ায় সঙ্কট বাড়ল বণ্টন সংস্থার। নিগম সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মাসুল না বাড়ালে ঋণ মিলবে না।
মাসুল বাড়ানোর বিষয়টি পুরোপুরিই রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের হাতে, বণ্টন সংস্থা নিজেরা সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান না এখনই বিদ্যুতের মাসুল বাড়ুক। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সাধারণ মানুষের উপরে আরও বোঝা বাড়লে তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়বে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে এ বছর এখনও পর্যন্ত কমিশনের কাছে বিদ্যুতের মাসুল বাড়ানোর প্রস্তাব পেশ করতেই পারেনি বণ্টন সংস্থা। যার ফলে গত আর্থিক বছরে বণ্টন কোম্পানির যেখানে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লাভ হয়েছিল, সেখানে চলতি আর্থিক বছরে বিশাল অঙ্কের লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংস্থা সূত্রে খবর, মাসুল না বাড়লে এ বছর লোকসানের পরিমাণ ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। চলতি আর্থিক বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইতিমধ্যেই বণ্টন কোম্পানির ৯০০ কোটি টাকার কাছাকাছি লোকসান হয়ে গিয়েছে। প্রতি মাসে সংস্থার এখন গড়ে ১৮০ থেকে ২০০ কোটি টাকার মতো নগদ লোকসান হচ্ছে।
গত কয়েক মাস ধরেই বাজার থেকে ধার নিয়ে কোম্পানি চলেছে। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ইতিমধ্যেই ১৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়া হয়ে গিয়েছে। ধারের টাকাতেই বিদ্যুৎ কিনে সরবরাহ করা হচ্ছে গ্রাহকদের। কিন্তু ব্যাঙ্কগুলি এখন জানিয়ে দিয়েছে, কিছু টাকা শোধ করতে না পারলে আর নতুন ঋণ দেওয়া যাবে না।
সংস্থার এক কর্তা জানিয়েছেন, মাসুল না বাড়িয়ে অন্যান্য খাতে রাজস্ব আদায়ে বণ্টন সংস্থার যে ঘাটতি হয়, তা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু বিদ্যুৎ চুরি ঠেকিয়ে বা সংস্থার অভ্যন্তরীণ অপচয় কমিয়ে খুব বেশি হলে বছরে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা বাঁচানো যেতে পারে। কিন্তু ক্ষতির বহর যেখানে লাগামছাড়া, সেখানে ওই সামান্য টাকায় কোনও সুরাহা হবে না বলেই মনে করছেন কর্তারা। সে ক্ষেত্রে মাসুল সংশোধনই একমাত্র সংস্থাটিকে বাঁচাতে পারে বলে মনে করেন কর্তারা।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ ট্রাইব্যুনাল শুক্রবার রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতে আশার আলো দেখছেন সংস্থার কর্তারা। ট্রাইব্যুনাল বলেছে, কোনও সংস্থা প্রস্তাব দিতে গড়িমসি করলে অন্য সংস্থাগুলির স্বার্থে কমিশন একতরফা ভাবেই মাসুল বাড়ানোর নির্দেশ দিতে পারে। এক কর্তা বলেন, “কেন্দ্রীয় ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মেনে রাজ্য কমিশন যত তাড়াতাড়ি একতরফা ভাবে মাসুল সংশোধনের নির্দেশ দেয় ততই ভালো। তা হলে কেন্দ্রীয় বিদ্যুদয়ন নিগমের কাছ থেকে কিছুটা ঋণটা অন্তত পেতে পারি।”
আর্থিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শনিবার সংস্থার পরিচালন পর্ষদ বৈঠকে বসেছিল। কিন্তু কর্তারা কোনও উপায় বের করতে পারেনি। গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন নিগমকে অনুরোধ করেও কোনও লাভ হয়নি। তাদের একটাই কথা, ঋণের অর্থে যাতে লোকসানের বোঝা না বাড়ে, সেটা দেখা তাদের কতর্ব্য। কারণ, ধার নেওয়া সংস্থা তা ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা রাখে কি না, সেটা তাদেরই দেখতে হবে। সেই জন্যই রাজ্য বণ্টন সংস্থাকে শর্ত দেওয়া হয়েছে, ঋণ পেতে গেলে বাড়তি দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করে লাভজনক হতে হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.