বাড়তি ক্ষমতা চায় ‘ঠুঁটো’ ভিজিল্যান্স কমিশন
পুরোদস্তুর থানার ক্ষমতা পেতে চাইছে রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশন। রাজ্য সরকারের কাছে কমিশন সম্প্রতি যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ওই ক্ষমতা পেলে তারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারবে, তাদের গ্রেফতার করতে পারবে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে পারবে এবং হিসেব বহির্ভূত সম্পত্তি বাজেয়াপ্তও করতে পারবে।
এখন কোনও সরকারি কর্মী বা অফিসারের বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ জমা পড়লে তারা তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠায় অভিযুক্তের দফতরের পদস্থ কর্তার কাছে। রিপোর্টে কমিশন নিজের মতো করে শাস্তির সুপারিশ করলেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে শুধু সংশ্লিষ্ট দফতরের হাতে। কমিশন-কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের সুপারিশ মানা হয় না। শুধু তাই নয়, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দফতরের নেওয়া ব্যবস্থা মনঃপুত না হলে প্রশাসনের কোনও ঊর্ধ্বতন স্তরে আবেদন জানানোর রাস্তাও নেই কমিশনের।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ‘তদন্ত’ করে কেবল শাস্তি সুপারিশের ক্ষমতাটুকুই ভিজিল্যান্স কমিশনকে দিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “১৯৬৫ সালের ২৪ মার্চ একটি প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করে কমিশনকে ওই ক্ষমতা দেওয়া হয়। এর ফলে তদন্তে দোষী সাব্যস্ত করলেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে না তারা।” ওই কর্তার বক্তব্য, প্রশাসনিক নির্দেশ বলে কারও বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যায় না। এমনকী, পুরোদস্তুর তদন্তও করা যায় না, খোঁজখবর নেওয়া যায় মাত্র। এর জন্য পৃথক আইন প্রয়োজন।
সেই আইন প্রণয়ন করেই ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান অনেক আগেই দুর্নীতি দমনে নেমেছে। সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে নামে-বেনামে বহু সম্পত্তি করার অভিযোগ এনে ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মধু কোড়া ও তাঁর মন্ত্রিসভার তিন সদস্যের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করে সে রাজ্যের ভিজিল্যান্স কমিশনই। পরবর্তী কালে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টটরেটেরও সাহায্য নেয়। এই রাজ্যের কমিশনও যে ক্ষমতা চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে, তাতে সরকারি কর্মী-অফিসারের বাইরে জনপ্রতিনিধিদেরও তদন্তের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “কোনও মন্ত্রী কিংবা সচিব সচরাচর নিজের দফতরের কর্মী-অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান না। কারণ সেই দায় অনেক ক্ষেত্রে পরোক্ষে তাঁদের ঘাড়েই এসে পড়ে।” এর ফলে ভিজিল্যান্স কমিশনের বহু সুপারিশ বছরের পর বছর বিভিন্ন দফতরে পড়ে থাকে। স্বরাষ্ট্র দফতরের হিসেবে, সংখ্যাটা এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ১০০-র কাছাকাছি। মহাকরণ সূত্রের খবর, পূর্ত দফতরের এক জন ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসামঞ্জস্যের অভিযোগ তদন্ত করে ২০০৬-এ রিপোর্ট জমা দিয়েছিল কমিশন। এক প্রাক্তন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে ওষুধ কেনা নিয়ে অর্থ তছরূপের অভিযোগ পেয়ে কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ে ২০০৫-এ। দু’টি ক্ষেত্রেই রিপোর্ট ফাইলবন্দি হয়েই পড়ে রয়েছে বাম আমল থেকে। এর মধ্যে প্রাক্তন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তো অবসরই নিয়ে নিয়েছেন।
বাম সরকার ভিজিল্যান্স কমিশনের কাজের পরিধিই শুধু বেঁধে দিয়েছিল তা নয়, পরিকাঠামোগত ভাবে তাকে দুর্বল করে রাখার নীতি নিয়েছিল বলেও অভিযোগ। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “এই রাজ্যে বরাবরই অবসর নেওয়া সরকারি অফিসারদের কমিশনের মাথায় বসানো হয়েছে। কখনও জুডিশিয়াল সার্ভিসের, কখনও বা আইপিএস।” কিন্তু মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডে ভিজিল্যান্স কমিশনের প্রধান হিসেবে ডিজি পদমর্যাদার কর্মরত আইপিএস-দের নিয়োগ করা হয়।
দুর্নীতি দমনে রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনের পাশাপাশি লোকায়ুক্ত নিয়োগের কথাও বলেছিল কেন্দ্র। সেই নির্দেশ মেনে বাম আমলে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাথায় রেখে লোকায়ুক্ত গড়া হলেও তাঁর সঙ্গে কোনও তদন্তকারী অফিসার দেওয়া হয়নি। ফলে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দিস্তা দিস্তা অভিযোগ জমা পড়লেও অধিকাংশেরই কোনও সুরাহা হয়নি। ২০০৮ সালে সমরেশবাবুর মেয়াদ শেষ হয়। বাম সরকার তার পরে আর কাউকে নিয়োগই করেনি। কর্নাটকে লোকায়ুক্তের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পাকে জেলে যেতে হলেও পশ্চিমবঙ্গে তাই এখনও কার্যত ঠুঁটো হয়েই পড়ে রয়েছে লোকায়ুক্ত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.